ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল গোটা দেশ। কিন্তু সেই বিপর্যয়ের দুঃস্বপ্ন পিছনে ফেলে পর্যটনের প্রসারেই ঘুরে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর হিমালয়ের কোলের দেশ নেপাল। তাই খুলে দেওয়া হচ্ছে ট্রেকিং রুট। এমনকী কাঠমান্ডুতে পশুপতিনাথ দর্শন বা পোখরায় ক্যাসিনো-বিলাসের পথেও কোনও বাধা নেই বলে জানান কলকাতায় নেপালের কনসাল-জেনারেল চন্দ্রকুমার ঘিমিরে।
চন্দ্রকুমারের দাবি, ‘‘আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী পর্যটনস্থলগুলি খুলে দেওয়া হয়েছে গত মাসেই। আর ভূকম্প-বিধ্বস্ত নেপালের কয়েকটি জায়গা চাক্ষুষ করাও একটা অভিজ্ঞতা!’’ পর্যটকদের কাছে এখন সেটা বাড়তি কৌতূহলের বিষয় হতে পারে বলে নেপাল ট্যুরিজম বোর্ড কর্তাদের দাবি। তাঁরা জানাচ্ছেন, দেশের আটটি ইউনেস্কো-স্বীকৃত হেরিটেজ অঞ্চলের পাঁচটিই অক্ষত। নেপাল সরকারের ঘোষণা, ৩৫টি ট্রেকিং রুটের মধ্যে ৩২টিই নিরাপদ। মানসলু ও ল্যাংট্যাং ছাড়া ট্রেকিং রুটগুলি মোটামুটি অক্ষত। চন্দ্রকুমার জানাচ্ছেন, কাঠমান্ডুতে বেশি ক্ষতি হয়েছে পুরনো বাড়ি বা সৌধের। ৯০ শতাংশ হোটেলই অক্ষত। রাস্তাঘাটও খুলে গিয়েছে। তা হলে ভ্রমণার্থীদের আর ভাবনা কী! নেপালের পর্যটনের সুযোগের সদ্ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন ভ্রমণ সংস্থাগুলির একটি সংগঠনের সভাপতি অনিল পঞ্জাবিও।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, পর্যটন ব্যবসাকে চাঙ্গা করতে এত তাড়াতাড়ি এই ঘোষণা করে অভিযাত্রী ও পর্যটকদের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করল না তো নেপাল সরকার?
অনেকেই বলছেন, নেপালের আয়ের বড় একটা অংশ পর্যটন। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে পর্যটনই তাদের প্রধান হাতিয়ার। তাই ভূকম্প-বিধ্বস্ত দেশটা পর্যটনে জোয়ার এনেই নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর কড়ি জোগাড় করতে চাইছে। সেই ঘুরে দাঁড়ানোর পথে সামিল হয়েছেন হলিউড তারকা এবং বিখ্যাত পর্বতারোহীরাও। প্রথম এভারেস্টজয়ী এডমন্ড হিলারির পুত্র পিটার হিলারি সম্প্রতি নিজে নেপালে গিয়েছিলেন। জ্যাকি চ্যান বা অস্কারজয়ী অভিনেত্রী সুজান স্যারান্ডনেরা বলছেন, নেপালের মানুষের পথে দাঁড়ানোর সব থেকে ভাল উপায় হল, নেপালে বেড়াতে যাওয়া। এভারেস্ট আরোহী বসন্ত সিংহরায়ের মতে, ‘‘ট্রেকিং রুট বন্ধ রাখলে, মানুষ তাঁদের কাজ শুরু করতে পারবেন না।’’
অনেকেই অবশ্য বলছেন, ভূকম্পের পরে পাহাড়ের মাটি-পাথর আলগা হয়ে রয়েছে। তার জেরে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। ভূকম্পের পর থেকেই নেপালে ত্রাণকাজে সামিল হওয়া ‘অক্সফ্যাম’ নামে একটি সংগঠনের মুখপাত্র গুঞ্জন জৈন বলছেন, ভূকম্পে পোখরা, গোর্খা প্রভৃতি এলাকার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বর্ষার ফলে মাঝেমধ্যেই ধস নামছে। ভূকম্পের ক্ষতি আগে সামলে উঠতে না-পারলে পর্যটন শিল্প স্বাভাবিক হওয়া কঠিন।
তবে কাঠমান্ডুর পর্বতারোহণ আয়োজক সংস্থার কর্ণধার লোবেন শেরপার বক্তব্য, এমনিতেই প্রতি বছর বর্ষার পরে অনেক ট্রেকিং রুট নষ্ট হয়ে যায়। সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে ফের অভিযান শুরু হলে তখন অনেক রুটই নতুন করে গড়ে তুলতে হয়। এ বার হয়তো কাজটা আরও একটু ধকলের হবে। এই যা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy