মুক্তি: কালো ধোঁয়ার জালে পশ্চিম মসুলের আকাশ। আইএস জঙ্গি হটাতে চলছে ইরাকের সেনাবাহিনীর বিমান হানা। মঙ্গলবার। এএফপি
পিছু হটছে আইএস। চলতি মাসে নতুন করে অভিযান শুরুর ঠিক তিন দিনের মাথায় পশ্চিম মসুলের বেশির ভাগ সরকারি দফতরই পুনর্দখল করা গিয়েছে বলে আজ জানিয়েছে ইরাকের সরকারি বাহিনী। শহরের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘর থেকেও জঙ্গিদের উৎখাত করা গিয়েছে বলে দাবি সেনার। জঙ্গিদের তরফে একটা মরণকামড়ের আশঙ্কা তবু থেকেই যাচ্ছে।
সমস্যার শুরুটা ২০১৪ সালে। মসুল-সহ পুরো ইরাক জুড়েই তখন জাল ছড়াতে শুরু করেছে আইএস। প্রায় তখন থেকেই দফায় দফায় শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের এলাকা দখলের লড়াই। যাতে প্রথম থেকেই মার্কিন সেনা-জোটের সমর্থন পেয়ে এসেছে ইরাক। আর এই তিন বছরে দেখা গিয়েছে, মসুল নিয়েই আইএস সব চেয়ে বেশি নাছোড়বান্দা। চলতি বছরের শুরুতেই বিমানবন্দর ও বিশ্ববিদ্যালয়-সহ পূর্ব মসুলের প্রায় পুরোটাই জঙ্গিমুক্ত করে ইরাকি সেনা। কিন্তু তত ক্ষণে ফের জঙ্গিদের হাতে চলে গিয়েছে পশ্চিম মসুল।
আয়তনে পূর্ব মসুল বড়। কিন্তু জনঘনত্ব বেশি পশ্চিম মসুলেই। প্রশাসনের দাবি, শহরের এই অংশে আবার বেশ কিছু আইএস-সমর্থক জনগোষ্ঠীও রয়ে গিয়েছে। তাই ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি লড়াই শুরু করেও খানিকটা পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয় সেনা-জোট। তার পর জঙ্গি-দমনে ফের অভিযান শুরু হয় দিন তিনেক আগে। আজ বেশ কয়েকটি সরকারি দফতর ফের নিজেদের দখলে নেওয়ার পর ইরাকি বাহিনীর দাবি, ‘‘এ বার পুরো মসুলকেই জঙ্গিমুক্ত করবে প্রশাসন।’’ টাইগ্রিস নদীর উপর বেশির ভাগ সেতুই এখন সরকারি বাহিনীর দখলে। যদিও স্থানীয়দের দাবি, এই সেতুগুলির আর একটিও ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় নেই। মেরামতি প্রয়োজন।
ঢেলে সাজতে হবে মসুলের জাদুঘরটিকেও। অভিযোগ, এখানে যথেচ্ছ লুঠপাট চালিয়েছে জঙ্গিরা। সঙ্গে চলেছে ব্যাপক ভাঙচুরও। ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে নিজেরাই সেই ভাঙচুরের ছবি অনলাইনে ছড়ায় আইএস। জঙ্গিদের থেকে সেই জাদুঘর দখল নেওয়ার কথা আজ জানিয়েছে ইরাকের ফেডেরাল পুলিশ এবং র্যাপিড রেসপন্স ইউনিট। জঙ্গিদের উৎখাত করা গিয়েছে মসুলের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক থেকেও। মসুলের বেশির ভাগ ব্যাঙ্কের মতো ২০১৪ সালে এখানেও ব্যাপক লুঠপাট চালিয়েছিল আইএস।
পশ্চিম মসুলে অবস্থিত পুলিশের আঞ্চলিক দফতর, আদালত, প্রধান পানীয় জল ও বিদ্যুত সরবরাহ কেন্দ্রে দিন কয়েক আগেই ঘাঁটি গেড়েছে সরকারি বাহিনী। তবু শহরের স্থিতাবস্থা ফেরানো নিয়ে এখনই চিন্তামুক্ত হতে পারছে না প্রশাসন। মরিয়া আইএস এখনও এখানে বেশ কয়েকটি ঘাঁটি আগলে রেখেছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। এই দফার লড়াইয়ের জেরে গত কয়েক দিনে অন্তত ৫০ হাজার স্থানীয় ঘরছাড়া হয়েছেন বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা। অভিযান শুরুর আগে সংখ্যাটা ছিল সাড়ে ৭ লক্ষ। প্রশাসনের চিন্তা বাড়ছে এই বাকি সংখ্যাটা নিয়েও।
মসুলের জঙ্গি-দমন অভিযানে আবার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে। যার জেরে সম্প্রতি নারী ও শিশু-সহ স্থানীয় অন্তত ১২ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি। তবে কারা এই হামলা চালিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি এই ধরনের হামলা যুদ্ধপরাধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy