Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

র‌্যানসমওয়্যার হামলাকারীরা পণ হিসেবে চাইছে বিটকয়েন, এটি কী?

বিশ্ব জুড়ে সাইবার দস্যুর হানায় জেরবার গোটা বিশ্ব। গত শুক্রবার থেকে সাইবার হামলায় এ পর্যন্ত ভারত-সহ এশিয়া-ইউরোপের ১০০টি দেশের তিন লক্ষেরও বেশি কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে৷ যার জেরে বহু কম্পিউটারের ফাইল ব্যবহারকারীদের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৭ ১৬:১৮
Share: Save:

বিশ্ব জুড়ে সাইবার দস্যুর হানায় জেরবার গোটা বিশ্ব। গত শুক্রবার থেকে সাইবার হামলায় এ পর্যন্ত ভারত-সহ এশিয়া-ইউরোপের ১০০টি দেশের তিন লক্ষেরও বেশি কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে৷ যার জেরে বহু কম্পিউটারের ফাইল ব্যবহারকারীদের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড় দেওয়ার এই ধরনের ভাইরাসকে সাইবার জগতে বলা হয় ‘র‌্যানসমওয়্যার’। পণবন্দি করার এ-ও এক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। আর সেই ভাইরাস ভেদ করার কোড জানানোর জন্য মাথাপিছু ৩০০ ডলার বিটকয়েন করে চেয়েছে অপরাধীরা। কিন্তু কী এই বিটকয়েন? আসুন জেনে নেওয়া যাক—

বিটকয়েন কী?

বিটকয়েন হল এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা বা সাঙ্কেতিক মুদ্রা (ক্রিপ্টো কারেন্সি)। ডলার কিংবা ইউরোর বিনিময়ে বিটকয়েন কেনা-বেচা যায়। ঠিক অন্যান্য দেশের মুদ্রার মতোই। এটি অনলাইন ওয়ালেটে জমিয়ে রাখা যায়। অনলাইনে বিটকয়েন খরচ করে পাওয়া যায় বাস্তবের বিভিন্ন ধরনের পরিষেবাও।

বিটকয়েনে আলাদা কী রয়েছে?

বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোনও ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা নিয়ন্ত্রণকারী কোনও প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয় না। যেহেতু বিটকয়েনের লেনদেনের জন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পড়ে না এবং এর লেনদেনের গতিবিধি কোনও ভাবেই অনুসরণ করা যায় না, তাই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিটকয়েন ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হ্যাকাররা সেই কারণেই বিটকয়েনের উপরে বেশি জোর দিয়ে পণ আদায় করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

কী ভাবে কাজ করে?

বিটকয়েনের লেনদেন হয় গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কম্পিউটারে। এটি কোনও ‘সেন্ট্রাল ক্লিয়ারেন্স হাউজ’(যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের চেক এবং আর্থিক লেনদেন হয়)-এর নজরদারির মধ্য দিয়ে যায় না। কিংবা এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানও নেই। বিটকয়েনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় অনলাইনে একটি উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে।

বিটকয়েন মাইনারের মাধ্যমে যে কেউ বিটকয়েন তৈরি করতে পারে। এটি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটি সব সময় অনুমানযোগ্য এবং সীমিত। বিটকয়েন তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি গ্রাহকের ডিজিটাল ওয়ালেটে সংরক্ষিত থাকে। এই সংরক্ষিত বিটকয়েন যদি গ্রাহক কর্তৃক অন্য কারও অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় তা হলে এই লেনদেনের জন্য একটি স্বতন্ত্র ইলেক্ট্রনিক সিগনেচার তৈরি হয়ে যায়। যা নেটওয়ার্কের মধ্যে গোপন অথচ সুরক্ষিত ভাবে সংরক্ষিত হয়। একই সঙ্গে গ্রাহকদের সেই সময়ের লেজার সেন্ট্রাল ডাটাবেস বা অনলাইনে হিসেব-সংক্রান্ত তথ্যাবলী আপডেটেড হতে থাকে।

আরও পড়ুন: দস্যু হানায় সতর্কতা, এটিএমগুলির সফটওয়্যার আপগ্রেড করার নির্দেশ

বিটকয়েন দিয়ে কোনও পণ্য কেনা হলে তা বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় এবং বিক্রেতা পরে সেই বিটকয়েন দিয়ে পুনরায় পণ্য কিনতে পারে। অন্য দিকে সমপরিমাণ বিটকয়েন ক্রেতার লেজার থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যেক চার বছর অন্তর বিটকয়েনের মোট সংখ্যা পুনর্নির্ধারণ করা হয় যাতে বাস্তব মুদ্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা যায়।

বিটকয়েনের লোভে সাইবার ক্রাইম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে বলে মত বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা সংস্থার। পুরোপুরি এর থেকে নিস্তার মেলার উপায় এখনও কেউই বাতলাতে পারেননি। কিন্তু একটি সম্ভাবনাময় দিক খোলা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিটকয়েনে লেনদেনকারীদের পরিচয় সম্পর্কে জানা না গেলেও, গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টের লেনদেন নিয়ে তদন্ত চালালে, বিটকয়েনের গতিবিধি সম্পর্কে জানা যাবে। এবং এর থেকে অপরাধীদের গতিবিধি সম্পর্কেও জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE