একটা টেস্ট বাকি থাকতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়— বিরাট কোহলি আর ওর টিমের সব রকম প্রশংসাই প্রাপ্য। এই সিরিজে টার্নিং পিচ নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, হোম টিম নিজেদের পছন্দ মতো যে কোনও সুবিধে নিতে পারে। ভারতের পিচ সব সময়ই স্পিনারদের সাহায্য করে এসেছে। আর মাঝে মধ্যে টার্নিং ট্র্যাক তৈরি করার চেষ্টা করতে গিয়ে পিচ প্রস্তুতকারকদেরও স্পষ্ট ধারণা থাকে না যে, উইকেটে কতটা টার্ন থাকবে। কিউরেটর শুকনো, স্পিনিং ট্র্যাকের ভিত তৈরি করল। কিন্তু ম্যাচের পাঁচ দিনে সেটা কেমন দাঁড়াবে, বোলাররা কতটা স্পিন করাতে পারবে, সেগুলো কিউরেটরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ভারতের সঙ্গে উপমহাদেশের টিম, মানে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের সিরিজ থাকলে কিউরেটররা যে সব উইকেট তৈরি করেন, সেগুলো কম শুকনো থাকে। কারণ ওই টিমেও অনেক জাত স্পিনার রয়েছে। তাই বিদেশি দলদের মনে রাখতে হবে যে ওরা যখন ভারতে আসছে তখন টার্নিং উইকেটই পাবে। সিরিজের শেষ টেস্টটা দিল্লিতে আর দক্ষিণ আফ্রিকানদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, ওখানেও একই রকম সারফেস পাবে ওরা। আমার এটাও মনে হয় যে, স্পিন খেলার শিল্প পেস বোলিংয়ের মোকাবিলা করার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ভাল টিমের উচিত দুটোই সামলাতে শেখা। না হলে দেশে আর বিদেশের পরিবেশে পারফরম্যান্সের তফাতটা বেড়ে যেতে থাকবে। গত কয়েক বছর ধরেই কিন্তু এই ব্যাপারটা হয়ে আসছে।
সিরিজে আপাতত ব্যাটিং নিয়ে ভারতও বেশ কিছু কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। যার মূল কারণ হল দক্ষিণ আফ্রিকানদের দুর্দান্ত পেস বোলিং। কিন্তু পেসাররা ওদের যে সুবিধে করে দিচ্ছিল, তার ফায়দা তুলতে দু’দিক থেকে যে ভাল স্পিনার আনা দরকার ছিল, সেটা ওদের নেই। আর তাই ওরা বারবার ভারতকে ম্যাচে ফিরে আসতে দিয়েছে। এই কারণেই কয়েক বছর আগে ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ড সাফল্য পেয়েছিল। গ্রেম সোয়ান আর মন্টি পানেসার নামক দু’জন দুর্দান্ত স্পিনার ছিল ওদের টিমে। যারা দুটো দিক থেকে ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ তৈরি করে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের জীবন কঠিন করে তুলেছিল।
এই ধরনের পিচে দক্ষিণ আফ্রিকা একেবারে অনভিজ্ঞ। টিমের বেশির ভাগ প্লেয়ারই জীবনে কোনও দিন এ রকম শুকনো উইকেটে খেলেনি। এর আগে ওদের টিমে কালিস আর স্মিথ নামের একজোড়া দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান ছিল যারা টপ অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে বাকিদের উপর থেকে অনেকটা চাপ নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নিত। এই টিমের প্লেয়ারদের শট বাছাই দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ওরা কতটা অনভিজ্ঞ। তার উপর হাসিম আমলা আর ফাফ দু’প্লেসির ফর্মে না থাকাটাও ওদের ভোগান্তির একটা বড় কারণ। পুরো দায়িত্বটা একজনের উপর পড়ে গেল। এবি ডে’ভিলিয়ার্স। কিন্তু একটা টেস্ট সিরিজে মাত্র একজন ব্যাটসম্যানের উপর ভরসা করে কোনও টিম বাঁচতে পারে না। সে ব্যাটসম্যান যত দুর্ধর্ষই হোক না কেন।
দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের জীবন যে আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে, তার আর একটা কারণ হল রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অসামান্য বোলিং। গত এক বছর ধরেই ও ক্রমশ উন্নতি করেছে। এই অশ্বিন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত। আর এখন বিভিন্ন গতিতে বল করছে বলে ব্যাটসম্যান সব সময় ওর বৈচিত্র নিয়ে ধন্ধে থাকছে। রবীন্দ্র জাডেজা আর অমিত মিশ্রর কাছ থেকে ও খুব ভাল সমর্থনও পেয়েছে। এদের নিখুঁত ত্রয়ী দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটিংকে এক মুহূর্তের জন্যেও শান্তি দেয়নি।
‘জার্ডিনের মতো জবাব দিতে হবে কোহলিকেও’
তিরিশের দশকে ‘বডিলাইন’-এর জন্য যেমন ডগলাস জার্ডিনকে জবাব দিতে হয়েছিল, তেমনই ঘূর্ণি উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারানোর জন্যও জবাবদিহি করতে হবে বিরাট কোহলিকে— মন্তব্য বিষেণ সিংহ বেদীর। মোহালি ও নাগপুরে তিন দিনে টেস্ট জিতে ভারতের সিরিজ জয় নিয়ে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘এটা হোম অ্যাডভান্টেজ? আমি বিশ্বাস করি না। প্রথম দিন থেকেই পিচে বল ঘুরছে! কঠিন-বাউন্সে ভরা উইকেট বানাতে গেলে বিশেষ জ্ঞান আর মাটি লাগে। এই পিচে কোনওটাই ছিল না। সবচেয়ে বিস্ময়কর যে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট শশাঙ্ক মনোহর ও আইসিসি-র টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান অনিল কুম্বলের নাকের ডগায় এ সব হচ্ছে। এ জন্য কোহলিকে জার্ডিনের মতো জবাবদিহি করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy