Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
International News

আইএস-এর চেয়েও বড় বিপদ চিন, রাশিয়া: পেন্টাগন

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পেন্টাগনের এই নবতম মূল্যায়নের ছাপ পড়তে চলেছে আমেরিকার আগামী দিনের বিদেশ নীতিতে। তাঁদের প্রশ্ন এটাও, পেন্টাগনের এই মূল্যায়ন মার্কিন ভোটাররা মেনে নেবেন কি না।

চিন ও রাশিয়ার জাতীয় পতাকা। ছবি; সংগৃহীত।

চিন ও রাশিয়ার জাতীয় পতাকা। ছবি; সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ১৬:১২
Share: Save:

না, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নয়। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস) নয়। চিন আর রাশিয়াই আপাতত আমেরিকার সবচেয়ে বড় বিপদ।

মার্কিন প্রতিরক্ষার সদর দফতর পেন্টাগনের সাম্প্রতিক ‘স্ট্র্যাটেজি ডকুমেন্ট’-এ এ কথাই বলা হয়েছে।

পেন্টাগনের হালের সেই রিপোর্টের বক্তব্য, গত দু’দশক ধরে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই’ চালাতে গিয়ে যত না খেসারত গুনতে হয়েছে, তার তুলনায় লাভ হয়েছে সামান্যই। ফলে, আগামী দিনে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। যা নিয়ে ‘দীঘ দিনের অনীহা’ ছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পেন্টাগনের এই নবতম মূল্যায়নের ছাপ পড়তে চলেছে আমেরিকার আগামী দিনের বিদেশ নীতিতে। তাঁদের প্রশ্ন এটাও, পেন্টাগনের এই মূল্যায়ন মার্কিন ভোটাররা মেনে নেবেন কি না।

সঙ্গত প্রশ্ন। কারণ, গত বছর একের পর এক মতামত সমীক্ষায় মার্কিন নাগরিকরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নিয়েই বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষায় উত্তরোত্তর শক্তিশালী হয়ে ওঠা চিন আর কার্যত ‘সুপার পাওয়ার’ রাশিয়া তাঁদের ততটা ভাবাচ্ছে না, জানিয়েছেন মার্কিন ভোটাররা।

আরও পড়ুন- ট্রাম্পের কল্যাণে মার্কিন রাজনীতি এখন সবচেয়ে বড় রিয়্যালিটি শো​

আরও পড়ুন- ট্রাম্পের বর্ষপূর্তিতে ‘স্তব্ধ’ দেশ​

পেন্টাগনের ওই ‘স্ট্র্যাটেজি ডকুমেন্ট’ প্রকাশিত হয়েছে গত সোমবার। আর তার পর থেকেই মার্কিন নাগরিকদের মতামতের সঙ্গে পেন্টাগনের ভাবনা-চিন্তার ফারাক নিয়ে আলোচনা-বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে আমেরিকা জুড়ে।

গত শুক্রবার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পল এইচ নিৎশে স্কুল অফ অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি সংক্রান্ত পেন্টাগনের ওই ‘স্ট্র্যাটেজি ডকুমেন্ট’ প্রকাশ করেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জিম ম্যাটিস।

ম্যাটিস বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি থাকবে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ নয়, আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার মূল ফোকাসটা এখন মহাশক্তিধর দেশগুলির (পড়ুন, চিন ও রাশিয়া) প্রতিযোগিতা।’’

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের মুখে সরাসরি চিন, রাশিয়ার কথা শোনা না গেলেও, পেন্টাগনের হালের ‘স্ট্র্যাটেজি ডকুমেন্ট’-এ কোনও রাখঢাক করা হয়নি। লেখা হয়েছে, ‘‘প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিযোগিতায় নামার সময় এসে গিয়েছে। আর সেটাকেই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’’

ওই মার্কিন জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিতে উত্তর কোরিয়া ও ইরানের এখনকার জমানাকে ‘দুষ্টদের রাজত্ব’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই ‘রাজত্ব’-এর অবসান ঘটাতে আশু ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

ঘটনা হল, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর সৌদি আরবে গিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে মুসলিম দেশগুলিকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বছরের মধ্যেই কেন মার্কিন প্রশাসন ও পেন্টাগনের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে চিন্তাভাবনায় ‘গুরুত্বপূর্ণ রদবদল’-এর জোরালো ইঙ্গিত মিলল, তার উত্তরটা সম্ভবত লুকিয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত হালের একটি রিপোর্টে। জেন্স’ টেররিজম অ্যান্ড ইনসারজেন্সি সেন্টারের সেই রিপোর্ট জানিয়েছে, গত বছর গোটা বিশ্বেই সন্ত্রাসবাদীদের হামলার ঘটনা কমেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে সন্ত্রাসবাদী হামলায় সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ৫ বছরের খতিয়ান নিলে দেখা যাচ্ছে, যা গড়ে কমেছে ৪৫ শতাংশ। অন্যতম প্রধান সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইএস-ও উত্তরোত্তর দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়েছে।

কিন্তু সন্ত্রাসবাদীদের নিয়ে মার্কিন নাগরিকদের উদ্বেগ যে বিন্দুমাত্র কমেনি গত বছরে একের পর এক মতামত সমীক্ষায় সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে।

গত জুনে এমনই একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল ‘শিকাগো কাউন্সিল ফর গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স’। তাতে ৭৫ শতাংশ মার্কিন ভোটার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তাঁদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মাত্র ৩৮ শতাংশ ভোটার জানান, তাঁরা উদ্বিগ্ন চিনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে। আর ৩০ শতাংশ ভোটর জানান, তাঁদের উদ্বেগের কারণ রাশিয়ার বিভিন্ন দেশে ‘আগ্রাসনের উচ্চাশা’য়।

আরও একটি সমীক্ষার উল্লেখ করা যায়। সেটা করেছিল ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’। করা হয়েছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে। সেই সমীক্ষা জানায়, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন ৭৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিক। তাঁরা আইএস-কেই তাঁদের সবচেয়ে বড় বিপদ বলে মনে করেন। রাশিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মাত্র ৪৭ শতাংশ আর চিন নিয়ে উদ্বিগ্ন, জানান ৪১ শতাংশ মার্কিন নাগরিক।

‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর ওই সমীক্ষায় বেরিয়ে আসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জানা যায়, শুধু মার্কিন ভোটাররাই নন, বিশ্বের আরও ৩৮টি দেশের নাগরিকরা চিন ও রাশিয়ার সামরিক শক্তির বাড়বাড়ন্তের চেয়ে আইএস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকেই বেশি বিপজ্জনক মনে করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE