নওয়াজ শরিফকে জুতো ছুড়ে মারার সেই দৃশ্য।
পাক বিদেশমন্ত্রীর পর এ বার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। শনিবার পাক বিদেশমন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফের মুখে কালি ছেটানো হয়েছিল। রবিবার লাহৌরে দলের সভা চলাকালীন নওয়াজ শরিফকে জুতো ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠল এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। দুই ক্ষেত্রেই হামলাকারীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানে মুসলিম বলে স্বীকৃতি পেতে নবি মহম্মদকে উল্লেখ করে যে ধারা আছে, তা বদলানোর চেষ্টার বিরুদ্ধেই এই ‘প্রতিবাদ’।
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, জুতোটি নওয়াজ শরিফের কাঁধে লাগে। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যখন ভাষণ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সেই সময় এক ছাত্র শরিফের খুব সামনে চলে আসেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে হঠাত্ই জুতো ছুড়ে মারেন। ওই ছাত্রের সঙ্গে আরও এক জন ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীরা ওই ছাত্র ও তাঁর সঙ্গীকে ধরে ফেলেন।
এই ঘটনার পর অবশ্য শরিফ তাঁর কর্মসূচি বন্ধ করেননি। সংক্ষিপ্ত ভাষণের পর সভাস্থল ছেড়ে চলে যান।
আরও পড়ুন: নবি বিতর্ক: পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর মুখে কালি
আরও পড়ুন: হিজাব খোলায় দু’বছরের জেল ইরানি প্রতিবাদীর
১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সংবিধান সংশোধন হয়। এর ফলে পাকিস্তানে তাঁরাই মুসলিম হিসেবে স্বীকৃত, যাঁরা হজরত মুহম্মদকেই শেষ নবি বলে স্বীকার করেন এবং নবি মহম্মদের কথাই শেষ কথা বলে মানেন। এই আইনের ফলে মুসলিম সমাজের আহমাদি ধারাটিকে আর মুসলিম বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না সে দেশে। উনবিংশ শতকের শেষ দিকে এই সমাজ বা ধর্মীয় আন্দোলনের ধারাটির জন্ম। এঁরা মনে করেন মহম্মদের পরেও নতুন নবির জন্ম হতে পারে, যদিও তাঁরা কেউই মহম্মদকে ছাপিয়ে যাবেন না।
সভায় ঢোকার সময় নওয়াজ শরিফ।
পাক নির্বাচনী বিধি অনুযায়ীও, যে কোনও মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় মহম্মদকে শেষ নবি মেনে সই করতেই হয়। অমুসলিম প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম অবশ্য প্রযোজ্য নয়। সম্প্রতি পাক নির্বাচন বিধি সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্যেই অভিযোগ ওঠে, নওয়াজ শরিফ ও তাঁর ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ‘শেষ নবি’ সংক্রান্ত বিধিটি বদলাতে চাইছে। এই অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তানের বেশ কিছু ধর্মীয় দল। যার মধ্যে রয়েছে তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান।
পিএমএল-এন অবশ্য এই পরিবর্তনের অভিযোগ সম্পূর্ণ নস্যাত্ করছে।
নওয়াজকে জুতো ছোড়ার আগের দিন অর্থাত্ শনিবার পঞ্জাব প্রদেশের সিয়ালকোটে দলীয় কর্মীদের সভায় ভাষণ দেওয়ার সময় পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফের মুখে কালি ছিটিয়ে দেন এক ব্যক্তি।
সভা মঞ্চের খুব কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন লম্বা দাড়িওয়ালা মধ্যবয়স্ক ওই ব্যক্তি। আসিফ মঞ্চে ভাষণ দেওয়া শুরু করতেই তাঁকে লক্ষ্য কালি ছুড়ে মারেন তিনি। দলীয় কর্মীরা ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে ধরে ফেলেন। মারধর করার পর অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁরা।
বিরোধীরাই ওই ব্যক্তিকে টাকা দিয়ে এমন কাণ্ড করিয়েছে বলে অভিযোগ করেন আসিফ। বলেন, “ওই লোকটাকে আমি চিনি না। মনে হচ্ছে, বিরোধীরা কিছু টাকাপয়সা দিয়ে লোকটাকে কালি ছেটাতে বলেছে। তবে লোকটাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। পুলিশকে বলব ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিতে।”
অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম ফৈজ রসুল। সে কোনও রাজনৈতিক দলের নয়।
পুলিশের দাবি, জেরায় রসুল তাদের জানিয়েছে, দেশের সংবিধানে নবি মহম্মদের শেষ কথা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল আসিফের দল। আর সেই প্রচেষ্টা শুধু তাঁর নয়, লক্ষ লক্ষ পাকিস্তানির ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে। এই প্রতিবাদেই বিদেশমন্ত্রীর মুখে তিনি কালি ছিটিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy