দুঃসময় যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে লন্ডন শহরটাকে। দু’সপ্তাহও পেরোয়নি লন্ডন ব্রিজে সন্ত্রাসের আতঙ্কের। এর মধ্যেই রবিবার মাঝরাতে ফের একটি ভ্যান চড়াও হলো মসজিদ ফেরতা ভিড়ের উপরে। যার বলি এখনও পর্যন্ত এক জন। জখম অন্তত ১০ জন। দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পর পর এই ধরনের ঘটনায় বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘‘জঘন্য!’’ ‘মুসলিম কাউন্সিল অব গ্রেট ব্রিটেন’ বলেছে, ‘‘ইসলাম-ভীতি থেকেই এই ঘটনা।’’ পুলিশ একে জঙ্গি হামলা বলেই সন্দেহ করছে।
সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১২টা ২০ নাগাদ উত্তর লন্ডনে ফিন্সবেরি স্কোয়ারের দু’টি মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসছিলেন অনেকে। তখনই হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে একটি সাদা ভ্যান। সেভেন সিস্টার্স রোডে মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউস-এর বাইরে দাঁড়ানো সকলেই চমকে যান। আব্দুল রহমান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বোঝাই যাচ্ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভ্যানটা চ়ড়াও হয়েছে।
ভ্যানের ধাক্কায় যে বয়স্ক ব্যক্তি মারা যান, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানিয়েছেন তাঁর ভাইপো সুলতান আহমেদ। ঘটনাস্থলে সুলতানও ছিলেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, রবিবার সন্ধ্যায় ইফতার শেষে নমাজ পড়তে গিয়েছিলেন চাচা। তার পরেই অঘটন। সুলতানের কথায়, ‘‘চাচা সবে মসজিদ থেকে বেরিয়েছেন। এই সময়ে তাঁর সামনে থাকা আর এক জন বয়স্ক লোক অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। তখন চার পাশ থেকে অনেকে ছুটে আসেন ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য। ওই ভিড়ের মধ্যেই ভ্যানটা ঢুকে পড়ে।’’ সেই সময় ঠিক কী ভাবে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয় তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে অনেকেই জখম হন ভ্যানের ধাক্কায়।
হামলা চালানোর আগে ভ্যানটি ওই এলাকায় রাস্তার এক পাশে দাঁড় করানো ছিল বলে জানিয়েছেন আর এক প্রত্যক্ষদর্শী। সেটি চড়াও হতে ভিড়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল যথেষ্ট। অনেকে বলছেন, হামলকারী হাসতে হাসতে ভিড়ে অনেককে পিষে মারার লক্ষ্যে এগোচ্ছিল। কয়েক জনকে জখম করার পরেই আশপাশের সব লোকজন মিলে পুলিশ আসার আগে পর্যন্ত মাটিতে ফেলে আটকে রাখে তাকে। হুসেন আলি নামে এক যুবকের দাবি, ‘‘আমি সব মুসলিমকে মারতে চাই— বলে চেঁচাচ্ছিল ভ্যানচালক।’’ ৪৮ বছরের শ্বেতাঙ্গ ওই আততায়ীর কাছে বসে ছিলেন মসজিদের ইমাম। তিনিই সবাইকে বলেন, পুলিশ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। আট মিনিটের মধ্যে পুলিশ আর হেলিকপ্টার সবই এসে যায়। মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউসের তৌফিক কাসিমি বলছেন, ইমামের কথা শুনে অনেকে সংযত ছিলেন বলেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছে। না হলে আততায়ীকে পিটিয়ে মেরেই দিত জনতা।
কিন্তু পর পর এমন হামলা চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের। বিরোধী লেবার নেতা জেরেমি করবিনের নির্বাচনী এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি মর্মাহত।’’ লন্ডনের মেয়র সাদিক খান একে ‘‘ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা’’ বলেছেন। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নীল বসু জনতার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অবিশ্বাস্য রকম পাল্টে যাওয়া একটা সময়ের মধ্যে যাচ্ছে লন্ডন।’’
তেমনই সময় খারাপ যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-রও। গ্রেনফেল টাওয়ারের ক্ষত মুছতে ফিন্সবেরির মসজিদে ঘটনার পর পরই পৌঁছে যান তিনি। তাতেও ক্ষোভ এড়াতে পারেননি। এক জন চেঁচিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘আজ এত জলদি চলে এলেন? কেনসিংটনে তো পারেননি?’’ কেউ ব্যঙ্গের সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘‘মিসেস মে, আজ ট্যাক্সি পেলেন বুঝি?’’ এ সবের পাশাপাশি টেরেসাকে গদিচ্যুত করার স্লোগান তো ছিলই।
এ দুঃস্বপ্নের কবে শেষ, উত্তর খুঁজছে লন্ডন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy