পারলে কেঁদে ফেলেন সৌরাশিস লাহিড়ী। ফোনের ওপার থেকে কোনওমতে বলছেন, “মনে হচ্ছিল ক্রিজের উল্টো দিকে আমার হাত-পা বেঁধে কেউ ফেলে রেখেছে। একটা সিঙ্গলস কেউ দিল না।”
অশোক মলহোত্র জুনিয়রদের নিয়ে বিরক্ত, ক্রুদ্ধ। “প্রমাণ হয়ে গেল, জুনিয়রররা কিছু করে না। জেতায় সিনিয়ররাই।”
সুদীপ চট্টোপাধ্যায় কেমন যেন নিষ্প্রভ। ৬৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেও লাভ হল না। সন্ধেয় ফোনে ধরা হলে বিড়বিড় করতে শোনা গেল, “বিনির স্লোয়ারটা বুঝতেই পারলাম না। উচিত ছিল জিতিয়ে ফেরা।”
অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল ক্ষিপ্ত বললেও কম বলা হয়। আফশোস, কেন আরও উপরে ব্যাট করলেন না। ড্রেসিংরুমে ম্যাচ শেষে জুনিয়রদের তুলোধোনা করেছেন বলে শোনা গেল। “বলব না? দেড়খানা প্লেয়ার দিয়ে আর কত দিন চলবে?”
আফশোস, ক্রোধের যথেষ্ট যুক্তি আছে। রবিবারের বিজয় হাজারে সেমিফাইনালের আগে বাংলা কম ম্যাচ হারেনি। কিন্তু এত লজ্জাজনক হার, জুনিয়র-সিনিয়র নির্বিশেষে এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা শেষ কবে দেখিয়েছে বাংলা? কর্নাটক আগামী মঙ্গলবার ফাইনাল খেলবে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে। রবিন উথাপ্পা-মণীশ পাণ্ডেরা তার জন্য ধন্যবাদ দিতে পারেন লক্ষ্মীদের। ম্যাচটা কর্নাটক জেতেনি, বাংলা হেরেছে।
ব্যাখ্যাতীত সব পারফরম্যান্স! ১০ বলে ১০ চাই, হাতে চার উইকেট। একটা সময় তো ১৪ বলে ১৩ চাই, হাতে পাঁচ উইকেট। সেখান থেকে কি না ছ’রানে হার! ছ’রানে শেষ পাঁচ উইকেট চলে যাওয়া! সায়নশেখর মণ্ডলদের মতো কেউ কেউ আলাদা প্রশংসার দাবি রাখেন! টি-টোয়েন্টির বাজারে ১২ বলে ১৩, হাতে তিন উইকেট এই অবস্থা থেকে দু’ভাবে হারা সম্ভব। এক, কল্পবিজ্ঞান। দুই, সায়নশেখরের মতো কেউ যদি ক্রিজে থাকেন। সিঙ্গলস নিলে যেখানে চলে, সেখানে তাঁরা ফুলটসে লোপ্পা তুলে যাবেন।
কর্নাটক শেষ দু’ওভারে ভাল বোলিং বাদ দিলে কিছু করেনি। বাকি ৯৮ ওভারের নিয়ন্ত্রণ বাংলার হাতে ছিল। তারা সময়-সময় যেমন গত বারের চ্যাম্পিয়নদের দাঁড়াতে দেয়নি, তেমনই সময়-সময় ‘আত্মহত্যা’-র বিভিন্ন নিদর্শন রেখে গিয়েছে। কর্নাটক ২৬৮ তুলেছিল। মোতেরার পিচে যা সহজলভ্য টার্গেট হওয়া উচিত। উল্টে বাংলা কী করল?
এক, কর্নাটককে শেষ উইকেটে ৪৬ তুলতে দিল। ২২২-৯ থেকে ২৬৮-তে শেষ করল কর্নাটক। দুই, মনোজ তিওয়ারি অদ্ভুত গুটিয়ে থাকলেন। ৯২ বলে করলেন ৫৬! যে ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা অনেকেই খুঁজে পাচ্ছেন না। ছ’টা ওভার নষ্ট করে শেষে রান আউট হয়েছেন মনোজ। তিন, অবিশ্বাস্য খারাপ লোয়ার মিডল অর্ডার। যারা সুদীপের যুদ্ধকে মর্যাদা দিল না, সৌরাশিসের প্রচেষ্টাকে না, ইরেশে সাক্সেনার দুর্দান্ত বোলিংকেও না। যাদের ব্যাটিং তালতলা মাঠে ঠিক আছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে নয়।
লক্ষ্মী পরে আফশোস করছিলেন যে, কর্নাটক খারাপ খেলেও ফাইনাল খেলবে। আর বাংলা প্লেনের টিকিট কাটবে। কিন্তু অধিনায়ক নিজেও দায়ী। মনোজ আউট হওয়ার পর তিনি পারতেন টিমকে জিতিয়ে ফেরাতে। বদলে স্টুয়ার্ট বিনির ভেতরে ঢুকে আসা বলে পা নড়ল না। সৌরাশিসের পাল্টা মার না থাকলে ম্যাচ অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়।
বাংলা আজকেরটা ধরে তিনটে টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলল। রঞ্জি, বিজয় হাজারে, আবার বিজয় হাজারে। তিনটেয় উঠে তিনটেয় হার। তার মধ্যে রবিবারেরটা এত কলঙ্ক, এত লজ্জা আনল যে ‘সেমিফাইনাল’ শুনলে টিমের কারও কারও মাথায় একটা শব্দই আসছে অভিশাপ!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কর্নাটক ২৬৮ (বিনি ৫০, বীর ৩-৭৬, ইরেশ ২-২৭)
বাংলা ২৬২ (সুদীপ ৬৭, মনোজ ৫৬, সৌরাশিস ২৪, মিঠুন ৩-৪০)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy