Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
International News

‘আজীবন প্রেসিডেন্ট’, চিনে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বে চিনফিং

চিনে নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলেন প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। চিনের পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট পদে কোনও ব্যক্তির সর্বোচ্চ মেয়াদ সংক্রান্ত সংস্থানের অবলুপ্তি ঘটাল। আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার পথ খুলে গেল চিনফিং-এর সামনে।

যতটা ক্ষমতা নিজের হাতে সমন্বিত করলেন চিনের প্রেসিডেন্ট, মাও জে দঙের পরে চিনের কোনও নেতা ততটা কর্তৃত্ব নিজের হাতে নেননি। ছবি: রয়টার্স।

যতটা ক্ষমতা নিজের হাতে সমন্বিত করলেন চিনের প্রেসিডেন্ট, মাও জে দঙের পরে চিনের কোনও নেতা ততটা কর্তৃত্ব নিজের হাতে নেননি। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ১৯:৩৯
Share: Save:

যত দিন বাঁচবেন, তত দিনই প্রেসিডেন্ট পদ নিজের হাতে রেখে দেওয়ার পথ খুলে ফেললেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। একটানা ১০ বছরের বেশি থাকা যাবে না প্রেসিডেন্ট পদে— চিনা সংবিধানে এত দিন এমনই লেখা ছিল। কমিউনিস্ট পার্টির সুপারিশে সিলমোহর দিয়ে রবিবার সেই সাংবিধানিক সংস্থানের অবলুপ্তি ঘটাল চিনের পার্লামেন্ট ‘ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস’।

২০১২ সালে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং চিনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন শি চিনফিং‌। ২০১৩ সালে হন চিনের প্রেসিডেন্ট। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বার পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চলতি অধিবেশনেই দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট পদেও নির্বাচিত হচ্ছেন।

দেং শিয়াও পিং-এর আমল থেকে যে যৌথ নেতৃত্বের ধারণায় ভর করে চিন এগিয়েছে, তাতে কোনও নেতাই একটানা দু’ বারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে বসেননি। চিনের সংবিধানেই সেই সংস্থান তৈরি করা হয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদ চিনা সংবিধানের আওতায় পড়়ে না। কিন্তু যৌথ নেতৃত্বের ধারণার প্রতি সম্মান দেখাতে এবং ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর সুনিশ্চিত করতে জিয়াং জেমিন, হু জিনতাওরা ১০ বছরের বেশি রাজত্ব করার চেষ্টাই করেননি। পূর্বসূরিদের তৈরি করা সেই পরম্পরা বহাল রাখলেন না প্রেসিডেন্ট চিনফিং। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পদে থাকার সর্বোচ্চ সময়সীমার অবলুপ্তি ঘটালেন তিনি।

২০১২ সালে পার্টির এবং ২০১৩ সালের রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর থেকেই চিনে নিজের কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছিলেন শি। দলে নিজের বিরোধীদের ক্রমশ কোণঠাসা করে দেন তিনি। অনেকের উপরেই শাস্তির খাঁড়া নেমে আসে। সরকারের বিভিন্ন স্তর থেকেও একে একে ছেঁটে ফেলা হয় শি শিবিরের অপছন্দের কর্তাদের। তাঁদের অনেকেই এখন দিন কাটাচ্ছেন জেলে।

শি চিনফিং জমানায় সমাজের উপরে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও দৃঢ় হয়েছে চিনে। সুশীল সমাজের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে সাংঘাতিক ভাবে। নজরদারি বেড়েছে চিনের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েইবো-র উপরেও।

সংবিধান সংশোধনের ভোটাভুটিতে প্রথম ভোটদান প্রেসিডেন্ট শিয়ের। ছবি: এএফপি।

চিনা সংবিধানে এত দিন যে সংস্থান ছিল, তা মানলে চলতি বছরে প্রেসিডেন্ট পদে দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হওয়ার পরে ২০২৩ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিতে হত শি চিনফিংকে। কিন্তু সে পথে যে চিনফিং হাঁটতে চান না, তা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। গত মাসে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রস্তাব পাশ করিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের সর্বোচ্চ মেয়াদের অবলুপ্তি ঘটানোর সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: নবি বিতর্ক: পাকিস্তানে এ বার নওয়াজ শরিফকে জুতো

কমিউনিস্ট পার্টির সুপারিশ যে ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসে পাশ হবেই, তা সর্বজন বিদিত ছিল। আজ রবিবারই প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছে ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসে। প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-ই সর্বাগ্রে নিজের ব্যালটটি লাল ব্যালট বাক্সে ফেলেন। তুমুল করতালিতে স্বাগত জানান ডেলিগেটরা।

ভোটাভুটির ফলাফলে দেখা গিয়েছে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ২৯৫৮টি ভোট পড়েছে। ২টি ভোট পড়েছে প্রস্তাবের বিপক্ষে। ৩ জন ডেলিগেট ভোটদানে বিরত থেকেছেন।

আরও পড়ুন: পাগড়ি পরায় ব্রিটেনে বার থেকে তাড়ানো হল শিখ ছাত্রকে

এই সংবিধান সংশোধনের ফলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য চিনের প্রেসিডেন্ট পদে থাকার পথ খুলে গেল চিনফিং-এর সামনে। অনেকেই ইতিমধ্যে তাঁকে ‘প্রেসিডেন্ট ফর লাইফ’ নামে ডাকতে শুরু করেছেন।

চিনকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ‘সুপার পাওয়ার’ করে তোলাই লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর। অত্যন্ত দ্রুত সেই লক্ষ্যের দিকে এগনোর জন্য নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব চাইছিলেন শি। ‘রাবার স্ট্যাম্প’ পার্লামেন্ট শিয়ের সেই ইচ্ছায় সিলমোহর দিল।

মাও জে দঙের পরে আর কোনও নেতা চিনে নিজের হাতে এতখানি ক্ষমতা সমন্বিত করেননি। একনায়কের ঢঙে শাসন চালানো মাওয়ের আমলে চিনে যে অস্থিরতা ছিল, তার হাত থেকে দেশকে বার করে আনতে শাসনতন্ত্রে সংস্কার আনেন দেং শিয়াও পিং, যৌথ নেতৃত্বের প্রচলন ঘটান। সেই যৌথ নেতৃত্বে ভর করেই কিন্তু গত কয়েক দশকে দ্রুত অগ্রগতি ঘটেছে চিনের। শি চিনফিং সেই পথ থেকে চিনকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আবার মাও জমানার একনায়কতন্ত্র ফিরিয়ে আনলে আদৌ কি উন্নতির গতি বাড়বে? প্রশ্ন রয়েছে গোটা চিনেই।

বর্তমানে শি চিনফিং-এর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে থাকা কমিউনিস্ট পার্টি বলছে, শিয়ের পথেই উন্নতি রয়েছে। উত্তর-পূর্ব চিনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের ডেলিগেট চু শিউকিনের কথায়, ‘‘চিনের সাধারণ মানুষই ভীষণ ভাবে এটা চাইছিলেন।’’ দেশবাসী এই সংবিধান সংশোধনকে সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন করছেন বলে শিউকিন দাবি করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE