বিস্ময়। ছবি: এএফপি
মহাসুযোগ থাকলেও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে নেটের দু’দিকেই ভারতীয় টেনিস তারকা দেখতে পাওয়ার মতো অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা শেষমেশ বাস্তব হল না! অস্ট্রেলীয় ওপেন মিক্সড ডাবলস সেমিফাইনালে মাদেনোভিচ-নেস্টর জুটির কাছে শীর্ষ বাছাই সানিয়া মির্জা-ব্রুনো সুয়ারেজ সুপার টাইব্রেকে হেরে বসায়। ৬-৩, ২-৬, ৮-১০। কিন্তু রবিবার মেলবোর্ন পার্কে নতুন বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামের শেষ দিনেও রড লেভার সেন্টার কোর্টে এক ভারতীয়র উজ্জ্বল উপস্থিতি থাকতে চলেছে। লিয়েন্ডার আদ্রিয়ান পেজ!
একচল্লিশেও যিনি একটা গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোনও এক বিভাগের ফাইনালে নামছেন! মিক্সড ডাবলস সেমিফাইনালে আজ লিয়েন্ডার-মার্টিনা হিঙ্গিসের সপ্তম বাছাই ইন্দো-সুইস জুটি স্ট্রেট সেটে তাইপে-উরুগুয়ে জুড়ি সু শিয়ে-পাবলো কুয়েভাসকে হারিয়ে প্রথম কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে উঠল। ৭-৫, ৬-৪। যে ম্যাচে লিয়েন্ডারের একটা অবিশ্বাস্য রিটার্নকে অস্ট্রেলীয় ওপেনের সরকারি ওয়েবসাইটে সম্ভাব্য ‘শট অব দ্য টুর্নামেন্ট’ বলা হচ্ছে! যার একটা পোশাকি নামও দেওয়া হয়েছে—‘বিহাইন্ড দ্য ব্যাকভলি’।
প্রথম সেটের আট নম্বর গেমে শিয়ে একটা রিটার্ন মারেন নেটের সামনে দাঁড়ানো লিয়েন্ডারের দিকে। বল ডান হাতি লিয়েন্ডারের বাঁ দিকে যাচ্ছিল। কার্যত বিপক্ষের উইনার। কিন্তু এই বয়সেও অবিশ্বাস্য রিফ্লেক্স আর অসাধারণ অনুমানক্ষমতা দেখিয়ে লিয়েন্ডার র্যাকেটটাকে পিছন থেকে এনে ড্রপভলিতে পাল্টা রিটার্ন মারেন। যার এক শট পরেই ওই ২১ স্ট্রোকের ম্যারাথন পয়েন্টটা লিয়েন্ডারের মারা উইনারেই তাঁদের টিম জেতে। এবং ৫-৪ এগিয়ে শেষমেশ সেটটাও জিতে যায় টিম লিয়েন্ডারই। যে প্রসঙ্গে ম্যাচ শেষে কোর্টে দেওয়া টিভি ইন্টারভিউয়ে লিয়েন্ডারের সহাস্য প্রতিক্রিয়া, “আরে, এ বার তো এখানে প্রায় সবাই আমাকে বলছে, তোমাকে আগের চেয়ে কমবয়সি দেখাচ্ছে!”
আটটা ডাবলস গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের সঙ্গে হাফডজন মিক্সড ডাবলস গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জেতা লিয়েন্ডার এই প্রথম হিঙ্গিসকে নিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলছেন। কয়েক মাস আগেই দু’জনে একসঙ্গে মিক্সড ডাবলস খেলেছেন ওয়ার্ল্ড টিম টেনিসে। ওয়াশিংটন কাসলস টিমে। সেই বোঝাপড়া মেলবোর্ন পার্কে দারুণ ভাবে দু’জনের মধ্যে ফুটে উঠছে। ডাবলসে সাফল্যের মূল কথা হল, বিপক্ষ জুটির মধ্যে যত পারো ব্যবধান তৈরি করো আর সেই ফাঁকে রিটার্ন মারো। অব্যর্থ উইনার! এটিপি পেশাদার ট্যুরে লিয়েন্ডারের এটা রজত জয়ন্তী বর্ষ! পঁচিশ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ারের মতোই অবাক করা তথ্য, এর প্রত্যেকটা বছর কমপক্ষে একটা খেতাব জিতেছেন লিয়েন্ডার।
এ দিন কেরিয়ারের ১৫ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের দোরগোড়ায় পৌঁছে লিয়েন্ডার সেমিফাইনাল শেষে কোর্টেই ইন্টারভিউয়ে ভাষ্যকারকে একটা তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন। “ডাবলস জেতার মূলমন্ত্র যেমন কোর্টে অপোনেন্ট জুটির মধ্যে যত পারো ফাঁকফোকর তৈরি করো আর সেখানে রিটার্ন মেরে পয়েন্ট জেতো, তেমন নিজেদের জুটির মধ্যে একচুলও ব্যবধান যাতে না থাকে তার সফল রূপায়ণ করতে হয়। মার্টিনা (হিঙ্গিস) আর এক মার্টিনার (নাভ্রাতিলোভা) মতোই শুধু দুর্দান্ত প্লেয়ারই নয়, দুর্দান্ত মানুষও। কোর্টে আমরা মজা করি, খেলাটাকে উপভোগ করি, তাই জিতিও। মেলবোর্ন পার্ক ওর সেরা গ্র্যান্ড স্ল্যাম ভূমি। ওর চোদ্দোটা গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে আটটাই জেতা এখানে। তিনটে সিঙ্গলস, পাঁচটা ডাবলস। মার্টিনা অবসর ভেঙে কোর্টে ফেরার পর প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম পাবে যদি রবিবার আমাদের টিম মিক্সড ডাবলস ফাইনাল জেতে। মার্টিনা, আমি কথা দিচ্ছি তোমার স্বপ্ন সফল করতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।” স্টেডিয়ামে হাততালির ঝড় বয়ে যায় এই কথায়।
আপামর ভারতীয় টেনিসপ্রেমী আবার এখন আপ্রাণ প্রার্থনারতদুই ভারতীয়ের স্বপ্নের গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল না হোক, লিয়েন্ডার পেজের স্বপ্ন যেন সফল হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy