আগামী সপ্তাহে নয়াদিল্লি আসার আগে ভারত-আমেরিকার মৈত্রী নিয়ে আশাবাদের সুর পঞ্চমে চড়িয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসন। ১০০ বছরের বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। আজ একটি বিবৃতি দিয়ে টিলারসনের এই মনোভাবকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়েছে সাউথ ব্লক। কিন্তু এই পুষ্পকোমল কূটনীতির মধ্যে পাকিস্তানের অদৃশ্য কাঁটা লুকিয়ে রয়েছে বলেই মনে করছে বিদেশ মন্ত্রকের একটি বড় অংশ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাঁর দক্ষিণ এশিয়া নীতির ঘোষণায় ইসলামাবাদকে যথেষ্ট দুষেছিলেন। কিন্তু মার্কিন ও ভারতীয় কূটনীতিকরা ভাল করেই জানেন যে, কাবুল প্রশ্নে পাকিস্তান বিনা গীত নাই আমেরিকার! বুধবার ওয়াশিংটনের ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর বক্তৃতায় টিলারসন ভারতের ভূয়সী প্রশংসা ও চিনের নিন্দা করেছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে পাকিস্তানও যে তাঁদের সহযোগী, সে কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি!
জর্জ বুশ জমানায় আমেরিকার কোনও শীর্ষ পর্যায়ের কর্তা ভারত সফর করলে, হাইফেনের মতো সেখানে জুড়ে যেত পাকিস্তান। পরবর্তী সময়ে বারাক ওবামা প্রশাসনের কর্তারা এই প্রথা থেকে অনেকটাই সরে এসে পৃথক ভারত সফরের পথে হেঁটেছেন। এই নিয়ে হোয়াইট হাউসের কাছে সাউথ ব্লকের অলিখিত অনুরোধও থাকত। টিলারসন কিন্তু সেই সাবেকি মার্কিন নীতিতে ফিরে গিয়ে আগামী সপ্তাহে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান সফরও করতে চলেছেন। মুখে কিছু না-বললেও এ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে মোদী সরকার।
আরও পড়ুন: আইএস মুক্ত রাকা, তবে সঙ্কট কাটেনি
সূত্রের খবর, ট্রাম্পের পাকিস্তান-বিরোধী দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে ক্ষুব্ধ ইসলামাবাদকে প্রশমিত করতে গত সপ্তাহে লিজা কার্টিস এবং অ্যালিস ওয়েলস— এই দুই শীর্ষ কর্তাকে পাকিস্তানে পাঠিয়েছিল হোয়াইট হাউস। তাঁদের পাক নেতৃত্ব সাফ জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে যদি ভারত তার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বাড়িয়ে চলে, তা ভাল চোখে দেখবে না ইসলামাবাদ। তখন আফগানিস্তান প্রশ্নে পিছু হঠতে হবে পাকিস্তানকে।
আফ-পাক অঞ্চলে তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তান ছাড়া আমেরিকার এগোনো সম্ভব নয়। তাই ভারতকে আরও বড় ভূমিকায় দেখার কথা বললেও, অথবা পাকিস্তানের মাটিতে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদের কারখানা বন্ধ করার জন্য প্রকাশ্যে হুমকি দিলেও, সমান্তরালভাবে ইসলামাবাদকেও সঙ্গে রাখতে চায় ওয়াশিংটন। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ট্রাম্প তাঁর নতুন দক্ষিণ এশিয়া নীতি ঘোষণার পরে আফ–পাক সীমান্তে কর্মরত মার্কিন গোয়েন্দারা তার বিরোধিতা করেছিলেন। পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে তাঁরা ওয়াশিংটনকে জানান, ট্রাম্পের নীতি অবাস্তব।
তবে প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে কোনও আশঙ্কা প্রকাশ চাইছে না নয়াদিল্লি। বরং চেষ্টা হচ্ছে, এই পরিস্থিতি থেকে যতটা সম্ভব ফায়দা তুলে নেওয়ার। আজ টিলারসনের আসন্ন সফরকে স্বাগত জানিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে টিলারসন গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটির বিভিন্ন শক্তিশালী দিক তুলে ধরে আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মনীতির প্রতি আমাদের যৌথ দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর ইতিবাচক মূল্যায়নকে আমরা স্বাগত জানাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy