Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ফাইনালের আগে দাদার পাড়ায় মাস্টার ব্লাস্টার

আবেগের শহরের ভালবাসা প্রার্থনা তেন্ডুলকরের

‘কেমন আছ, কলকাতা? ভাল আছ?’ প্রায় তেরো মাস হবে। তেরো মাস আগে শহর হদয় থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল শেষ বার। ইডেনে তাঁর দেশের জার্সিতে শেষ বার নামার দিন। ইডেন গ্যালারি সে দিন খুব কাছ থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সুযোগ পেয়েছিল, মহানায়ককে বলতে শুনেছিল মাইক্রোফোন হাতে শহর নিয়ে তাঁর আবেগের কথা।

চৌত্রিশ হাজার গোলাপের মালা সচিনকে। বৃহস্পতিবার শহরের এক অনুষ্ঠানে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

চৌত্রিশ হাজার গোলাপের মালা সচিনকে। বৃহস্পতিবার শহরের এক অনুষ্ঠানে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪০
Share: Save:

‘কেমন আছ, কলকাতা? ভাল আছ?’

প্রায় তেরো মাস হবে। তেরো মাস আগে শহর হদয় থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল শেষ বার। ইডেনে তাঁর দেশের জার্সিতে শেষ বার নামার দিন। ইডেন গ্যালারি সে দিন খুব কাছ থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সুযোগ পেয়েছিল, মহানায়ককে বলতে শুনেছিল মাইক্রোফোন হাতে শহর নিয়ে তাঁর আবেগের কথা।

তেরো মাস পরেও সচিন রমেশ তেন্ডুলকর দেখলেন, তাঁকে চর্মচক্ষে দেখলে ছাদ থেকে এখনও লোক ঝোলে। ব্যাট হাতে নেই আর? নিকুচি করেছে। ক্রিকেট-কফিনে বছরখানেক আগে তালাচাবি— ফুঃ। উল্টে সমবেত চিত্‌কারে কর্ণগহ্বর ফালাফালা। আইএসএল উদ্বোধনীতে শহরে এসেছিলেন সচিন। কিন্তু এত কাছাকাছি আসেননি। মাইক্রোফোন হাতে তাঁকে কিছু বলতে শোনেনি কলকাতা।

আজ সেখানে বাংলা বললেন!

বৃহস্পতিবার সাত সকালে এয়ারপোর্ট চত্ত্বরে এক অনুষ্ঠানে যখন তাঁর সশরীর আবির্ভাব ঘটল, শহরের ক্রীড়াআবহের প্রেক্ষাপটটা একটু অদ্ভুত। আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে সচিন রমেশ তেন্ডুলকরেরই কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ঘরের ছেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের টিম আটলেটিকো দে কলকাতা। নামবে, আইএসএল ফাইনালে। বাইশ গজে লোকগাথার সচিন-সৌরভ জুটি নয়। এ বার সচিন বনাম সৌরভ।

শহর ফুটবল-জ্বরে পুড়ছে। সচিন— আপনি ভুগছেন না?

আনন্দবাজারের প্রশ্নে সচিন বললেন, “এটা তো অন্য মঞ্চ। খেলাধুলোর প্রসঙ্গ তাই এখানে নয়। শুধু এটা বলতে চাই যে, কলকাতা আজ পর্যন্ত যে ভাবে আমাকে ভালবেসেছে, যে ভাবে আমার ভাল চেয়েছে, সেটা যেন সব সময় থাকে। সব পরিস্থিতিতে থাকে।” বোঝা গেল, মিডিয়া যতই আইএসএল ফাইনালে সচিন বনাম সৌরভ নিয়ে ঝুলোঝুলি করুক, তিনি আপাতত ও সবে নেই। ‘ভারতরত্ন’ পাওয়ার পর এই প্রথম শহরের কোনও অনুষ্ঠানে সরকারি ভাবে তিনি এসেছেন। আবেগের শহরকে ছুঁতে এসেছেন। ছুঁয়ে বেরিয়ে যাবেন।

আর উচ্ছ্বাসের ঢেউগুলোও উঠল বটে এক-একটা। রাজারহাটের নেতাজি সংঘ ক্লাবের উদ্যোগে রবীন্দ্র সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনে চৌত্রিশ হাজার গোলাপের মালা এল লিটল মাস্টারকে বরণের জন্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রখ্যাত মরাঠির রানসংখ্যাকে মনে পড়িয়ে দিয়ে। সোনার মুকুট দেওয়া হল। সচিন যা দেখে হাসতে হাসতে বলে ফেললেন, “মুকুট নয়। আমাকে মনে রাখবেন, ওটাই যথেষ্ট।”

সেই ’৯০ সাল থেকে ইডেনে আসছেন তিনি। কিন্তু শহরের উন্মাদনা তাঁকে আজও অবাক করে। “আসলে ধন্যবাদ দিলেও কম দেওয়া হয়। ক্রিকেট খেলতে এখানে বহু বার এসেছি। আর প্রত্যেক বার অসাধারণ সব মুহূর্ত নিয়ে ফিরে গিয়েছি। আপনারা প্রত্যেক বার আমাকে সমর্থন করেছেন। আমার জন্য চিত্‌কার করেছেন। আর বলি, আপনাদের শহরেরও কিন্তু নায়ক ক্রীড়াবিদ আছে,” বলে মঞ্চে বসা সাঁতারের মাসুদ-উর-রহমানকে দেখিয়ে মাইকের সামনে আবার, “ইনি তো ইংলিশ চ্যানেল পার করেছেন। আসলে ভারত এখন সব ধরণের খেলাধুলোয় প্রচুর উন্নতি করছে। সাঁতার, তিরন্দাজি কোনটা নেই?” বলতে-বলতেই খেয়াল হল কিছু অটোগ্রাফ-বুভুক্ষু কচিকাঁচা প্রবল বাধা পাচ্ছে নিরাপত্তারক্ষীদের থেকে। বক্তব্য শেষ করে সচিন নিজেই এগিয়ে গেলে। বলে ফেললেন, ওদের আসতে দিন না। মহানায়কের মহানুভবতায় আবার হর্ষধ্বনি। উত্তুঙ্গ হাততালির ঝোড়ো আওয়াজ।

আধ ঘণ্টার উপস্থিতিতে কোনও গ্রেগ চ্যাপেল প্রসঙ্গ ওঠেনি। অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের দাপুটে ক্রিকেটের প্রসঙ্গ ওঠেনি। ভুল। সচিন সেই সুযোগই কাউকে দেননি। বরং আইএসএল প্রসঙ্গে বিশদে না গেলেও তাঁর কথাবার্তা, কলকাতাকে নিজের শ্রদ্ধাজ্ঞাপণ দেখলে মনে হবে সুক্ষ্মভাবে ফাইনালের আগে বোধহয় শহরের আর্শীবাদও নিয়েও চলে গেলেন। আবেগের শহরও তাঁকে একটা ব্যাপার বুঝিয়ে দিল। বোঝালো, আগামী শনিবার মুম্বইয়ে যা-ই হোক, আবেগের প্রশ্নে তাঁর স্থান এখানে একই রকম থাকবে। ঠিক প্রিয় ‘দাদা’-র মতো।

অটুট এবং অবিনশ্বর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajarshi gangopadhyay sachin isl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE