Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

কমনওয়েলথ ভারোত্তোলনে সফল হাওড়ার তিন

গত বছর বাজিমাত করেছিলেন সুখেন দে। এ বার সুখে ন তো বটেই, সঙ্গে অচিন্ত্য শিউলি এবং জ্যোতি মাল। বিশ্বের সামনে ফের একবার নিজেদের প্রমাণ করলেন হাওড়ার ভারোত্তোলকেরা।

ভিকট্রি স্ট্যান্ডে সুখেন দে (মাঝখানে)। -নিজস্ব চিত্র।

ভিকট্রি স্ট্যান্ডে সুখেন দে (মাঝখানে)। -নিজস্ব চিত্র।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৫৯
Share: Save:

গত বছর বাজিমাত করেছিলেন সুখেন দে।

এ বার সুখে ন তো বটেই, সঙ্গে অচিন্ত্য শিউলি এবং জ্যোতি মাল। বিশ্বের সামনে ফের একবার নিজেদের প্রমাণ করলেন হাওড়ার ভারোত্তোলকেরা।

২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে ভারোত্তোলনে সোনা পেয়েছিলেন আন্দুল পুইল্যার বাসিন্দা, সেনাবাহিনীতে কর্মরত সুখেন। সোমবার থেকে পুণেতে শুরু হওয়া ভারোত্তোলন কমনওয়েলথে ৫৬ কেজির সিনিয়র বিভাগে ফের সোনা জিতলেন তিনি। পদকজয়ীদের তালিকায় নাম তুলেছেন পাঁচলার দেউলপুরের অচিন্ত্য শিউলি এবং জ্যোতি মালও। ৫৬ কেজি ইউথ বিভাগে রুপো পেয়েছে বছর ষোলোর অচিন্ত্য এবং সিনিয়র বিভাগে ৫৩ কেজিতে রুপো পেয়েছেন বছর কুড়ির জ্যোতি। ভারত-সহ মোট ২২টি দেশকে নিয়ে এই প্রতিযোগিতাটি চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

সুখেন, অচিন্ত্য এবং জ্যোতি— তিন জনেরই খেলা ছিল সোমবার। তিন জনেই সফল হলেন। তাঁদের আর খেলা নেই। মঙ্গলবার পর্যন্ত ইউথ, জুনিয়র, সিনিয়র বিভাগ মিলিয়ে ভারতের ঝুলিতে এসেছে দু’ডজনেরও বেশি পদক। এ দিন পুণে থেকে রাজ্য ভারোত্তোলন সংস্থার কর্তা রণজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতায় ভারতীয় দলে বাংলার তিন জন সুযোগ পেয়েছিলেন। তিন জনই হাওড়ার। এই ফলে আমরা গর্বিত।’’

ভারোত্তোলনের ইতিহাসে হাওড়া বরাবরই বাংলা তথা ভারতের অন্যতম ‘সাপ্লাই লাইন’। সুখেন দে’র আগে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এশিয়ান ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় রুপো পেয়েছিলেন সাঁকরাইলের মাশিলা গ্রামের মেয়ে ছায়া আদক। জেলা ভারোত্তোলন সংস্থার দাবি, তিনিই প্রথম বাঙালি মহিলা, যিনি ভারোত্তোলনের আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে পদক আনেন।

জ্যোতি মালের আন্তর্জাতিক সাফল্যও এই প্রথম নয়। বছর পাঁচেক আগে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সাব-জুনিয়র ভারোত্তোলনে রুপো পেয়েছিলেন তিনি। রাজ্য ও জেলা স্তরের প্রতিযোগিতায় ভাল ফল করেছিল অচিন্ত্য। সম্প্রতি ৬৭তম রাজ্য ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতাতেও প্রায় সব ক’টি বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয় হাওড়ার ছেলেমেয়েরা।

ভারোত্তোলনে হাওড়ার এই সাফল্যের পিছনে স্কুল স্তরের প্রতিযোগিতাকেই মূল কারণ বলে মনে করছেন জেলা ভারোত্তোলন সংস্থার সম্পাদক বাবুলাল মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, জেলায় প্রতি বছর স্কুল স্তরের ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে যারা ভাল ফল করেন তাদের আলাদা করে অনুশীলনের ব্যবস্থা করা হয়। পুইল্যা কিশোর ব্যায়াম সমিতি, বিশ্বনাথ ব্যায়াম সমিতি-সহ জেলার কয়েকটি ব্যায়ামাগারে নিয়মিত ভারোত্তোলনের অনুশীলন হয়। সুখেন এখন বেশিরভাগ সময় বাংলার বাইরে থাকলেও গ্রামে এলে পুইল্যা কিশোর ব্যায়াম সমিতিতে অনুশীলন করেন।

অচিন্ত্য এবং জ্যোতি বছর খানেক আগে পর্যন্ত আন্দুলের বিশ্বনাথ ব্যায়াম সমিতিতে অনুশীলন করত। কিন্তু দূরত্বগত কারণে তাঁদের বাড়ির আশপাশের দু’টি ক্লাবে ভারোত্তোলন অনুশীলনের সরঞ্জাম পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তাঁরা সেখানেই অনুশীলন করেন। জেলা ভারোত্তোলন সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ভারোত্তোলনের সাব-জুনিয়র স্তরে পদক জেতা এবং সিনিয়র স্তরে পদক জেতার মধ্যে অনেক তফাত। তাই জ্যোতির এই সাফল্য আমাদের অনেক স্বপ্ন দেখাচ্ছে। অচিন্ত্যও যথেষ্ট প্রতিভাবান। আর সুখেনের কথা আলাদা করে কিছু বলার নেই।’’

তবে, প্রতিভা থাকলেও অর্থাভাব জ্যোতি এবং অচিন্ত্যের বড় সমস্যা। দেউলপুরে তাঁদের পাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, দু’জনেই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ভারোত্তোলনের অনুশীলন করতে যে ওষুধ, খাবারের প্রয়োজন, সেগুলি নিয়মিত জোগান দেওয়া তাঁদের পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি বলেন, ‘‘সুখেন বাংলার গর্ব। দেউলপুর আমার নিজের গ্রাম। তাই শিকড়ের টানে জ্যোতি ও অচিন্ত্যের জন্য আমার আলাদা অনুভূতি হচ্ছে। ওরা বাংলায় ফিরলে আমি দেখা করব। প্রয়োজনমতো সাহায্য করব।’’

অচিন্ত্য, জ্যোতির চোখে আরও পদক জয়ের স্বপ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE