Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
International News

উত্তর কোরিয়া, বর্বরতা, আর সে দেশেরই এক সাহসিনীর কাহিনি

ইয়োনমি পার্ক। উত্তর কোরিয়ার এক তরুণী। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া জাস্ট পিস সামিটে হাজির হয়েছিলেন এই তরুণী তাঁর কাহিনি নিয়ে। মঞ্চে হাজির হয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে শুনিয়েছেন তাঁর কাহিনি।

ইয়োনমি পার্ক

ইয়োনমি পার্ক

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ১৩:০১
Share: Save:

ইয়োনমি পার্ক। উত্তর কোরিয়ার এক তরুণী। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া জাস্ট পিস সামিটে হাজির হয়েছিলেন এই তরুণী তাঁর কাহিনি নিয়ে। মঞ্চে হাজির হয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে শুনিয়েছেন তাঁর কাহিনি। তাঁর হৃদয়বিদারক কাহিনি শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি সেই মঞ্চে হাজির হওয়া অনেকেই। নিজেকে নর্থ কোরিয়ান ডিফেক্টর হিসাবেই পরিচয় দেন সেই সম্মেলনে।

উত্তর কোরিয়া থেকে কী ভাবে পালিয়ে এলেন, সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন পার্ক। তবে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে নিয়ে গোটা বিশ্বের যা-ই ধারণা থাকুক না কেন, কিম জং উন যে তাঁর কাছে ভগবান সেটা স্বীকার করেছেন পার্ক। তিনি বলেন, কিম আপনাদের কাছে হাসির পাত্র হতে পারে ঠিকই কিন্তু আমার কাছে ভগবান।

একটা কঠিন বাস্তবে ভরা ছিল পার্কের জগত্। তিনি যখন একটু একটু করে বুঝতে শিখছেন, দেখেছেন কী ভাবে কথায় কথায় মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। বিদেশি ছবি দেখলেই মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত। সমাজের এই কঠিন মুখ দেখে বড় হয়েছেন তিনি।

পার্ক জানান, তাঁর এক বার টাইটানিক ছবিটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। খুব ভাল লেগেছিল তাঁর। এই ছবির কয়েকটি দৃশ্য তাঁর মধ্যে একটা খিদে জাগিয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার বাইরেও যে একটা জগত্ আছে, সেখানে স্বপ্ন দেখা যায়, ভালবাসা যায়, স্বাধীনতা রয়েছে!

আরও পড়ুন- হিসেব পাল্টে ফেলেছিলেন ব্যবসায়ী ট্রাম্প

অবৈধ ব্যবসার জন্য ইয়োনমির বাবা গ্রেফতার হওয়ার পরই গোটা পরিবার ঘরছাড়া হল। পোকামাকড় খেয়ে দিন গুজরান করতে হয়েছে তাঁদের। ১৬ বছর বয়সেই পার্কের দিদি পরিবার ছেড়ে চিনে পাড়ি দেন। পার্কও সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। রাতের অন্ধকারে এক অজ্ঞাতপরিচয়ের সহযোগিতায় জমে যাওয়া ইয়ালু নদী পেরিয়ে মাকে সঙ্গে নিয়ে চিনের মাঞ্চুরিয়া প্রদেশে ঢুকে পড়েন। কিন্তু এখানেও বিপত্তি। চিনা সেনাদের হাতে ধরা পড়ে গেলেন মা-মেয়ে। তারা ইয়োনমি-কে নির্বাসনে পাঠানোর হুমকি দিল। তাঁর মাকে ফের উত্তর কোরিয়ায় পাঠানোর তোড়জোড় করল। তবে একটা শর্তেই মা-মেয়েকে ছেড়ে দিতে রাজি হল চিনা সেনারা। সেই শর্ত ছিল ইয়োনমিকে তাদের শয্যাসঙ্গিনী হতে হবে। মেয়েকে তাদের হাত থেকে বাঁচাতে মা নিজেকে সেনাদের কাছে সঁপে দেন। চোখের সামনে মা-কে ধর্ষিত হতে দেখেন ইয়োনমি। এই বর্ণনা দিতে দিতে চোখের জল বেঁধে রাখতে পারেননি পার্ক। এক জন মেয়ে হয়ে মায়ের সঙ্গে ঘটা সেই দৃশ্য আজও তাঁকে বেদনাহত করে বলে জানান পার্ক।

পার্ক আরও জানান, তাঁর মা ও তাঁকে যৌনদাসী হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল ৬৫ ও ৩০০ ডলারের বিনিময়ে। ২ বছর ধরে যৌনদাসী হিসাবেই কাটিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে এক মিশনারিজের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করে দেওয়া হয়। তাঁকে পালাতে সাহায্য করবে বলে শর্তও রাখে সেই মিশনারিজ। কী সেই শর্ত? পার্ক জানান, তাঁকে বলা হয় খ্রিস্টধর্মের জন্য নিজেকে উত্সর্গ করে দিতে হবে। সেই শর্তে রাজি হয়ে যাওয়ার পর পার্কের পালানোর বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়। রাতের অন্ধকারে গোবি মরুভূমি দিয়ে সফর শুরু হয়। পার্কের সঙ্গে ছিলেন তাঁরই মতো আরও ৮ উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দা। সঙ্গে নেন ছুরি, বিষ। ঠিক হয়, মঙ্গোলিয়ার সীমান্তে ধরা পড়লেই এ গুলোর সদ্ব্যবহার করতে পারবেন তাঁরা। এটাও ঠিক হয় ধরা পড়লে নিজেদের মেরে ফেলবেন, কিন্তু উত্তর কোরিয়ায় আর ফিরে যাবেন না। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য গোটা বিশ্বকে জানানো কী শোচনীয় অবস্থায় উত্তর কোরিয়ার মানুষ প্রতি দিন বেঁচে রয়েছে। পার্কের সেই কাহিনির ভিডিও এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

দেখুন সেই ভিডিও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Yeonmi Park In Order To Live North Korea
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE