Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পুতিন-দেশে ভোট বাহুল্য

মস্কো শহরে ট্যাক্সি চালান সের্গেই ইনশাকোভ। ৩৭ বছরের যুবক দুই সন্তানের বাবাও। তাদের দেখভাল নিয়ে চিন্তিত সের্গেই।

ভোটদাতা: তিনি প্রেসিডেন্ট। এ বার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও। রবিবার মস্কোর এক বুথে ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এপি।

ভোটদাতা: তিনি প্রেসিডেন্ট। এ বার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও। রবিবার মস্কোর এক বুথে ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
মস্কো শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৪
Share: Save:

আঠেরো বছর ধরে দেশের মাথায়। চতুর্থ বারের জন্য কি সেই ভ্লাদিমির পুতিনকেই ফিরিয়ে আনবেন দেশের এগারো কোটি ভোটার? জবাব পাওয়াটা নাকি শুধু সময়ের অপেক্ষা। অন্তত রুশ সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ আজ নির্বাচনের দিনেই দাবি করে ফেলেছে, চতুর্থ বারের জন্য দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন ৬৫ বছরের পুতিন। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যালেক্সি নাভালনি আইনি জটিলতায় লড়তে পারেননি এ বারের নির্বাচন। ফলে পুতিনের ফের ক্রেমলিনে ফেরা নিশ্চিত বলেই ধরে নিয়েছেন দেশের অধিকাংশ মানুষ।

আজ সকাল ছ’টায় দেশের পূর্বতম প্রান্ত, কামচাটকা আর চুকোটকায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ পর্ব। প্রাথমিক ভোটদান পর্বের পর জানা গিয়েছে, দেশের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ৬৭ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

প্রাক্তন রুশ চর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ের উপর রাসায়নিক হামলার ঘটনায় ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স-সহ পশ্চিমী শক্তিধর দেশগুলির সঙ্গে এখন রাশিয়ার সম্পর্ক কার্যত তলানিতে। সেই সঙ্গে পুতিনের নিজের দলই এ বার স্বীকার করে নিয়েছে, প্রেসিডেন্টের গোটা নির্বাচনী প্রচার পর্বটাই এ বার কেমন যেন নিষ্প্রভ ছিল। পুতিন নিজেও নির্বাচনের আগে একটিও টিভি বিতর্কে অংশ নেননি। তিনি আদৌ এই ভোটে লড়বেন কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছিল এক সময়। তবু পুতিনকে ছাড়া দেশের রাশ কারও হাতে ছাড়ার কথা ভাবতে পারছেন না দেশের অধিকাংশ মানুষ।

আরও পড়ুন: রক্ত, উকুনে ঢাকা শরীর দেখে পিছিয়ে যায় সেনা!

মস্কো শহরে ট্যাক্সি চালান সের্গেই ইনশাকোভ। ৩৭ বছরের যুবক দুই সন্তানের বাবাও। তাদের দেখভাল নিয়ে চিন্তিত সের্গেই। সংসারে আর্থিক অনটন লেগেই থাকে বলে অভিযোগ তাঁর। সরকারি সাহায্য সে ভাবে পৌঁছয় না তাঁদের কাছে। তবে তাঁর মুখে শুধুই পুতিন স্তুতি। বললেন, ‘‘কোথায় অভিযোগ জানাব জানি না। পুতিনই আমাদের শেষ আশা।’’

এক বর্ষশেষের দিনে আচমকাই দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার এসেছিল পুতিনের হাতে। ১৯৯৯-এর ৩১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেছিলেন তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন। ২০০০ সালের শুরুতেই প্রেসিডেন্টের গদিতে বসেন পুতিন। মধ্যে একটা সময় দিমিত্রি মেদভেদেভ প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বটে। কিন্তু সেই সময় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছিল পুতিনের হাতে। ২০১২ সালে ফে‌র গদিতে ফেরেন পুতিন। তার পর থেকে তিনিই প্রেসিডেন্ট, তিনিই প্রধানমন্ত্রী। দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, পশ্চিমী দুনিয়াকে যোগ্য জবাব দিতে পুতিনের কোনও বিকল্প হয় না। যেমন মস্কোর বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর সের্গেই বাবাইয়েভ। একটি পরিবহণ সংস্থার ম্যানেজার সের্গেইয়ের কথায়, ‘‘ইউরোপ আমেরিকা তো চায় আমরা হাঁটু গেড়ে ওদের সামনে বসি। কিন্তু আমার ওদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে আমরা এখনও দাঁড়িয়ে আছি। আর সেটা প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্যই।’’

বিরোধীরা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাঁকে ভোটে দাঁড়াতে না দেওয়াটা পুতিনেরই কৌশল বলে অভিযোগ করেছেন নাভালনি। উঠছে যুব সমাজকে প্রলোভিত করার অভিযোগও। বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার পড়েছে, বুথের সামনে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে সেরা নিজস্বী তুলতে পারা ভোটারকে পুরস্কৃত করা হবে।

প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়ছেন সাত জন। যাঁদের মধ্যে কোটিপতি কমিউনিস্ট নেতা পাভেল গ্রুদিনিন ছাড়াও আছেন টিভি উপস্থাপক কেসেনিয়া সবচাক। কিন্তু এঁদের কেউই আট শতাংশের বেশি ভোট পাবেন বলে মনে হচ্ছে না। কোনও ভাবে পুতিন সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে তিন সপ্তাহের মধ্যে ফের ভোট হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vladimir Putin Russia President Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE