Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আলেপ্পোয় এখন এগোলেও বিপদ, পিছোলেও

পাঁচ বছর ধরে যুদ্ধের সঙ্গে ঘর করেছেন। সেই যুদ্ধ যখন ইঞ্চি ইঞ্চি করে চূড়ান্ত পর্বের দিকে এগোচ্ছে, তখন আর এক সঙ্কটের সামনাসামনি সিরিয়ার মানুষ। বিশেষ করে আলেপ্পোর পুব দিকের বাসিন্দারা।

সংঘর্ষে ধ্বংসস্তূপের চেহারা আলেপ্পোর। ছবি: এএফপি।

সংঘর্ষে ধ্বংসস্তূপের চেহারা আলেপ্পোর। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
আলেপ্পো শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৬
Share: Save:

পাঁচ বছর ধরে যুদ্ধের সঙ্গে ঘর করেছেন। সেই যুদ্ধ যখন ইঞ্চি ইঞ্চি করে চূড়ান্ত পর্বের দিকে এগোচ্ছে, তখন আর এক সঙ্কটের সামনাসামনি সিরিয়ার মানুষ। বিশেষ করে আলেপ্পোর পুব দিকের বাসিন্দারা।

গত পাঁচ বছর ধরে আলেপ্পো-ই সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দখলে থাকা সবচেয়ে বড় এলাকা। এই মুহূর্তে উত্তর ও পশ্চিম আলেপ্পো ছিনিয়ে নিয়েছে রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সৈন্য, যাদের সাহায্য করছে পুতিনের রাশিয়া। বাকি রয়েছে পূর্ব দিকটা। সিরিয়ার বিদ্রোহীরা পিছোতে পিছোতে এখন ওই অঞ্চলেই তাদের শেষ শক্তি নিয়ে মাটি কামড়ে রয়েছে। মস্কো প্রস্তাব দিয়েছিল, তারা এলাকা খালি করে দিয়ে বেরিয়ে আসুক, আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসুক। বিদ্রোহীদের তরফে কিন্তু রবিবারই জানিয়ে দেওয়া হল, তাঁরা আলেপ্পোর জমি ছাড়বেন না।

অতএব এ বার আমজনতাকে ঠিক করে নিতে হচ্ছে, তাঁরা কোন দিকে যাবেন। সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নেবেন, নাকি দাঁতে দাঁত চেপে বিদ্রোহীদের শিবিরে ঢুকবেন। বেছে নেওয়াটা সহজ নয়। কারণ এতগুলো বছর ধরে আলেপ্পোয় বিদ্রোহীরা যে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে, সেটা আমজনতাকে বাদ দিয়ে নয়। মানুষ হয় ভয়ে নয় ভক্তিতে, নয়তো বা সচেতন সমর্থনেই বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তা করেছেন, নিদেন পক্ষে একটা বোঝাপড়ায় এসেছেন। অর্থাৎ বিদ্রোহীদের সম্ভাব্য মদতদাতার একটা তকমা তাঁদের গায়ে লেগে গিয়েছে। এখন বিদ্রোহীরা যদি তাঁদের না বাঁচায়, সেনাবাহিনী তাঁদের কত দূর শান্তিতে থাকতে দেবে, সেটা ভাবাচ্ছে তাঁদের।

পর্যবেক্ষক দল জানাচ্ছে, গত বুধবারই অসংখ্য মানুষকে বিনা কারণ আটক করেছে সেনাবাহিনী। সেনার হামলায় সব ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন খালিল হেলাবি, মহম্মদ জাকারিয়ার মতো অসংখ্য সিরিয়াবাসী। রাষ্ট্রপুঞ্জ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত বিদ্রোহীদের কবলে থাকা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন অন্তত তিরিশ হাজার মানুষ। আরও প্রায় ২ লক্ষ মানুষ আটকে রয়েছেন ওই সব এলাকায়। গত কয়েক সপ্তাহে মাসাকেন হানানো-সহ আলেপ্পোর বিস্তীর্ণ অংশের দখল নিয়েছে আসাদ সরকার। ওই সব এলাকায় ভিড় জমাচ্ছেন শয়ে শয়ে সিরীয় নাগরিক।

আবার তিন সন্তানের বাবা হাসান আল-আলি বিদ্রোহী আস্তানাই বেছে নিয়েছেন। আশঙ্কা করছিলেন, যে কোনও সময় সরকারি সেনা চড়াও হতে পারে তাঁদের উপর। বললেন, ‘‘আর কিচ্ছু নিইনি সঙ্গে। বাচ্চাদের নিয়ে চলে এলাম।’’ বিদ্রোহী এলাকাতেই থেকে যেতে চাইছেন হাসানারে মতো অনেকেই। সরকারি সেনার লাগাতার হামলার থেকে সেটা বেশি নিরাপদ মনে করছেন তাঁরা। যদিও সেখানকার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। খাবার নেই, জল নেই, হাসপাতাল নেই। খিদের জ্বালায় ক’দিন আগে বিদ্রোহী এলাকা থেকে সরকারি এলাকায় পালিয়ে এসেছেন এক মহিলা। বললেন, সেনাবাহিনী শুধু পরিচয়পত্র দেখে ছেড়ে দিয়েছে। আর কিছু বলেনি। কিন্তু অনেকেই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, পরিচয়পত্র দিয়ে শুরু। ক’টা দিন যাক, তার পরেই চালু হবে ধরপাকড়, অত্যাচার, বিনা বিচারে হত্যা।

এই সব আশঙ্কা-আতঙ্ক নিয়ে বিদ্রোহী আর সেনাবাহিনী পরস্পরকে পরস্পরকে দোষারোপেও ব্যস্ত। দু’পক্ষই দাবি করছে, সাধারণ মানুষকে নানা রকম ভয়ের গল্প শোনানো হচ্ছে। ছড়ানো হচ্ছে গুজব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aleppo Syrian
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE