Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ত্রাণের নৌকা আটকে ক্ষোভ মায়ানমারে

পুলিশ সূত্রে দাবি, ক্ষুব্ধ জনতা ভেবেছিল শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য এসেছে। তাতেই খেপে যায় তারা। পরে রেড ক্রস জানায়, যাদের প্রয়োজন, তাদের কাছেই ত্রাণসামগ্রী পৌঁছবে। নিরপেক্ষ ভাবে বিতরণ প্রক্রিয়া চালানো হবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ইয়াঙ্গন শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৩
Share: Save:

রোহিঙ্গাদের জন্য মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের উত্তরে ত্রাণ নিয়ে আসছিল নৌকো। তা আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে রোহিঙ্গা বিরোধী জনতা। সেই জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ।

বুধবার রাতে রেড ক্রসের ত্রাণবাহী নৌকো এ ভাবে আটকে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে মায়ানমারে। ত্রাণ ঘিরে এমন হিংসা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপুঞ্জে বৃহস্পতিবার মায়ানমারের দাবি, রাখাইন প্রদেশের অবস্থা ধীরে ধীরে ভাল হচ্ছে। সরকারের পরামর্শদাতা আউং সান সু চি-র জায়গায় রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় দেশের দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান থিও গিয়েছেন। তিনি সেখানে দাবি করেছেন, ‘‘আপনাদের আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, ওখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ৫ সেপ্টেম্বরের পরে মায়ানমারে আর কোনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। বস্তুত নেপিদও থেকে দেওয়া টিভি বক্তৃতায় একই দাবি
ছিল সু চি-রও।

রাখাইন প্রদেশের চিত্রটা অবশ্য তা বলছে না। ২৪ অগস্ট এই প্রদেশের উত্তরেই সেনা ও পুলিশের উপরে জঙ্গি গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-র হামলায় জ্বলে ওঠে আগুন। অন্তত ১৫০ জন পুলিশ ও সেনাকে জঙ্গিরা হত্যা করে। তার পর থেকে সেনা অভিযানে অন্তত চার লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম মায়ানমার ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁরা আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশ-ভারত দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। যাঁরা দেশ ছাড়তে পারেননি, তাঁদের অবস্থাও দুর্বিষহ। তাই রেড ক্রসের তরফে সাহায্য আসছিল রাখাইন প্রদেশে। প্রায় ৫০ টন সামগ্রী ছিল তাতে। অথচ সেই নৌকায় পেট্রোল বোমা ছোড়ে বিক্ষুব্ধ জনতা। কারও হাতে লাঠি, কারও রড। পরে শ’দুয়েক পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করা হয়।

পুলিশ সূত্রে দাবি, ক্ষুব্ধ জনতা ভেবেছিল শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য এসেছে। তাতেই খেপে যায় তারা। পরে রেড ক্রস জানায়, যাদের প্রয়োজন, তাদের কাছেই ত্রাণসামগ্রী পৌঁছবে। নিরপেক্ষ ভাবে বিতরণ প্রক্রিয়া চালানো হবে।

মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের এ দেশের নাগরিক বলে মানতে নারাজ। বৌদ্ধরা রাখাইন প্রদেশে সংখ্যাগুরু। রোহিঙ্গাদের তাঁরা বাংলাদেশ থেকে আসা বেআইনি অভিবাসী ছাড়া আর কিছু ভাবতে রাজি নন। সেই নিয়ে সংঘর্ষ চলছে বহু দিন ধরে। অগস্টে তা চরমে ওঠে।

আপাতত রেড ক্রসের ওই নৌকো রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিত্তে-তে রয়েছে। কিন্তু যে ভাবে ত্রাণ নিয়েও হিংসা চলছে, তাতে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক দুনিয়া। মায়ানমার সরকারের সমালোচনা করা হলেও তারা অভিযোগে গুরুত্ব দিচ্ছে না। দু’দিন আগে সু চি-র বক্তৃতাতেও সেই ছবি উঠে এসেছে। সেনার অত্যাচারের প্রসঙ্গে কিছুই বলেননি তিনি। থিও অবশ্য পরে রাষ্ট্রপুঞ্জে জানান, রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় মায়ানমার সরকার চিন্তিত।

এই হিংসা বন্ধ করতে নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত পদক্ষেপ করুক— চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন সহকারী বিদেশসচিব প্যাট্রিক মার্ফি এখন মায়ানমারে। তাঁর সঙ্গে সরকারি অফিসার এবং রাখাইন প্রদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির দেখা হওয়ার কথা। যদিও ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ’ নিয়ে তাদের ভয় নেই— আগেই জানিয়েছেন সু চি। মায়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন আউং লায়িং আরসা জঙ্গিদের হামলা চালানো সেনাঘাঁটি ঘুরে বুধবার বলেন, ‘‘এটা একশো বছর আগে ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ওদের অনিয়ন্ত্রিত কাজকর্মের খেসারত আমাদের এখনও দিতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE