Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Donald Trump

মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে রূপান্তরকামীদের ছেঁটে ফেলছেন ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই আচমকা ঘোষণায় কিছুটা হতবাক হয়ে গিয়েছেন হোয়াইট হাউসের অফিসারদের একাংশ। বছর ছ’য়েক আগে পূর্বতন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চালু করা আরেকটি নীতি নতুন প্রেসিডেন্ট আমূল বদলে দিতে চাওয়ায় বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তো বটেই, ট্রাম্পের কড়া সমালোচনায় সরব হয়েছেন তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির সেনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদেরও একাংশ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।- ফাইল চিত্র।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।- ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৭ ১৭:৩০
Share: Save:

রাশিয়া নিয়ে বিতর্কের অভিমুখ অন্য দিকে ঘোরাতে এ বার রূপান্তরকামীদের ওপর খড়্গহস্ত হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার জন্য নিজের প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গেও আলোচনার প্রয়োজন মনে করলেন না। পেন্টাগন অন্য কিছু ভাবছে কি না, প্রয়োজন বোধ করলেন না তা জানারও।

বুধবার তাঁর টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন সেনাবাহিনীতে আর রূপান্তরকামীদের কোনও প্রয়োজন নেই। রূপান্তরকামীদের সেনাবাহিনীতে রাখলে তাঁদের জন্য চিকিৎসা বাবদ যে বিপুল খরচ হয়, তা অর্থহীন। তাই সেনাবাহিনীর কোনও দফতর বা কোনও স্তরেই আর রূপান্তরকামীদের রাখা হবে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই আচমকা ঘোষণায় কিছুটা হতবাক হয়ে গিয়েছেন হোয়াইট হাউসের অফিসারদের একাংশ। বছর ছ’য়েক আগে পূর্বতন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চালু করা আরেকটি নীতি নতুন প্রেসিডেন্ট আমূল বদলে দিতে চাওয়ায় বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তো বটেই, ট্রাম্পের কড়া সমালোচনায় সরব হয়েছেন তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির সেনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদেরও একাংশ।

বিস্ময়ে বিমূঢ় পেন্টাগনেরও একাংশ। দশ-এগারো মাস আগেও নিজের নির্বাচনী প্রচারে যিনি সমকামী (লেসবিয়ান, গে), বাইসেক্স্যুয়াল ও রূপান্তরকামীদের পক্ষে লড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন, সেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী ভাবে সেনাবাহিনীতে রূপান্তরকামীদের প্রয়োজনের কথা অস্বীকার করতে পারলেন, তা নিয়ে রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকদের একটি বড় অংশ তো বটেই, হতবাক হয়ে পড়েছেন সেনেটে আর্মড ফোর্সেস কমিটির চেয়ারম্যান জন ম্যাকেনও। প্রতিবাদে সরব মানবাধিকার সংগঠনগুলিও।

বুধবারের টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন, ‘‘আমি সেনাকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কথা বলেছি সমর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও। ওঁরা বলছেন, রূপান্তরকামীদের চিকিৎসা ও অন্যান্য খরচখরচা বাবদ বড় বেশি বোঝা টানতে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। ওঁরাই আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন, সেনাবাহিনীতে রূপান্তরকামীদের আর না রাখতে। যুদ্ধে জিততে হলে অন্যান্য খরচ বাড়াতে হবে। রূপান্তরকামীদের চিকিৎসা খাতে খরচের বোঝা টানতে হলে যেটা হবে না।’’

তথ্য-পরিসংখ্যান কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইট-মন্তব্যের উল্টো কথাই বলছে। মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি একটি সমীক্ষার উল্লেখ করে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর জন্য স্বাস্থ্য খাতে যে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে, তার ১ শতাংশের ১০০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র খরচ হয় রূপান্তরকামীদের চিকিৎসা বাবদ। যার অর্থ, সিন্ধুতে বিন্দু!

দ্বিতীয়ত, গত বছর পূর্বতন প্রেসিডেন্ট ওবামার জমানায় রূপান্তরকামীদের মার্কিন সেনাবাহিনীতে নেওয়া শুরু হলেও, তাঁদের সংখ্যাটা এখনও পর্যন্ত নগণ্যই। র‌্যান্ড কর্পোরেশনের একটি সমীক্ষার উল্লেখ করে ওবামা জমানার প্রতিরক্ষা সচিব অ্যাশ কার্টার বলেছেন, ‘‘গোটা মার্কিন সেনাবাহিনীতে রয়েছেন তো মেরেকেটে আড়াই হাজার রূপান্তরকামী। আর বাহিনীর রিজার্ভ ফোর্সে রয়েছেন আরও হাজার দেড়েক রূপান্তরকামী। এই সামান্য কয়েক জনের জন্য কী এমন হাতিপোষা খরচ হতে পারে?’’

সেনাকর্তা ও সমর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ, আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত বলে তাঁর টুইটে যা লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে বিতর্ক। সেনেটের আর্মড ফোর্সেস কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান পার্টির নেতা জন ম্যাকেন বলেছেন, ‘‘গোটা ব্যাপারটাই তাঁর কাছে ধোঁয়াশা। কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর্মড ফোর্সেস কমিটির চেয়ারম্যানকে সেনাকর্তা বা সমর বিশেষজ্ঞদের অন্যতম বলে মনে করেন না? নাকি ম্যাকেনের ওপর তাঁর ততটা ভরসা নেই? পেন্টাগনেরও কোনও কোনও কর্তা বলেছেন, গোটা ব্যাপারটা সম্পর্কে তাঁরা অন্ধকারে। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর প্রতিরক্ষা সচিব জিম ম্যাটিসও ওই সিদ্ধান্তের কথা জেনেছেন ট্রাম্পের ওই টুইটের পরেই! প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কোন কোন সেনাকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প? রিপাবলিকান দলের কট্টরপন্থী অংশটাকে সন্তুষ্ট করতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই আচমকা সিদ্ধান্ত কি না, তা নিয়েও কৌতূহলী তাঁর দলেরই একাংশ।

আরও পড়ুন- ট্রাম্পের নির্দেশ পেলেই চিনে পরমাণু হামলা, বললেন মার্কিন নৌসেনার শীর্ষকর্তা

প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকরী হবে, যে রূপান্তরকামীরা এখন রয়েছেন মার্কিন সেনাবাহিনীতে, প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত তাঁদের ক্ষেত্রেও কবে থেকে কতটা প্রযোজ্য হবে, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন খোদ ট্রাম্পের মুখপাত্র সারা স্যান্ডার্সও। তাঁর কথায়, ‘‘যে রূপান্তরকামীরা মার্কিন সেনাবাহিনীতে রয়েছেন, তাঁদের এখনই ছাঁটাই করা হবে কি না, সে ব্যাপারে প্রশাসন এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আলোচনায় বসে হোয়াইট হাউস আর পেন্টাগনকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকর হবে, তা নিয়ে ধন্দে হোয়াইট হাউসের একাংশও।

ক্ষুব্ধ মানবাধিকার সংগঠনগুলি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানোর কথা ভাবতে শুরু করেছে। তাঁর আঁচ পাওয়া গিয়েছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের অ্যাটর্নি জোসুয়া ব্লকের কথায়। ব্লক বলেছেন, ‘‘মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এই সিদ্ধান্তে। আদালতে একে চ্যালেঞ্জ জানানোর রাস্তা খোলা রেখেছে মার্কিন সংবিধানই।’’

মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রূপান্তরকামীদের অধিকার খর্বের চেষ্টা যে এই প্রথম করলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তা নয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই তিনি রূপান্তরকামী ছাত্রছাত্রীদের আলাদা বাথরুম ব্যবহারের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE