নিউজিল্যান্ড সফরে রাষ্ট্রপতি।
২২ গজে যতই বৈরিতা থাকুক, ভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সফর নিয়ে কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অধীর আগ্রহে ফিল্ডিং করছেন রিচার্ড হেডলি!
৩০ বছর আগে এখানে শেষ বারের মতো কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন সফরে। রাজীব গাঁধীর সেই সফরের পর ভারতীয় দৌত্যের অগ্রাধিকার থেকে মুছে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। প্রধানমন্ত্রী কেন, রাষ্ট্রপতির সফরেও কূটনৈতিক গন্তব্য হিসাবে কখনওই ভাবা হয়নি। প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজে এক বার এসেছিলেন বটে ১৯৯৫ সালে। সেই সময় তিনি ছিলেন তত্কালীন বিদেশমন্ত্রী। আজ এত বছর পরের এক ভোরবেলায় হাল্কা শীতের চাদরে মোড়া অকল্যান্ড তাঁর কাছেও নতুন। বললেন, ‘‘এটা কিন্তু ভুললে চলবে না, ক্রিকেট আমাদের দুই দেশের মধ্যে একটা যোগসূত্র। ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের মানুষ কাছাকাছি রয়েছে ক্রিকেটের বশে।’’
অকল্যান্ডের শহরটি চৌকিপাক মেরে দেখা যাচ্ছে, ক্রিকেট নয়, রাগবিই এখন এখানকার জনপ্রিয়তম খেলা। নিউজিল্যান্ডের তারকারা আইপিএল-এ কী করছে তা নিয়ে উচ্চকিত নয় অকল্যান্ডের নিশি-পাবগুলো, বরং আগামিকাল থেকে যে রাগবি প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে শহরে তা নিয়ে উত্তেজনার পারদ অনেকটা চড়া।
তাই এটা বললে বোধহয় বাড়াবাড়ি হবে না, এই শহরে অন্তত ক্রিকেটের থেকে বেশি উত্তেজনা ভারতের এক নম্বর নাগরিককে নিয়ে। বিক্রির হিসাবে এখানকার এক নম্বর সংবাদপত্র ‘উইকেন্ড হেরাল্ড’-এর প্রথম পাতায় আট কলম জুড়ে ছবি ভারতীয় রাষ্ট্রপতির, সঙ্গে শিরোনাম ‘ঐতিহাসিক সফর’।
কেন সফরকে ঐতিহাসিক বলে চিহ্নিত করতে চাইছে আপাত নিরাবেগ এই জাতি? এ দেশের পাঁচ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়তে প্রতি বছর অন্তত ২০ হাজার ছাত্রছাত্রী আসছেন। বিভিন্ন ভাষার ছবি, এমনকী, বাংলা ছবির শুটিংয়ের জন্যও নিভন্ত আগ্নেয়গিরির মশলা দিয়ে তৈরি এই অকল্যান্ড এখন অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য।
কেন এই সফরকে ঘিরে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন কি এতটা উচ্চকিত? তা হল, গত পাঁচ বছর ধরে ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য মরিয়া হয়ে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। এ ব্যাপারে দশ দফা বৈঠক হয়ে গেলেও কোনও সুরাহা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী জন কি জানিয়েছেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে কথা বলব। আশা করছি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কিছুটা অগ্রসর হতে পারব।’’ আগামিকাল দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।
আরও পড়ুন- ফের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি? সতর্ক রাষ্ট্রপুঞ্জ
এটা ঘটনা যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলির সঙ্গে বাণিজ্যের প্রশ্নে বিশেষ নজর দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতির পাপুয়া নিউগিনি-নিউজিল্যান্ড সফর সেই কৌশলেরই অঙ্গ। ভারত-নিউজিল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পাঁচ বছরে অনেকটা বেড়েছে ঠিকই কিন্তু নিউজিল্যান্ডের রফতানি ততটা বাড়েনি। ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ড ভারতে ৯০ কোটি টাকার রফতানি করেছিল। ২০১১-’১৫, এই চার বছরের মধ্যে ৯০ কোটি থেকে রফতানি পড়ে গিয়েছে ৬০ কোটিতে, অন্য দিকে ভারতের রফতানিও কিন্তু আহামরি বাড়েনি। আর এই শূন্যস্থানে নিউজিল্যান্ডে রমরম করে বেড়ে চলেছে চিনের সাম্রাজ্য। তাই নিউজিল্যান্ড প্রণববাবুর এই সফরের দিকে খুবই আশা করে তাকিয়ে রয়েছে। ভারতীয় রাষ্ট্রপতির কথায়, ‘‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলিতে আমরা ‘পূবে তাকাও’ নীতি থেকে বেরিয়ে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসিতে যেতে চাইছি। সে ক্ষেত্রে এই গোটা অঞ্চলে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য।’’ এ দিন গভর্নরের বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে পরিকাঠামো ও প্রাকৃতিক সম্পদের চাহিদাও। ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy