টকটকে লাল রঙের প্যান্ট-স্যুট। দেহভঙ্গিমায় আত্মবিশ্বাস আর সাবলীলতার এক অনবদ্য মিশেল। আর ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি। প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে প্রতিপক্ষ ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করে হিলারি ক্লিন্টন বুঝিয়ে দিলেন, কাচের ছাদটা ভাঙার জন্য এ বার পুরোপুরি ঝাঁপাচ্ছেন তিনি।
২০০৮-এর নির্বাচনে তাঁর দলেরই আর এক প্রার্থী বারাক ওবামার কাছে হেরে যাওয়ার পরে মার্কিন মুলুকের আনাচে-কানাচে শোনা গিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট হিসেবে এক জন মহিলাকে পেতে দেশ যেমন এখনও তৈরি হয়নি, তেমন মহিলা প্রার্থীটিও নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করে নিতে পারেননি। এ বারও তিনি অসুস্থ, বেশি চাপ নিতে পারেন না— এই সব নানা ‘খবর’ লাগাতার ভাসিয়ে দিচ্ছিল বিপক্ষ ক্যাম্প। আজ কিন্তু হিলারি দেখিয়ে দিলেন, অন্যকে চাপে ফেলতে তিনিও পারেন।
সোমবার রাতে লং আইল্যান্ডের হ্যাম্পস্টেডের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বারের প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছিল। সাধারণ ভাবে ‘বাগ্মী’ বলে পরিচিত, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আজ ব্যাকফুটে খেলবেন, তা স্পষ্ট হয়ে যায় প্রথমেই। সঞ্চালক লেস্টার হোল্ট প্রশ্ন ছুড়ে দেন ট্রাম্পের দিকে— ‘‘এ মাসের শুরুতেই আপনি বলেছিলেন, ‘শি ডাজন্ট হ্যাভ আ প্রেসিডেন্সিয়াল লুক’। এখন তিনি সামনে দাঁড়িয়ে। কী বলবেন?’’ থমকে যান ট্রাম্প। বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি আসলে ‘লুক’ বলতে ক্ষমতার কথা বলেছিলেন। তত ক্ষণে হাসিতে ফেটে পড়েছেন হিলারি!
তার পরের নব্বই মিনিট শুধুই হিলারির ছক্কা হাঁকানো আর ট্রাম্পের বাউন্সার সামলানোর গল্প। মুখের উপরেই ট্রাম্পকে বর্ণবিদ্বেষী, নারী-বিদ্বেষী বলে বসেন হিলারি। ধরে ধরে তুলে আনলেন ট্রাম্পের বিতর্কিত সব মন্তব্য। সেই সব তোপ সামলাতে দৃশ্যতই বারবার থতমত খেতে হয় ট্রাম্পকে। কয়েক বার থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন হিলারিকে, মেজাজও হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু পোড় খাওয়া রাজনীতিকের মতো প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি কিন্তু আগাগোড়াই ‘সুপারকুল’।
এ দিনের বিতর্কমঞ্চে উঠে এসেছে ইরাকের যুদ্ধ থেকে শুরু করে ৯/১১-র অনুষঙ্গ। দুই হেভিওয়েটই জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের মসনদে বসলে দেশের জন্য কী কী করতে চান তাঁরা। একটা পর্যায়ের পরে বিতর্ক পৌঁছেছিল ব্যক্তিগত আক্রমণে। সব কিছুই হাসিমুখে সামলেছেন হিলারি। বার বার দর্শকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এই লোকটাই কিন্তু মহিলাদের শুয়োর, বোকা, কুকুর বলে মন্তব্য করেছে!’’
বিতর্কের পরে জনসমীক্ষা বলছে, মাত্র ২৭ শতাংশ ভোটারের মন কাড়তে পেরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ৬২ শতাংশ ভোট যাঁর ঝুলিতে, তাঁর নাম— হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy