Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘ইশান্তদের দেখে গ্যাটিংয়ের সামনে নাচটা মনে পড়ছিল’

লর্ডস, ১০ জুন, ১৯৮৬। লর্ডস, ২১ জুলাই, ২০১৪। আঠাশ বছর আগে যিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে তার গর্বের এক টুকরো হীরকখণ্ড উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি এক জন পেসার। তাঁরও পদবি শর্মা। সাতটা নয়, ছ’টা উইকেট ছিল তাঁর সে দিন। আঠাশ বছর পর ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও এক গৌরবের মুহূর্ত দিয়ে গেলেন যিনি, তিনি নিলেন সাত, তিনিও এক জন পেসার। আর কী আশ্চর্য, তাঁরও পদবি শর্মা!

লর্ডসে ইশান্ত।

লর্ডসে ইশান্ত।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

লর্ডস, ১০ জুন, ১৯৮৬।

লর্ডস, ২১ জুলাই, ২০১৪।

আঠাশ বছর আগে যিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে তার গর্বের এক টুকরো হীরকখণ্ড উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি এক জন পেসার। তাঁরও পদবি শর্মা। সাতটা নয়, ছ’টা উইকেট ছিল তাঁর সে দিন।

আঠাশ বছর পর ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও এক গৌরবের মুহূর্ত দিয়ে গেলেন যিনি, তিনি নিলেন সাত, তিনিও এক জন পেসার। আর কী আশ্চর্য, তাঁরও পদবি শর্মা!

চেতন এবং ইশান্ত।

পার্থক্যের মধ্যে, ইশান্ত দিল্লি-জাত। চেতন পঞ্জাবি। আর পূর্বসুরির একটা কম।

সোমবার লর্ডসে যখন ইশান্ত পরের পর শর্ট দিয়ে দফারফা করে ছাড়ছেন ইংরেজ ব্যাটিংয়ের, টিভিতে সেটা দেখছিলেন চেতন। দেখতে দেখতে মাঝে মাঝেই মনে পড়ে গিয়েছে আঠাশ বছর আগের লর্ডস, মাইক গ্যাটিং-ডেভিড গাওয়ারদের সামনে তাঁর নাচ। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আন্দাজ করার চেষ্টা করেছেন, ইশান্ত-ভুবনেশ্বরদের উৎসবটা আজ কোন পর্যায়ে যেতে পারে! অনুভূতি কতটা সুখকর হতে পারে।

“লর্ডসে যে কোনও তরুণ ক্রিকেটারের ঢোকাটাই একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। স্টেডিয়ামে ঢুকলেই মনে হবে, আমি পারব তো এখানে একটা কীর্তি রেখে যেতে? পাকাপকি ভাবে এখানে উঠে পড়বে তো আমার নাম? ’৮৬-তে যখন নেমেছিলাম, আমার তো সে রকমই মনে হচ্ছিল। ওই ড্রেসিংরুম, স্লোপ-টা...ওফ্” টিভি শো-য়ে ঢোকার আগে ফোনে বলছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় পেসার। সরি, সে দিনের মহানায়ক। যিনি সোমবার লর্ডসে সশরীর উপস্থিত না থেকেও বোধহয় মনে মনে উপস্থিত হয়ে পড়লেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ড্রেসিংরুমে!

“সত্যি বলতে কী, আজ যখন ইশান্তরা টেস্ট জিতে আনন্দ করছিল, ভুবিকে ও ভাবে প্রাণখুলে হাসতে দেখছিলাম, তাতে আঠাশ বছর আগের দিনটা মনে না পড়াই বোধহয় অস্বাভাবিক। ওদের দেখে তো মাইক গ্যাটিংয়ের সামনে আমাদের নাচটা মনে পড়ে যাচ্ছিল,” বলে একটু থেমে আবার বলে ফেললেন, “লোকে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল আমাদের উপর। আসলে সে বারের ইংল্যান্ড টিমটা খুব ভাল ছিল। গ্যাটিং, গাওয়ার, গুচ কে নেই?”


চেতন শর্মা।

বর্তমান ইংল্যান্ড টিম যা-ই হোক, চেতনের মনে হচ্ছে এ দিনের জয়টাও ভারতীয় ক্রিকেটে সমান প্রভাব বিস্তার করবে। “বুঝতে হবে যে, ইংল্যান্ড টিম যদি ভাঙাগড়ার মধ্যে দিয়ে যায়, তা হলে ভারতও যাচ্ছে। অর্ধেকের বেশি নতুন ছেলে। ইংল্যান্ডে প্রথম বার খেলছে। টিমটার একমাত্র সমস্যা ছিল বোলিং। কিন্তু বোলাররা সবাই মিলে পারফর্ম করে দিল। ভুবির অবদান যতটা, ইশান্তেরও ততটা। তবে হ্যাঁ, আজ ইশান্তই বস ছিল। সে দিন যেমন আমি ছিলাম। সাতটা নিয়েছে, আবার কী?”

তা হলে দুই ভিন্ন প্রজন্মের দুই ‘বসে’র মধ্যে কে এগিয়ে? হাসতে শুরু করেন চেতন। “ও ভাবে তো বলা যায় না। দু’টো আলাদা সময়, আলাদা টিম। কিন্তু একটা জিনিস দেখে অবাক হলাম। ইশান্তের আগ্রাসন। গত দু’তিনটে সিরিজে এতটা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে কোনও ভারতীয় পেসারকে আমি বল করতে দেখিনি,” বলছিলেন তিনি। “দেখুন, এর পর ইংল্যান্ডের ফিরে আসা অসম্ভব। সিরিজটা ভারতই জিতবে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে, ইশান্ত এ বার নিয়মিত উইকেট নিতে শুরু করেছে। প্রত্যেকটা টিমের বোলিং ইউনিটে এক জন লিডার থাকে। আমাদের সময় কপিল দেব ছিল। জাহির না থাকায় লিডারের দায়িত্বটা এখন ইশান্তের। ভুবি, শামিদের সামনে উদাহরণ হিসেবে নিজেকে পেশ করছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেকনিক, স্কিল নয়, আয়ত্ত করতে হয় সঠিক মানসিকতা। ইশান্ত যেটা এনেছে। খুনে মনোভাব। শুনলাম ধোনি ওকে বলেছিল শর্ট করতে। কিন্তু ও ঝিমিয়ে থাকলে সেটা সম্ভব হত না।”

কিন্তু এমন আগ্রাসন আমদানি সম্ভব হল কী ভাবে?

সঠিক উত্তর নেই। নয়াদিল্লি থেকে ইশান্তের ছোটবেলার কোচ শ্রাবণ কুমার মনে করিয়ে দিলেন, ইশান্তকে নাকি ছোট থেকেই কিছু শেখাতে সময় লাগত না। দু’এক বার বললেই ধরে ফেলতেন ইশান্ত। রান-আপ নিয়ে সমস্যা এ ভাবেই দ্রুত মিটেছিল, মিটেছিল বল ছাড়ার সময় কব্জির পজিশনের গণ্ডগোল।

আগ্রাসন নিয়েও কেউ ইশান্তকে দু’একটা কথা বলেছিলেন হয়তো!

ইশান্তের টুকিটাকি

• ২০০৭-এ মিরপুরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক থেকে বিদেশের মাঠে ভারতের জেতা ৫ টেস্টে ইশান্তের মোট উইকেট ২২।

• ২০১৪-এ সেরা টেস্ট পেসারদের মধ্যে মিচেল জনসনের ৪ টেস্টে ২৮, এরাঙ্গা-র (শ্রীলঙ্কা) ৭ টেস্টে ২৮, অ্যান্ডারসনের ৫ টেস্টে ২৪ উইকেটের পাশে ইশান্তের ৪ টেস্টে ২৫ উইকেট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE