সহপাঠীদের কান্না। ছবি: এএফপি।
জোসেফ-ক্যোনিগ জিমন্যাসিয়াম স্কুলের গেটের বাইরে পোস্টারটা রাখা। তাতে হাতে লেখা, “গত কাল অনেকে ছিলাম। আজ আমরা একা।” পোস্টারের নীচে ফুলের তোড়া। আর মোমবাতি।
স্কুলে ঢোকার মুখেই এ সব দেখে থমকে যাচ্ছে খুদেরা। কাল বার্সেলোনা থেকে ডুসেলডর্ফ যাওয়ার পথে ১৫০ জন যাত্রী নিয়ে আল্পসের দুর্গম এলাকায় ভেঙে পড়ে জার্মানউইঙ্গসের এয়ারবাস এ-৩২০। আর তাতেই ছিল জার্মানির জোসেফ-ক্যোনিগ জিমন্যাসিয়াম স্কুলের দশম শ্রেণির ১৬ জন পড়ুয়া। সঙ্গে ছিলেন ওই স্কুলেরই দুই শিক্ষক। স্পেনের ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানতে বার্সেলোনার বাইরে একটি ছোট শহরে গিয়েছিল ওই ১৬ জন। এক সপ্তাহের সেই সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান শেষে ছিল বাড়ি ফেরার পালা।
খবরটা প্রথমে বিশ্বাসই করেননি স্কুলের হেডমাস্টার উলরিখ ওয়েসেল। ভেবেছিলেন হয়তো বিমানটি ধরতে পারেনি ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু নিরাশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী। স্কুলের সকলের নামই যে যাত্রী-তালিকায় রয়েছে তা জানান তিনি। আজ একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ওয়েসেল বলেন, “এই মাত্র সাংবাদিকরা আমায় জিজ্ঞেস করলেন আমার স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা কত। আমি একটুও না ভেবে বলে ফেললাম ১২৮৩। কিন্তু তার পরেই বুঝলাম ১৬ জন কমিয়ে বলতে হতো।” শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এই একটা সপ্তাহই হতে পারত ওদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
জার্মানউইঙ্গসের সিইও টমাস উইঙ্কিলমান জানিয়েছেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে মোট ১৩টি দেশের নাগরিক ছিলেন। এই উড়ানেই যাওয়ার কথা ছিল সুইডেনের ফুটবল দলের। শেষ মুহূর্তে তাদের সফর বাতিল হয়।
এক সপ্তাহ বাদে ছেলে মেয়েরা ফিরছে। কাল ডুসেলডফর্র্ বিমানবন্দরে তাই সাগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন সেই ১৬ জনের বাবা-মা। খবরটা আসতেই আর্ত চিত্কারে ঢেকে যায় গোটা বিমানবন্দর চত্বর। এক কর্মী বললেন, “বারবার নিজেদের সন্তানের ফোনে চেষ্টা করছিলেন ওই বাবা-মায়েরা। আর যোগাযোগ করতে না পেরে কেউ কেউ ছুঁড়ে ফেলছিলেন ফোন।”
স্পেনের ওই ছোট্ট শহর লেনার দেল ভেলের মেয়র মার্তি পুজোল জানিয়েছেন, আর একটু হলেই হয়তো বিমানটি পেত না পড়ুয়ারা। ট্রেন ধরতে এসে এক ছাত্রীর খেয়াল হয় পাসপোর্ট ফেলে এসেছে সে। তবে শেষ পর্যন্ত বিমান তাদের ছেড়ে যায়নি। জীবনের শ্রেষ্ঠ সপ্তাহ শেষে তাদের সঙ্গে নিয়ে উড়ে গিয়েছে আল্পসের কোনও অজানা পথে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy