Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঈদের শুভেচ্ছার পরেই বিস্ফোরণ, নিহত আফগান প্রেসিডেন্টের ভাই

দেশের রাজনীতিতে ছিলেন ভাই হামিদ কারজাইয়ের বিরোধী। জীবনযাত্রায় আফগান ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশেছিল আধুনিকতা। কন্দহরে নিজের প্রাসাদোপম বাড়িতে ছিল কড়া নিরাপত্তা। কিন্তু সেই বাড়িতেই আজ আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারালেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সম্পর্কিত ভাই হাসমত। ২০১৪ সালে ন্যাটো সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে ফের দেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল এই ঘটনা।

পোষ্যের সঙ্গে হাসমত। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে

পোষ্যের সঙ্গে হাসমত। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে

সংবাদ সংস্থা
কন্দহর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০১:৪২
Share: Save:

দেশের রাজনীতিতে ছিলেন ভাই হামিদ কারজাইয়ের বিরোধী। জীবনযাত্রায় আফগান ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশেছিল আধুনিকতা। কন্দহরে নিজের প্রাসাদোপম বাড়িতে ছিল কড়া নিরাপত্তা। কিন্তু সেই বাড়িতেই আজ আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারালেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সম্পর্কিত ভাই হাসমত। ২০১৪ সালে ন্যাটো সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে ফের দেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল এই ঘটনা।

দক্ষিণ আফগানিস্তানের সব চেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন হাসমত। কয়েকটি নিরাপত্তা ও নির্মাণ সংস্থার মালিক ছিলেন তিনি। কারজাই পরিবারের দুই শাখার মধ্যে লড়াইয়ে কন্দহরে হামিদকে যথেষ্ট বেগ দিয়েছিলেন হাসমত। কর্জ এলাকায় কারজাই পরিবারের প্রাসাদোপম বাড়িতে থাকতেন আমিরি কায়দায়। পোষা সিংহের সঙ্গে হাসমতের ছবি জনপ্রিয় হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। হামিদ কারজাইয়ের মতোই আমেরিকায় দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন হাসমত। মার্কিন নাগরিকও হয়েছিলেন তিনি।

কন্দহরের বাড়িতে আজ সকালে ঈদের প্রার্থনায় যোগ দেন হাসমত। প্রার্থনার পরে তাঁকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে যায় এক ব্যক্তি। তার পরেই বিস্ফোরণ ঘটায় সে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন হাসমত ও তাঁর এক দেহরক্ষী। আত্মঘাতী জঙ্গির পাগড়ির মধ্যে বিস্ফোরক রাখা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই জঙ্গি বছর কুড়ির যুবক। দামি পোশাক পরিচ্ছদ পরে এসেছিল সে। অতিথি হিসেবেই তাকে হাসমতের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়। হাসমত তাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতেন কি না জানা যায়নি।

আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আশরফ গনি আহমেদজাইয়ের হয়ে প্রচার করেছিলেন হাসমত। ওই নির্বাচনের প্রথম দফায় কোনও প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। ফলে, চূড়ান্ত ফয়সালা হয়নি। তাই দ্বিতীয় দফার ভোট করে আফগান নির্বাচন কমিশন। তাতে ব্যাপক অনিয়ম ও জুয়াচুরির অভিযোগ করেছেন আহমেদজাই ও অন্য এক দলের প্রার্থী আবদুল্লা আবদুল্লা। ফলে, ভোট প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে আফগানিস্তানে এসেছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল। দ্রুত তাদের রিপোর্ট প্রকাশের জন্য ওই তদন্তকারী দলকে চাপ দিচ্ছেন হামিদ কারজাই। ন্যাটো তথা মার্কিন বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার আগে কাবুলের তখ্ত নিয়ে ফয়সালা চায় আমেরিকাও।

এখনও হাসমতকে হত্যার দায় স্বীকার করেনি কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী। তবে এই ধরনের হামলা চালাতে দক্ষ তালিবান। কন্দহর তালিবানের শক্ত ঘাঁটি। পশ্চিমী কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, হাসমতের অন্য শত্রুও ছিল। আহমেদজাইয়ের শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন হাসমত। তাই তাঁকে সরিয়ে আহমেদজাই শিবিরকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হতে পারে। কারজাই পরিবারে খুনোখুনির ইতিহাসও বহু পুরনো। আশির দশকে পাকিস্তানে খুন হয়েছিলেন হাসমতের বাবা খলিল লুলা কারজাই। তাঁকে কারজাই পরিবারেরই সদস্য ইয়ার মহম্মদ খুন করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।

আফগানিস্তানে পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লিও। গোলমালের জেরে সে দেশে তালিবানি বা পাকিস্তানি প্রভাব বাড়লে অস্বস্তিতে পড়বে ভারত। ইতিমধ্যেই হেরাটে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছে পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা। কারজাইকে অস্ত্র বিক্রি করতে রাজি না হলেও আফগান নিরাপত্তাবাহিনীর প্রশিক্ষণ-সহ নানা বিষয়ে সাহায্য করছে ভারত। এই ঘটনা সাউথ ব্লকের কর্তাদের চিন্তা বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suicide bomber hamid karzai hasmat afghanistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE