Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পদ হারাতে পারেন, দলেই কোণঠাসা মে

গত কাল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর জন্মদিনে কোনও রকম উৎসব অনুষ্ঠানের মেজাজ থেকে দূরে রাখেন নিজেকে। এর আগেও তিনি আক্রান্তদের কাছে গিয়েছিলেন। তখনই এ ব্যাপারে টেরেসার নিষ্ক্রিয়তা সমালোচিত হয়।

টেরেসা মে। রয়টার্সের তোলা ফাইল চিত্র।

টেরেসা মে। রয়টার্সের তোলা ফাইল চিত্র।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

মুখরক্ষার জন্য হাতে রয়েছে আর মাত্র দশ দিন। না হলে দলের লোকজনই ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে উৎখাত করতে পারে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-কে।

নানা দিক থেকে ক্ষোভের মুখে তাই মানতেই হলো কথাটা। গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের পরে টেরেসা দুর্গতদের কাছে পৌঁছতে সময় নিয়েছিলেন অনেকটাই। তা নিয়ে ব্রিটেনের জনতার একটি বড় অংশ চূড়ান্ত অসন্তুষ্টও হয়েছিল। ক্ষোভের বহর এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে কেনসিংটনে একটি গির্জায় আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁকে পুলিশ প্রহরায় বের করে আনতে হয়। কেউ চেঁচিয়ে বলেন, ‘দূর হটো’, কেউ বলেন, ‘কাপুরুষ’, কেউ আবার বলে দেন, ‘লজ্জা হওয়া উচিত আপনার!’ বিপর্যয়ের দিন অ্যালিসন মোজেস নামে ৫৭ বছরের এক মহিলা ড্রেসিং গাউনে নেমে এসেছিলেন গ্রেনফেল টাওয়ার থেকে। তিনি গির্জার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘ওঁকে জিজ্ঞেস করতে চাই, যাঁরা আশ্রয়হীন, তাঁদের কাছে পৌঁছতে তিন দিন পেরিয়ে গেল কেন?’’ কেউ কেউ বিক্ষোভ দেখান প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরেও।

গত কাল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর জন্মদিনে কোনও রকম উৎসব অনুষ্ঠানের মেজাজ থেকে দূরে রাখেন নিজেকে। এর আগেও তিনি আক্রান্তদের কাছে গিয়েছিলেন। তখনই এ ব্যাপারে টেরেসার নিষ্ক্রিয়তা সমালোচিত হয়।

আরও পড়ুন: ভয়াবহ দাবানলে পর্তুগালে মৃত ৬২

শেষমেশ গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডে নিজের ভূমিকার জন্য গত কাল রাতে ক্ষমা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার জন্য যতটুকু করার দরকার ছিল, তা তিনি করে উঠতে পারেননি।

প্রথমে নির্বাচনে ভরাডুবি। যার জেরে সরকার গড়তে গিয়ে খাবি খাওয়া। তার পরে গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডে যথাযথ ভূমিকা পালন না করা— সব মিলিয়ে খুবই কোণঠাসা দশা টেরেসার। তাই বেশ কিছু দিন ধরেই কনজারভেটিভ দলের অন্দরে নতুন নেতৃত্বের দাবি উঠেছে। টেরেসাকে সরাতে অন্তত ১২ জন এমপি লিখিত দাবি জানিয়েছেন বলে খবর এক ব্রিটিশ দৈনিকে। তাদের দাবি, আগামী সপ্তাহেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এক প্রাক্তন মন্ত্রী ওই দৈনিকে বলেছেন, ‘‘নিজের দিকে সহানুভূতি টানার চেষ্টা না করে ওঁর এখন উচিত কোমর বেঁধে নেমে পরিস্থিতি সামলানো। যদি সেটা না পারেন, ওঁর সরে যাওয়াই উচিত।’’ ইতিমধ্যেই ১২ জন এমপি তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সংখ্যাটা আরও বাড়লে টেরেসার বিদায় নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে ব্রিটেন ফের আর একটি নির্বাচনের পথে হাঁটবে।

কড়া ব্রেক্সিট এবং নমনীয় ব্রেক্সিটের পক্ষে কত সমর্থককে সন্তুষ্ট করতে পারবেন টেরেসা, তার জন্য তাঁর হাতে রয়েছে দশ দিন। ব্রেক্সিটের দু’তরফেই চাপের মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী। কড়া ব্রেক্সিট থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে নেতৃত্বের সঙ্কটের মুখে পড়তে হবে তাঁকে। আর তাঁর নতুন বন্ধু আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি নমনীয় ব্রেক্সিটের পক্ষে। রানির বক্তৃতার আগে আরও বেশি ভোট পেতে তাদের দরকার টেরেসার। মোদ্দা কথা, রানির বক্তৃতার পরেউ স্পষ্ট হয়ে যাবে টেরেসা আর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকবেন কিনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Theresa May টেরেসা মে
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE