Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
কানপুর জয়ের ছক কলকাতায় তৈরি ডে’ভিলিয়ার্সদের

অশ্বিনের সঙ্গী প্রশ্নে গ্রিন পার্কের মতোই যেন অগোছালো ভারত

সন্ধে ছ’টাতেও ব্রহ্মতালু জ্বালিয়ে দেওয়া গরম। আনুষাঙ্গিক, নাক-মুখ তাক করে উড়ে আসা রাশি-রাশি ধুলো। সেই ধুলো থিতু হওয়ার সময় পাচ্ছে কই? সেকেন্ডে সেকেন্ডে হুটার বাজিয়ে আসছে পুলিশের নানা বড় কর্তার গাড়ি। একটা বেরোচ্ছে তো পরের মুহূর্তে আর একটা ঢুকে পড়ছে।

কানপুর এখনও দূর। লখনউ বিমানবন্দরে ধোনি-কোহলি। ছবি: পিটিআই।

কানপুর এখনও দূর। লখনউ বিমানবন্দরে ধোনি-কোহলি। ছবি: পিটিআই।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
কানপুর শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

সন্ধে ছ’টাতেও ব্রহ্মতালু জ্বালিয়ে দেওয়া গরম। আনুষাঙ্গিক, নাক-মুখ তাক করে উড়ে আসা রাশি-রাশি ধুলো। সেই ধুলো থিতু হওয়ার সময় পাচ্ছে কই? সেকেন্ডে সেকেন্ডে হুটার বাজিয়ে আসছে পুলিশের নানা বড় কর্তার গাড়ি। একটা বেরোচ্ছে তো পরের মুহূর্তে আর একটা ঢুকে পড়ছে।

প্রধান ফটকের বাইরে বড় করে টাঙানো একটা হোর্ডিংয়ে কোনও এক থিম পার্কের বিশাল বিজ্ঞাপন। পাশে শাটার বন্ধ করা কতিপয় টিকিট কাউন্টার। সামনে একটা অর্ধেক-তৈরি বাঁশের গেট হেলায় পড়ে।

হঠাৎ করে দেখলে বোঝা যাবে না এখানে কোনও ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন হচ্ছে, না কি কোনও পুলিশ-অনুষ্ঠানের। বোঝা যাবে না, এটা আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লর ঘরের মাঠ। শুনে অবাক লাগবে, মাঠের চিফ কিউরেটর পাঁচ বছর আগেও ছিলেন স্টেডিয়ামের ইলেকট্রিশিয়ান!

হাজার খুঁজে এক কেন, আধজন ক্রিকেট কর্তারও দর্শন পাওয়া যাবে না। ক্রিকেটারদের ছবিতে সাজানো ফ্রিডম সিরিজের হোর্ডিং এখানেও চোখে পড়ার কথা, যে ভাবে পড়ছে আর পাঁচটা স্টেডিয়ামে। কিন্তু সে সব কোথায় কে জানে। ঘরের ছেলে সুরেশ রায়না নিয়ে কেমন উত্তেজনা... প্রশ্নটা শেষ করার অবকাশ না দিয়ে বরং সিকিউরিটি গার্ড করুণ আর্তি শোনাবেন, ভুখ লগা হ্যায়। খানা কব আয়েগা আপ কুছ জানতে হ্যায়!

এটা, শুক্রবারের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়াম। আরও ভাল করে বললে, ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা হাইপ্রোফাইল ওয়ান ডে সিরিজ শুরুর ঘণ্টা চল্লিশেক আগের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়াম। অবিন্যস্ত, অগোছালো।

অনেকটা যেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের মতো!

আইপিএলের জন্মভূমিতে বিদেশিদের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে যে টিম নাকি বুঝতে পারছে, দেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি খেলাটা তাদের এখনও অত সড়গড় হয়নি। বুঝতে পারছে, ঘরের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হতে ছ’মাসও বাকি নেই কিন্তু টিম কম্বিনেশন এখনও চূড়ান্ত নয়। ওপেনিংয়ে শিখর ধবন রান পাচ্ছেন না। তা হলে কি অজিঙ্ক রাহানে? মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যদি ফিনিশার হিসেবে একটা ম্যাচে ব্যর্থ হন, তা হলে তাঁর বিকল্প কে? বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, রোহিত শর্মারা নিজ-নিজ ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে এক ধরনের ভূমিকা পালন করে অভ্যস্ত। কিন্তু একসঙ্গে একই টিমে খেললে কে কোন কাজটা সামলাবেন, শোনা গেল সেটাও বুঝে ওঠা যাচ্ছে না।

বোলিং নিয়েও খুব স্বস্তির বিশেষ জায়গা নেই। টিমে কেন একজনও এক্সপ্রেস বোলার নেই, তা নিয়ে নাকি টিমের সঙ্গে জড়িত কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। অনুযোগ, যেখানে উমেশ যাদবের মতো বোলার রঞ্জি ট্রফিতে সেঞ্চুরি করছেন, সেখানে জাতীয় দলে পেসার বলতে ভুবনেশ্বর কুমার আর মোহিত শর্মা! আর স্পিন? সেখানেও বা শান্তি কোথায়? দেশের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে দ্বিতীয় স্পিনার তো খেলাতে হবে। কিন্তু সেটা কে? শোনা গেল, টিম চাইছে একজন স্পিনার-অলরাউন্ডার। অক্ষর পটেল নিয়ে কেউ কেউ খুশি হলেও তাঁর উপর পূর্ণ নির্ভরতা এখনও নাকি আসেনি। হরভজন সিংহ? বলা হচ্ছে, তিনি বড়জোর সাময়িক বিকল্প হতে পারেন। ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় রাখা যাবে না। তাঁর ফিটনেস নিয়েও ম্যানেজমেন্টের খুঁতখুঁতানি রয়েছে।

সব মিলিয়ে যা অবস্থা, তাতে ওয়ান ডে আর তার পরের টেস্ট সিরিজটাকে নাকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বিরক্তিকর ‘ইন্টারভাল’ হিসেবে দেখছে টিম ইন্ডিয়া।

একেবারে উল্টো মেরুতে যদি কেউ থেকে থাকে, সেটা দক্ষিণ আফ্রিকা। যারা টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের সেলিব্রেশন কাটছাঁট করে বসে পড়ছে টিম মিটিংয়ে। যারা কলকাতা থেকেই কানপুর-সহ গোটা ওয়ান ডে সিরিজের ব্লু-প্রিন্ট পকেটে গুঁজে নিয়েছে।

শুক্রবার রাতের দিকে দু’টো টিমই রাত করে কানপুর ঢুকল। কিন্তু ডে’ভিলিয়ার্সরা যা করার সবই করে নিলেন কানপুরে নয়, কলকাতায়। শোনা গেল এ দিন হঠাৎ করে কলকাতার টিম হোটেলের স্পেশ্যাল মিটিং রুমে গোটা টিমকে ডেকে পাঠানো হয়। যেখানে রীতিমতো পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন চালিয়ে দেওয়া হয় প্লেয়ারদের সামনে। একটা নয়, দু’-দুটো। একটা প্রেজেন্টেশনের বিষয়, ভারতের ওয়ান ডে টিম। ব্যাটসম্যান-বোলার নির্বিশেষে প্রত্যেক ভারতীয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ। ধোনিকে কোন জায়গায় বল করলে উইকেট পাওয়া যাবে? কোহলি স্পিনের সামনে বেশি স্বচ্ছন্দ, না পেস? কোন বোলারকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হবে রোহিত শর্মার বিরুদ্ধে? ভুবনেশ্বর কুমাররাও বাদ গেলেন না। ভুবির বল কোথায় বেশি পড়ে বা অশ্বিনের স্পিন নির্বিষ করতে কী দরকার, সবই দেখে নেওয়া হল।

অন্য প্রেজেন্টেশনে আবার থাকল, আসন্ন ওয়ান ডে সিরিজের প্রত্যেকটা ভেন্যুর বিশ্লেষণ। যেমন কানপুর। আজ পর্যন্ত এখানে অনুষ্ঠিত সব কটা ওয়ান ডে-র রেজাল্ট দেখানো হল। দেখা হল, গ্রিন পার্কে আগে ব্যাট করলে কী হয়েছে, আর পরে করলে কী। সহজ বাংলায়, কানপুর পিচের ট্রেন্ডটা বুঝে নেওয়া হল। যা দেখেশুনে মনে হবে, ‘ল্যাপটপ কোচ’ বব উলমারের জমানা আবার ফিরে এল বোধহয়। মনে হবে, রবিবার সকাল-সকাল ওয়ান ডে সিরিজটা খেলতে নামবে একটাই দল। সেটা, দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্য দলটার যেন সিরিজে শরীর থেকেও মন নেই। তাদের মাথায় এখন একটাই ভাবনা। একটাই চিন্তা। একটাই সিরিজ। একটাই যুদ্ধ।

মিশন বিশ্বকাপ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE