বৈকাল হ্রদ। ছবি: এএফপি।
বিপদের মেঘ ঘনিয়েছে বৈকালে..।
বিশ্বের সব চেয়ে বড় আর গভীর হ্রদ বৈকাল। যেমন তার রূপ, তেমনই সম্ভার। রাশিয়ার সাইবেরিয়ার বুকে প্রায় ৩১,৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত বৈকাল হ্রদকে ১৯৯৬-তে হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দেয় ইউনেস্কো। প্রায় সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি প্রকারের উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণী রয়েছে বৈকালে।
তবে বৈকালের বর্তমান অবস্থা কপালে ভাঁজ ফেলেছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের। যে স্বচ্ছ জলের জন্য বৈকালের খ্যাতি, ক্রমশ সেই জলের স্বচ্ছতা হারিয়ে যাচ্ছে। হ্রদের তলা ঢেকেছে পচা শ্যাওলায়। একের পর এক হারিয়ে যাচ্ছে জলজ মাছ, প্রাণী। এমন অদ্ভুতুরে পরিবর্তনের জন্য কিছুটা হলেও হাওয়াবদল ও অতিরিক্ত মাছ শিকারকেই দুষছেন বিজ্ঞানীরা। আর বাকিটা রহস্য!
অক্টোবরের শুরুতেই, হ্রদে মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। ‘অমুল’ নামে এক বিশেষ ধরনের স্যালমন মাছ, যা গত ১৫ বছর ধরে একমাত্র বৈকালেই পাওয়া যেত, সংখ্যা কমেছে তারও।
মৎস্যবিজ্ঞানী অ্যানাটলি মামন্তভ মনে করেন, অতিরিক্ত মাছ ধরার জন্যই বিপর্যস্ত হচ্ছে সামুদ্রিক জীবন। তার উপরে বদলাচ্ছে আবহাওয়া। উষ্ণ হচ্ছে সমুদ্রের জল। ইউনেস্কো জানাচ্ছে, গত ক’মাসে যে হারে মাছের সংখ্যা কমেছে, তা উদ্বেগজনক।
বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা, যে ভাবে হ্রদের স্বচ্ছ জল পচা স্পাইরোগাইরার মোটা চাদরে ঢেকেছে, তা পরিবেশ দূষণের কারণেই। হ্রদের জল আর কোনও ভাবেই মানুষ কর্তৃক দূষণ নিতে পারছে না, তারই ইঙ্গিত এই শ্যাওলা। রাশিয়ার জীববিজ্ঞানী ওলেগ টিমোস্কিনের কথায়, ‘‘আমি নিশ্চিত এলাকার দূষিত জল এসে মিশছে হ্রদে।’’ যার জন্য এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার উপরে দোষ দিচ্ছেন টিমোস্কিন। প্রত্যেক বাড়ি থেকে কাচাকুচির সাবান মেশানো জল এসে মিশছে বৈকালে। ফসফেট মেশানো সাবান গোলা জলেই উত্তরোত্তর বংশবিস্তার করছে শ্যাওলা-পরিবার।
জলের নীচে জমে থাকা শ্যাওলা এখনও পর্যন্ত জলের কতটা ক্ষতি করেছে, তা জানতে সম্প্রতি গোটা বৈকাল পরিদর্শন করেন টিমোস্কিন। তিনি জানান, এখন বৈকালকে দেখে তার ওই স্ফটিক সৌন্দর্য বোঝার উপায় আর নেই। গত বছরও ১৭০ রকম স্পঞ্জের খোঁজ মিলেছিল এখানে। এখন তার একটিরও দেখা মেলে না। ওই অঞ্চলে ফসফেট মেশানো জলের ব্যবহার ব্যবহার বন্ধ না হলে, বৈকালকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে, বলেই মনে করছেন টিমোস্কিন।
অগস্টে বৈকাল ঘুরে এসে দূষণের অভিযোগ করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনও। বলেছিলেন, বৈকালকে বাঁচানো সরকারের দায়িত্ব। ১৯৯৯ সালে বৈকালকে বাঁচাতে আইনও প্রনয়ণ করা হয়। চালু হয় স্বচ্ছতা অভিযান প্রকল্পও। তবে স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, তার অধিকাংশ টাকাই জলে গিয়েছে, বৈকালে নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy