Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিবাদের বিশ্ব-রাজধানী প্যারিস

‘আমিই শার্লি’, বুলেটের শব্দ হারিয়ে গেল জবাবি স্লোগানে

জঙ্গির বুলেটে নিহত হয়েছিলেন ১৭ জন। সেই বুলেটের জবাবে আজ পথে নামলেন প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ। পথে নামল প্যারিস। পথে নামল গোটা বিশ্ব। পথে নামলেন অগুন্তি রাষ্ট্রনেতা। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। আজকের মিছিল মিলিয়ে দিল যুযুধান দুই রাষ্ট্রকে। মিছিলের প্রথম সারিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের সঙ্গেই হাঁটলেন নেতানিয়াহু এবং আব্বাস। মিছিলে ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী ম্যাটো রেনজি, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেট দাভুতোগলু ও জর্ডনের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লা।

একই ফ্রেমে নেতানিয়াহু-আব্বাস। প্রতিবাদের মিছিলে সামিল রাষ্ট্রনেতারা।<br /> (বাঁ দিক থেকে) ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, মালির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকর কিটা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল, ইউরোপের কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক, প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। <br />রবিবার প্যারিসে। ছবি: রয়টার্স

একই ফ্রেমে নেতানিয়াহু-আব্বাস। প্রতিবাদের মিছিলে সামিল রাষ্ট্রনেতারা।<br /> (বাঁ দিক থেকে) ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, মালির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকর কিটা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল, ইউরোপের কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক, প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। <br />রবিবার প্যারিসে। ছবি: রয়টার্স

সোমঋতা ভট্টাচার্য
প্যারিস শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৮
Share: Save:

জঙ্গির বুলেটে নিহত হয়েছিলেন ১৭ জন। সেই বুলেটের জবাবে আজ পথে নামলেন প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ। পথে নামল প্যারিস। পথে নামল গোটা বিশ্ব। পথে নামলেন অগুন্তি রাষ্ট্রনেতা।

ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। আজকের মিছিল মিলিয়ে দিল যুযুধান দুই রাষ্ট্রকে। মিছিলের প্রথম সারিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের সঙ্গেই হাঁটলেন নেতানিয়াহু এবং আব্বাস। মিছিলে ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী ম্যাটো রেনজি, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেট দাভুতোগলু ও জর্ডনের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লা। মিছিলে যোগ দিতে যাওয়ার আগে ক্যামেরন টুইট করে জানান, “আমি প্যারিসের পথে। শার্লি এবদোর খুনিরা আমাদের মনোবল এবং মূল্যবোধ ধ্বংস করতে পারবে না।” প্রায় চল্লিশ জন রাষ্ট্রপ্রধান আজকের মিছিলে হেঁটেছেন। প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের কথায়, “প্যারিস আজ প্রতিবাদের বিশ্ব-রাজধানী!”

প্রতিরোধের মিছিলে সামিল এই খুদেও। রবিবার প্যারিসে। ছবি: এএফপি

ট্রেন-মেট্রোয় আজ সারাদিন টিকিট লাগেনি। রবিবার ইল-দো-ফ্রঁসের (প্যারিস এবং সংলগ্ন অঞ্চল) ‘আর-ই-আর’ ট্রেন পরিষেবা আধ ঘণ্টা অন্তর মেলে। সে জন্য প্রত্যেকটা স্টেশনে নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু ক্ষণ বেশি দাঁড়াল ট্রেন। অপেক্ষা, যদি আরও কেউ আসেন!

ফরাসি ব্যঙ্গচিত্র পত্রিকা ‘শার্লি এবদো’র দফতরে জঙ্গিহানার প্রতিবাদে আজ দুপুর তিনটে থেকে জমায়েত শুরু হয় প্যারিসের প্রাণকেন্দ্র রেপুবলিক, বাস্তিল, গার দ্যু নর্দ চত্বরে। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর শুরু হয় স্লোগান-গানের পালা। ১০ লক্ষ লোকের জমায়েত হবে বলে অনুমান করেছিল পুলিশ। রাতে জানা যায়, প্রতিবাদীর সংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষ ছুঁয়ে ফেলেছে।

রাষ্ট্রনেতা ও এই বিশাল সংখ্যক সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে রেপুবলিক, ওবেরক্যাম্ফ ও জ্যাক বোসেরজঁ এই তিনটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোতায়েন করা হয় প্রায় দু’হাজার পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মী। মিছিলের ভিড়ে সাদা পোশাকে মিশে যান কয়েকশো গোয়েন্দা। শুধু রাস্তায় নয়, বড় বড় বাড়ির ছাদ থেকেও নজরদারি চালিয়েছেন তাঁরা।

প্যারিসের রাস্তায় এক টুকরো ভারতও। ছবি: অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

আজ গার দ্যু নর্দ (প্যারিস নর্থ) থেকেই শুরু হয় মিছিল। সকলেরই হাতে, বুকে, এমনকী তাঁদের পোষ্যের পিঠেও আটকানো চিরকুট ‘আমি শার্লি’। সঙ্গে ছোট-বড় নানা আকারের পেন্সিলের কাট-আউট, মডেল। কারও কানে গোঁজা, কারও বা খোঁপায় আটকানো হরেক রঙের পেন্সিল। বক্তব্য একটাই ‘আমি, তুমি, আমরা সকলে শার্লি। আমরা শার্লি ছিলাম, আমরা শার্লি থাকব।’

জমায়েতে উড়েছে নানা দেশের পতাকা। ফ্রান্স, জার্মানি, সুইৎজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ভারতেরও। কারও হাতের প্ল্যাকার্ড বলছে ‘ইসলাম অর্থাৎ শান্তি’। বর্ণবিদ্বেষ যেন কোনও ভাবে ছড়াতে না পারে প্রেমের শহরে প্যারিসে। প্যারিসবাসী মরক্কান জুলিয়া যেমন বললেন, “ফ্রান্সে এমন কিছু ঘটবে না। সকলের জন্য এখানকার দরজা খোলা ছিল, থাকবেও।”

প্যারিস ছাড়াও মিছিল হয়েছে দেশের বিভিন্ন শহরে। সরকারি সূত্রে দাবি, আজ দেশজুড়ে ৩৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন।

প্যারিসের ভিড়ে হঠাৎ চোখে পড়ল একটা অন্য রকম প্ল্যাকার্ড। লেখা ‘এ দোম্যাঁ?’ কাল কী হবে? সেটাই তো সব চেয়ে বড় প্রশ্ন। বাড়ির বারান্দা থেকে রেকর্ড প্লেয়ারে বক্স লাগিয়ে মিছিলের মানুষকে জন লেননের ‘ইম্যাজিন’ শোনানো আর জাতীয় সঙ্গীতের সুরে সস্তায় বিয়ার বিক্রি করা মানুষগুলো মনে রাখবেন তো আগামীর প্রতিশ্রুতি? যে পেনসিল-কলমের প্রতীক নিয়ে ঐতিহাসিক মিছিলে সকলে হাঁটলেন, প্রতিবাদী প্যারিসের সেই কলমের জোর শেষ পর্যন্ত থাকবে তো?

আইএস-যোগের অনুমান

প্যারিসের সুপারমার্কেটে হামলাকারী পলাতক জঙ্গি হায়াত বৌমেদি সপ্তাহখানেক আগেই ফ্রান্স ছেড়েছে বলে খবর। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ২ জানুয়ারি তুরস্কে পৌঁছেছে হায়াত। ‘শার্লি এবদো’-র দফতরে হামলায় আল কায়দা গোষ্ঠীর নাম জড়ালেও এ দিনও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কোনও খবর মেলেনি। সংবাদ সংস্থা সূত্রে যদিও জানানো হয়েছে, একটি বিবৃতি দিয়ে ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে আল কায়দা গোষ্ঠী। তবে আজ, সুপারমার্কেট হামলায় জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার নাম জড়িয়েছে। আমেদি কুলিবেলির মতো দেখতে এক আইএস জঙ্গির একটি ভিডিও আজ ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে জঙ্গিরা। তাতে জঙ্গি দাবি করেছে, ‘শার্লি এবদো’র দফতরে হামলাকারী দুই জঙ্গিকে নিয়ে হামলার ছক কষেছিল সে। পুলিশের অনুমান, এই হামলায় জড়িত থাকতে পারে আইএস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

somrita bhattacharya charlie hebdo paris rally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE