Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বার্তা উত্তর কোরিয়াকে, যুদ্ধের দায় নেবে না চিন

মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশ গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তেও গা-ছাড়া মনোভাবই দেখছে চিনের। সরাসরি মুখ তো খোলেই নি, বরং বিবদমান দু’পক্ষকেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, চিনের স্বার্থে আঘাত লাগলে তবেই শক্ত হাতে তার মোকাবিলা করবে চিনা সেনা।

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০২:৩০
Share: Save:

আমেরিকা আগে হামলা চালালে, নিশ্চিত ভাবে পাশে দাঁড়াবে চিন। কিন্তু উত্তর কোরিয়াই যদি পায়ে পা লাগিয়ে লড়াইয়ে নামতে চায়, বেজিংয়ের সে ক্ষেত্রে নিরপেক্ষই থাকা উচিত বলে জানাল চিনের রাষ্ট্রায়ত্ত দৈনিক গ্লোবাল টাইমস।

দুই দেশের মধ্যে উত্তাপ আরও বাড়িয়ে চলতি সপ্তাহেই মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ গুয়ামে মাঝারি ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছে পিয়ংইয়ং। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিওরিটি দফতর দাবি করেছে, গুয়ামে উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে চাইলে সেখানে পৌঁছতে সেটির সময় লাগবে সাকুল্যে ১৪ মিনিট। গুয়ামে হামলার হুমকিতে স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই ফুঁসে উঠেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ তিনি টুইট করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘উত্তর কোরিয়াকে জবাব দেওয়ার জন্য পুরোপুরি তৈরি মার্কিন সেনা। আশা করা যায়, কিম জং উন এ বার অন্য পথ খুঁজবেন।’’ গত কাল ক্যালিফোর্নিয়ায় মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জিম ম্যাটিসও বলেন, ‘‘লড়াইয়ের জন্য সব দিক দিয়ে প্রস্তুত পেন্টাগন। তবে কোন পথে হাঁটব, তা আগ বাড়িয়ে শত্রুপক্ষকে জানাতে চাই না।’’ এ-ও বলেন, ‘‘যুদ্ধ সব দিক দিয়েই সর্বনাশা’’। তাই আমেরিকা সব সময়েই কূটনৈতিক পথে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংঘাতের সমাধান চায় বলে দাবি করেছেন ম্যাটিস।

চিনও যে যুদ্ধ চায় না, গত কাল গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কখনওই তেমন কড়া প্রতিক্রিয়া মেলেনি বেজিংয়ের তরফে। পিয়ংইয়ং প্রথম যখন আম্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা করে, তখন তা নিয়ে মুখ খুলতে শোনা যায়নি চিনকে। পরে মস্কো সফরে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সময়েও চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং বলেন, উত্তর কোরিয়া বা আমেরিকা— প্রত্যেক পক্ষের সংযত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পরে নড়েচড়ে বসে চিন। কার্যত বাধ্য হয়েই এই নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন জানায় বেজিং। চিন ইচ্ছে করেই কিমের দেশের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না বলে তোপ দাগেন ট্রাম্পও।

আরও পড়ুন: ডিমে কোপ ইউরোপে

মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশ গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তেও গা-ছাড়া মনোভাবই দেখছে চিনের। সরাসরি মুখ তো খোলেই নি, বরং বিবদমান দু’পক্ষকেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, চিনের স্বার্থে আঘাত লাগলে তবেই শক্ত হাতে তার মোকাবিলা করবে চিনা সেনা। সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র যদি প্রথমে আমেরিকার উপর আঘাত হানে এবং আমেরিকা তার বদলা নেয়, তা হলে চিনের নিরপেক্ষই থাকা উচিত। কিন্তু যদি দক্ষিণ কোরিয়া ও আমেরিকা যৌথ আক্রমণ চালিয়ে উত্তর কোরিয়া তথা কোরীয় উপদ্বীপের রাজনৈতিক মানচিত্রে বদল আনার চেষ্টা করে তবে চিন তাতে বাধা দেবে।’’ চিনের মতে, দু’পক্ষই এক ‘বেপরোয়া খেলায়’ জড়িয়ে পড়েছে যার পরিণতিতে রয়েছে ভয়ঙ্কর যুদ্ধের আশঙ্কা।

প্রশ্ন উঠছে, চিনের এই অবস্থানে দুই মিত্র দেশের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কূটনৈতিকরা জানাচ্ছেন, ‘‘১৯৬১ সালে চিন-উত্তর কোরিয়ার মধ্যে হওয়া পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তি অনুযায়ী, পিয়ংইয়ংয়ের উপর প্ররোচনা ছাড়া হামলা হলে তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে চিন। কিন্তু উত্তর কোরিয়া যুদ্ধের পথে হাঁটলে বেজিং তাতে ঢুকতে বাধ্য নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE