Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

গার্সিয়ার মতো অনেক ফুটবলারই তো খেলছে, কটাক্ষ দেল পিয়েরোর

ইতালিকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। জুভেন্তাসকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব এনে দিয়েছেন। ক্লাবের হয়ে রেকর্ড সংখ্যক ২৯০ গোল আছে তাঁর। জুভেন্তাসে খেলার সময় গড়াপেটা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিল তাঁর দল। সেই প্রশ্ন তুললে চুপ করে থাকেন। শেষ খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এফ সি-তে। নিজের সেরা সময় ফেলে এলেও মেজাজটা অবশ্য আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। চলাফেরায় এখনও সেই রাজকীয় ‘আমি’ ভাব। বিতর্কিত প্রশ্ন হলে রেগে যান। তাকান কড়া চোখে।

সোচ্চার। শনিবার দেল পিয়েরো। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

সোচ্চার। শনিবার দেল পিয়েরো। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রতন চক্রবর্তী ও সোহম দে
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৫
Share: Save:

ইতালিকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। জুভেন্তাসকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব এনে দিয়েছেন। ক্লাবের হয়ে রেকর্ড সংখ্যক ২৯০ গোল আছে তাঁর। জুভেন্তাসে খেলার সময় গড়াপেটা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিল তাঁর দল। সেই প্রশ্ন তুললে চুপ করে থাকেন। শেষ খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এফ সি-তে। নিজের সেরা সময় ফেলে এলেও মেজাজটা অবশ্য আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। চলাফেরায় এখনও সেই রাজকীয় ‘আমি’ ভাব। বিতর্কিত প্রশ্ন হলে রেগে যান। তাকান কড়া চোখে। আবার মেজাজ ভাল থাকলে ফটোগ্রাফারকে ড্রিবল করে ভড়কে দেওয়ার চেষ্টা করেন! সেই আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো শনিবার দুপুরে টিম হোটেলের লবিতে বসে একান্ত সাক্ষাত্‌কার দিলেন আনন্দবাজারকে।

প্রশ্ন: মেসি, মারাদোনার মতো এখন কলকাতার ঘরে ঘরে আপনাকে নিয়ে আলোচনা। অনুভূতিটা কেমন?
দেল পিয়েরো: এ বার নিয়ে দু’বার কলকাতায় এলাম। তা-ও আবার এক সপ্তাহের মধ্যে। এখানকার ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ দেখে আমি অবাক! মেসির সঙ্গে দু’একবার কথা হয়েছে। মারাদোনা তো বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার। ওর সঙ্গে আমার তুলনা হয় না। তবে কলকাতার ভালবাসায় বাড়তি মোটিভেশন পাচ্ছি। ভাল খেলার চেষ্টাটা আরও জেগে উঠছে।

প্র: কলকাতার এই ভালবাসা দেখে কি আপনার নিজেকে মেলে ধরার জেদটা আরও বেড়ে গিয়েছে?
দেল পিয়েরো: যুবভারতীর মতো বিশ্বের অন্যতম বড় স্টেডিয়ামে খেলতে নামব। ভাল খেলার চেষ্টা তো করতেই হবে। আটলেটিকো দে কলকাতা খুব ভাল ফর্মে আছে। ওদের সমর্থকরা যখন চিত্‌কার করবে তখন ভাল খেলাটা কঠিন হবে। তবে আমি একশো শতাংশ দিতে তৈরি।

প্র: আপনি তো গোলমেশিন। কলকাতা এখনও কোনও গোল খায়নি। যুবভারতীতে গোল করতে পারলে নিশ্চয়ই খুশি হবেন?
দেল পিয়েরো: (একটু রেগে) আমার গোল করাটা বেশি জরুরি না আমার দলের জেতাটা? আমাদের লক্ষ্য প্রথমে তিন পয়েন্ট, তার পর ড্র, তার পর...। (চুপ করে গেলেন)

প্র: বিশ্বকাপ থেকে ইউরো কাপ। যে কোনও ম্যাচের আগে আপনি যখনই সাক্ষাত্‌কার দিয়েছেন তখনই বলেছেন, গোল করাই প্রধান ও প্রথম টার্গেট। আইএসএলে সেটা বদলে গেল?
দেল পিয়েরো: না, তা নয়। দলগত সমর্থন না থাকলে কেউ গোল করতে পারে না। আমার সব চেষ্টাই দলের জন্য। ব্যক্তিগত কোনও লক্ষ্য নেই। তবে আমি স্ট্রাইকার, সব সময়ই গোল করে দলকে জেতাতে চাই। সেই চেষ্টা থাকবে। মরসুমটা ভাল ভাবে শেষ করাই আমার লক্ষ্য।

প্র: কলকাতার ম্যাচ দেখেছেন?
দেল পিয়েরো: না, সে ভাবে দেখিনি। টিভিতে সামান্য কয়েক মিনিট দেখেছি। তবে ওরা পরপর দু’টো ম্যাচ জিতেছে। পাঁচ গোল করেছে। একটাও খায়নি। ভাল দল বলেই তো এই সাফল্য।

প্র: যাদের টপকে আপনাকে গোল করতে হবে সেই কলকাতার ডিফেন্স সম্পর্কে তা হলে কোনও ধারণাই নেই আপনার?
দেল পিয়েরো: ওদেরও কি আমাদের সম্পর্কে কোনও ধারণা আছে? সবে তো টুর্নামেন্ট শুরু হল। এখনও কে ভাল, কে খারাপ বোঝা মুশকিল। অন্য টিমের স্ট্র্যাটেজি কী হতে পারে সেটাও অনুমান করা কঠিন। সবই তো নতুন টিম। টুর্নামেন্ট আরও একটু গড়াক তার পর বোঝা যাবে কে ভাল, কে খারাপ।

প্র: ভারতীয় ফুটবলারদের কেমন দেখছেন? এ দেশের ফুটবল সম্পর্কে কী ধারণা হল?
দেল পিয়েরো: আমার টিমের বেশ কয়েক জন ভারতীয় ফুটবলারকে দেখে ভাল লাগল। ওদের শেখার, জানার চেষ্টা আছে। মাত্র ক’দিন হল এসেছি। এখনই ভারতের ফুটবল সম্পর্কে কিছু বলা ঠিক হবে না।

প্র: আপনি কি রবিবার শুরু থেকেই খেলবেন?
দেল পিয়েরো: জানি না। কোচই ঠিক করবেন কখন নামাবেন। প্রথম ম্যাচের আগে তো খুব বেশি অনুশীলন করিনি। হঠাত্‌-ই নেমে পড়েছিলাম। ম্যাচটা কিন্তু আমরা জিততেই পারতাম। আমি পুরো ফিট। কোচ যখন নামাবেন তখনই নামব।

প্র: দুপুরে খেলা। তা-ও আবার কৃত্রিম টার্ফে। অসুবিধা হবে না?
দেল পিয়েরো: অস্ট্রেলিয়ায় দু’বছর খেলেছি। ওদের লিগ পুরোটাই গরমে হয়। চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় খেলতে হয়েছে। পুরো মরসুম আমার জ্যাকেটটা আলমারিতেই থেকেছে। কিন্তু আইএসএলে এই সমস্যাটা শুধু আমাদের একার নয়। প্রতিটি দলের।

প্র: লুই গার্সিয়া তো গোল করে আপনার টিমকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে একবার ছিটকে দিয়েছিলেন। সেই গার্সিয়ার সঙ্গে আবার দেখা হবে। এ বার ফল কি উল্টো হবে?
দেল পিয়েরো: গার্সিয়া বড় ফুটবলার। কেউ খারাপ ফুটবলার হয়ে বার্সেলোনা, লিভারপুলের মতো টিমে খেলে না। ন’বছর আগে হলেও ম্যাচটার কথা এখনও মনে আছে। তবে আগে কী হয়েছে তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। আমরা কলকাতাকে হারানোর জন্য তৈরি হয়েই নামছি। আর শুধু গার্সিয়া কেন, আইএসএলে আরও অনেক বড় ফুটবলার আছে।

প্র: এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দামি ফুটবলার আপনি। এর জন্য কি বাড়তি চাপ অনুভব করছেন?
দেল পিয়েরো: জানি। সে জন্যই তো নিজেকে ফিট করে তুলছি। আমি বহুবার চোট পেয়েছি। আবার ফিরে এসে গোলও করেছি। এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দামি ফুটবলার হিসাবে একটা আলাদা দায়িত্ববোধ রয়েছে। দেখা যাক!

প্র: প্রথম ম্যাচ জেতেননি। আপনার টিম কি আই এস এল চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে?
দেল পিয়েরো: (উল্টো দিকে বসে থাকা ভাই কাম ম্যানেজারের দিকে কড়া চোখে তাকালেন) সেটা এখনই বলা কী করে সম্ভব? সবাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলতে চায়। কিন্তু লিগে দু’টো ম্যাচ জেতার পর বলা যায় না সে-ই চ্যাম্পিয়ন হবে।

প্র: আপনি জুভেন্তাসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। নিয়মিত গোলের এই ধারাবাহিকতা রেখে যাওয়ার পিছনে আসল রসায়ন কী?
দেল পিয়েরো: প্রতিটা ম্যাচের আগে গোলের প্রস্তুতি নিয়েছি। অনুশীলনে কখনও ফাঁকি দিইনি। সব সময় চেষ্টা করেছি জুভেন্তাস জার্সিতে নিজের সেরাটা দেওয়ার। চেষ্টা করেছি যাতে ফিট থাকি। ফুটবল ভালবাসি বলেই এত গোল করতে পেরেছি। এটাই আমার সাফল্যের রসায়ন।

প্র: যে ইতালীয় ফুটবলের সঙ্গে এত দিন যুক্ত ছিলেন, যে দেশকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছেন তার হাল তো খুবই খারাপ! কী হল আপনার দেশের?
দেল পিয়েরো: আমার মনে হয় ইতালীয় ফুটবল এখন একটা ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে চলছে। এটা ঠিক যে, ইপিএল, বুন্দেশলিগার দলগুলো খুবই শক্তিশালী। এদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু ইতালিতে ফুটবল মানেই আবেগ। তবে চেষ্টা চলছে উঠে দাঁড়ানোর। একটু সময় লাগবে।

পুনশ্চ: যুবভারতীতে শনিবার পুরে টিমের অনুশীলন শেষ হয়ে যাওয়ার পরও একাই গোলে বল মেরে গেলেন দেল পিয়েরো। কখনও গোলকিপার রেখে, কখনও ফাঁকা গোলে। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে ভলি মারলেন। অসাধারণ কিছু ফ্লিকও চোখ টানল। হাঁটু পর্যন্ত মোজা পরে নেমেছিলেন। যা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দিচ্ছিল। তবে হাঁটাচলা দেখে মনে হল পুরো ফিট নন এখনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE