Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভূমিকম্পের রোষে তছনছ মেক্সিকো, এখনও পর্যন্ত মৃত ২২৫

প্রাণের সন্ধান: ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে কুকুরটিকে বার করে আনছেন উদ্ধারকারীরা। বুধবার মেক্সিকো সিটিতে। এএফপি

প্রাণের সন্ধান: ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে কুকুরটিকে বার করে আনছেন উদ্ধারকারীরা। বুধবার মেক্সিকো সিটিতে। এএফপি

সংবাদ সংস্থা
মেক্সিকো সিটি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪২
Share: Save:

বত্রিশ বছর আগে ঠিক এই দিনটাতেই ভয়াবহ ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিলেন দশ হাজার মানুষ। তাঁদের স্মরণে রাস্তায় নেমেছিলেন মেক্সিকোর মানুষ। ভূমিকম্প হলে তৎক্ষণাৎ কী কী করা উচিত, তার মহড়া দিয়েছিলেন ছোট-বড় সকলেই। ভাবতেও পারেননি কেউ, মুহূর্তের ব্যবধানে ফের কেঁপে উঠবে মাটি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াবে ২২৫। প্রশাসনের দাবি, শুধুমাত্র রাজধানী শহর মেক্সিকো সিটিতেই মারা গিয়েছেন ৮৩ জন।

মঙ্গলবার দুপুর ১টা। দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত ছিলেন মানুষ। হঠাৎই কাঁপতে শুরু করে মাটি। রাস্তাঘাটে মানুষের আতর্নাদ। নিমেষে ইট-কাঠ-পাথরের ভগ্নস্তূপে পরিণত হল পরিপাটি করে সাজানো শহরগুলো।

সপ্তাহ দুয়েক আগেই ৮.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল মেক্সিকো। এ দিন সেই তুলনায় কম্পনের মাত্রা ছিল কম, রিখটার স্কেলে ৭.১। কিন্তু তীব্রতা কম হলেও তার পরিণতি এত ভয়ঙ্কর হল কেন, সেই উত্তর খুঁজছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা।

এ দিকে, পাগলের মতো দিনরাত এক করে এখন ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের উদ্ধারকারী দল। তাদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে সাধারণ মানুষও। কারণ সময় যতই এগোচ্ছে, ক্ষীণ হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নীচে প্রাণের আশা।

আর পাঁচটা দিনের মতোই মঙ্গলবার পড়াশোনা চলছিল মেক্সিকো সিটির দক্ষিণে এনরিকে রেবসামেন নামে একটি প্রাথমিক স্কুলে। ভেঙে পড়েছে গোটা স্কুলবাড়িটাই। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, তিনতলা বাড়িটার ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছে ২১টি শিশু ও পাঁচ শিক্ষক-শিক্ষিকা। আটকে রয়েছে আরও অন্তত ৩০-৪০টি পড়ুয়া। এ পর্যন্ত ১১টি শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা গিয়েছে বলে খবর।

পাথরের চাঙড় সরিয়ে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঢুকেছিলেন উদ্ধারকারী দলের পেড্রো সেরানো। কোনও মতে একটা ক্লাসরুমের ভিতরে ঢুকেও পড়েন তিনি। একটু ফাঁকা মতো জায়গায় পৌঁছে দেখেন, স্তূপ হয়ে পড়ে কিছু দেহ। বললেন, ‘‘প্রথমে চোখে পড়ে চেয়ার-টেবিলগুলো। তার পরেই চোখ যায় একটা পায়ের দিকে। প্রাণপণে ধ্বংসস্তূপ সরাতে থাকি। শেষে পেলাম, যদিও একটি মেয়ে ও দুই শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রাণহীন দেহ।’’

ঘটনার পর থেকেই ওই স্কুলের বাইরে ভিড় বাবা-মায়েদের। হোয়াটস অ্যাপ দেখিয়ে তাঁদের অনেকেই বলছেন, ছেলেমেয়ের ফোন থেকে মেসেজ পেয়েছেন, ওরা বেঁচে আছে। কিন্তু এই প্রকাণ্ড ধ্বংসস্তূপ থেকে কী ভাবে খুঁজে বার করা হবে তাদের, পথ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। উদ্ধারকারী দলের এক কর্মীর কথায়, ‘‘কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি, কিন্তু কোন দিক থেকে যে আসছে, বুঝতে পারছি না। ধ্বংসস্তূপের উপরের দিকে হাতড়াবো, নাকি নীচের দিকে...। অসহায় লাগছে।’’ প্রাণের আশা জিইয়ে রাখতে ধ্বংসস্তূপে নল ঢুকিয়ে, তা দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনিয়া নিয়েতো নিজেই বলেন, ‘‘ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে রয়েছেন অনেকে। আশঙ্কা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা বাড়বে।’’ মেক্সিকো সিটির পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গোয়েরেরো, পুয়েবলা, মোরলসেরও, জানান অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী মিগুয়েল অসোরিও চং। মোরলসের বেশির ভাগ এলাকাই বিদ্যুৎহীন। তবে প্রেসিডেন্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত উদ্ধারকাজেই জোর দেওয়া হচ্ছে।

বত্রিশ বছর আগের সেই ভূমিকম্পের সাক্ষী ছিলেন ৫২ বছর বয়েসি জর্জিনা সাঞ্চেজ। বললেন, ‘‘চোখ ফেটে কান্না আসছে। খুব ভয় করছে। যেন সেই দিনটাই ফিরে এসেছে।’’ এ সব নিয়ে এখন ভাবারও সময় নেই ৩০ বছর বয়েসি কার্লোস মেনডোজার। সারা গায়ে ধুলো মেখে হাঁফাতে হাঁফাতে জানালেন, রোমায় একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় মাত্র দু’জনকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছেন তিনি। কয়েকটা ব্লক দূরেই থাকেন আলমা গঞ্জালেজ। ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে ছিলেন তিনিও। ভূমিকম্পের সময়ে তিনি চার তলায় নিজের ফ্ল্যাটে ছিলেন। বললেন, ‘‘ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরোনোর কোনও পথ পাচ্ছিলাম না। পড়শিরা একটু ফাঁকা জায়গা পেয়ে ভিতরে একটা মই নামিয়ে দেন। ওঁদের জন্যই এ যাত্রা রক্ষা পেলাম।’’ তাতে কুড়ির কোঠার তরুণী ক্রিস্টিনা লোপেজের দৃঢ় জবাব, ‘‘মানুষ তো এ রকমই, বিপদ দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE