Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ময়নাতদন্ত, দিন ২

গতিতে কামাল জাড্ডুর, বাউন্স নেই অশ্বিনের

সিরিজের স্রোতের বিপরীতে হাঁটছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরের বাইশ গজ। রাঁচী টেস্টের দ্বিতীয় দিনেও চলল ব্যাটসম্যানদের শাসন। দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে হাজির আনন্দবাজার স্পোর্টস ডেস্ক—

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ০৩:৪৭
Share: Save:

সিরিজের স্রোতের বিপরীতে হাঁটছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরের বাইশ গজ। রাঁচী টেস্টের দ্বিতীয় দিনেও চলল ব্যাটসম্যানদের শাসন। দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে হাজির আনন্দবাজার স্পোর্টস ডেস্ক—

• জাডেজার অস্ত্র গতি: ভারতের বাঁ হাতি স্পিনারের প্রধান অস্ত্র গতি। ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার গতিবেগে বল করছেন জাডেজা। যা স্পিনারদের ক্ষেত্রে বেশ ভাল। শুক্রবার স্বপ্নের বলে ফেরালেন প্যাট কামিন্স-কে। লেগস্টাম্প লাইনে পড়ে চকিতে টার্ন করে আঘাত করল অফস্টাম্পে। ১২৪ রানে নিলেন পাঁচ উইকেট। সিরিজে সব চেয়ে বেশি উইকেটের তালিকায় এক নম্বরে চলে গেলেন জাড্ডু। নামের পাশে ১৭ উইকেট। বিশ্লেষণ বলছে, রাঁচীর মন্থর, ব্যাটিং সহায়ক পিচে যখন বাকি স্পিনাররা সমস্যায় পড়েছেন, জাডেজার সাফল্যের মূলে বাড়তি গতি মেশাতে পারা।

• বাউন্স না থাকায় নির্বিষ: দু’দলের দুই প্রধান স্পিনার, আর. অশ্বিন ও নেথান লায়ন। দু’জনেই অফস্পিনার। কিন্তু রাঁচীর পিচে দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত ব্যর্থ। অশ্বিন ৩৪ ওভার বল করে পেলেন মাত্র একটি উইকেট। লায়ন ১১ ওভার বল করে দিনের শেষে উইকেটহীন। কেন ব্যর্থ তাঁরা? কারণ, রাঁচীর পিচে বাউন্সের অভাব। পুণে এবং বেঙ্গালুরু, দুই জায়গাতেই পিচে অসমান বাউন্স থাকলেও অফস্পিনারদের বল মাঝেমধ্যেই বেশ উচ্চতা নিয়েছে। অফস্পিনারদের সাফল্যের ক্ষেত্রে বাউন্স একটা বড় ব্যাপার। রাঁচীতে অশ্বিন এবং লায়নের গর্জন তাই শোনা যাচ্ছে না এখনও।

• মূর্তিমান মনঃসংযোগ: স্টিভ স্মিথের সঙ্গে সর্বকালের সব কিংবদন্তিদের তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিসংখ্যানের দিক থেকে ডন ব্র্যাডম্যান, এভার্টন উইকস, গ্যারি সোবার্স-দের ধরে টানাটানি শুরু করে দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। অনেকে কিন্তু সব চেয়ে বেশি মিল খুঁজে পাচ্ছেন সুনীল গাওস্করের সঙ্গে। ব্যাটিং ভঙ্গিতে নয়, মনঃসংযোগে। গাওস্কর-কে ‘মিস্টার কনসেনট্রেশন’ বলা হতো। স্মিথ-কেও বলা যায়। তাঁর ব্যাটিং দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, পৃথিবীতে অন্য সব কিছু ছেড়ে তিনি শুধু ব্যাটিং নিয়েই ভাবছেন। আধুনিক ক্রিকেটে এত গভীর ভাবে আর কোনও ব্যাটসম্যানকে মনঃসংযোগ করতে দেখা যায়নি। বেঙ্গালুরুতে ‘প্রতারণা’র অভিযোগ নিশ্চয়ই তাতিয়ে দিয়েছিল।

• ম্যাক্সির অন্য রূপ: তিনি বিখ্যাত ছক্কা মারার জন্য। কিন্তু প্রায় হারিয়ে যাওয়া ক্রিকেট কেরিয়ারকে ফের বাঁচিয়ে তুলতে অন্য এক অবতারে হাজির হলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তাঁর ১৮৫ বলে ১০৪ রানের সংযমী ইনিংস না থাকলে অস্ট্রেলিয়া এত বড় রান তুলে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে না। উল্টো দিক থেকে স্মিথ সারাক্ষণ তাঁকে আগলে নিয়ে চললেন। নিশ্চয়ই বোঝাচ্ছিলেন, উল্টোপাল্টা শট খেলে উইকেট ছুড়ে দিও না। ম্যাক্সি কিন্তু কথা শুনেছেন। তবে দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই উমেশ যাদবকে খেলতে গিয়ে তাঁর ব্যাট ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যায়। যা নিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি হল যে, রক্ষণাত্মক শট খেলতে গিয়েও কী ভাবে ব্যাট ভেঙে যেতে পারে। উমেশের বলটিও এক্সপ্রেস গতির ছিল না।

আরও পড়ুন: ম্যাক্সওয়েল বলে গেলেন, শেষের দিকে বল ঘুরছিল

• স্মিথ বনাম ভারত: কোহালিদের বিরুদ্ধে টেস্টে এখন স্মিথের ব্যাটিং গড় ৯১.৪২। মোট ১৭ ইনিংসে হয়ে গেল ছ’টি সেঞ্চুরি। শুক্রবারও করে গেলেন ১৭৮ অপরাজিত। ভারতীয় বোলাররা তাঁর উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর এখন ভারতীয় শিবিরের কাছেই অজানা। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, স্মিথকে নিয়ে অনিল কুম্বলে-রাও প্লট হারিয়ে ফেলেছেন। বেঙ্গালুরুতে দু’ভাবে স্মিথকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছিল ভারত। স্লেজিং করে তাঁর মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটানো। এবং, অদ্ভুত স্টান্সের জন্য উমেশ যাদব এবং ইশান্ত শর্মাকে দিয়ে ভিতরে আসা বল করিয়ে যাওয়া। তাতে ফলও মিলেছিল। কিন্তু এখানে কোহালি মাঠের বাইরে থাকায় আগ্রাসী শরীরী ভাষা দেখা যায়নি অজিঙ্ক রাহানের ভারতীয় দলে।

• জাড্ডু যখন ধোনি: রাঁচীতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে মনে করিয়ে দিলেন রবীন্দ্র জাডেজা। এমনিতেই তিনি ভারতীয় শিবিরের নায়ক পাঁচ উইকেট নিয়ে। তার ওপর আবার ধোনির কায়দায় রান আউট করে হইচই ফেলে দিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে বাউন্ডারি লাইন থেকে থ্রো ধরে উইকেটের দিকে পিঠ ফিরে থাকা অবস্থাতেই হাত ঘুরিয়ে বল ছুড়ে রান আউট করে দিয়েছিলেন ধোনি। শুক্রবার জশ হেজ্‌লউড-কে ফিরিয়ে দিলেন জাড্ডু। তিনি নিজেই তখন বল করছিলেন। বাউন্ডারি লাইন থেকে থ্রো ছিল কে. এল. রাহুলের। উইকেটের দিকে পিঠ ঘুরিয়ে থাকা জাডেজা বল পুরোপুরি না ধরে হাত ঘুরিয়ে স্টাম্পে মারেন।

• ম্যাচ ড্রয়ের দিকে কি না: দ্বিতীয় দিনের শেষে জনপ্রিয় পূর্বাভাস, সিরিজের প্রথম ড্র হতে যাচ্ছে ধোনির শহরে। সত্যিই কি তা-ই? না কি দুর্ধর্ষ এক থ্রিলার অপেক্ষা করছে? ভারতে এসে সম্প্রতি ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানের বেশি তুলেও টেস্ট হেরেছে। কোহালির ডাবল সেঞ্চুরিতে সেই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৬০০ রানের ওপর তোলে ভারত। কে বলতে পারে এখানে তা হবে না? আর ভারতীয় পিচে পরিস্থিতি আমূল বদলাতে নেয় মাত্র দু’তিন ওভার। বহু বার এমন নাটকীয় পট-পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। ধোনির শহরে তাই পিকচার অভি বাকি হ্যায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE