Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চোখের সুখ দিতে না পারুক, মোরিনহো-অঙ্ক অনেক কিছু শেখাল

বয়স তখন নিজের কম থাকলেও সেই ছয়ের দশক থেকে দেখে আসছি বিশ্ব ফুটবলের বিভিন্ন দল নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কলকাতার ফুটবলরসিকদের মাতামাতি। কখনও সেটা স্যান্টোস, কখনও নাপোলি। ন’য়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সেই তালিকায় ঢুকে পড়ল বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ। কলকাতা যে দিন থেকে জর্জ বেস্টের নাম শুনেছে সে দিন থেকে হৃদয়ে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের নাম লিখে রেখেছে। ঠিক সে ভাবেই এক রোমাঞ্চপ্রিয় পর্তুগিজ কোচ হোসে মোরিনহোর হাত ধরে কলকাতার ‘জেন এক্স’ প্রজন্মে জায়গা করে নিয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ‘ব্লু আর্মি’ চেলসি।

মোরিনহোর রক্ষণে দাঁত ফোটাতে না পেরে হতাশায় মুখ ঢাকছেন আটলেটিকোর কোস্তা।

মোরিনহোর রক্ষণে দাঁত ফোটাতে না পেরে হতাশায় মুখ ঢাকছেন আটলেটিকোর কোস্তা।

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১২
Share: Save:

আটলেটিকো মাদ্রিদ-০

চেলসি-০

বয়স তখন নিজের কম থাকলেও সেই ছয়ের দশক থেকে দেখে আসছি বিশ্ব ফুটবলের বিভিন্ন দল নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কলকাতার ফুটবলরসিকদের মাতামাতি। কখনও সেটা স্যান্টোস, কখনও নাপোলি। ন’য়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সেই তালিকায় ঢুকে পড়ল বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ। কলকাতা যে দিন থেকে জর্জ বেস্টের নাম শুনেছে সে দিন থেকে হৃদয়ে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের নাম লিখে রেখেছে। ঠিক সে ভাবেই এক রোমাঞ্চপ্রিয় পর্তুগিজ কোচ হোসে মোরিনহোর হাত ধরে কলকাতার ‘জেন এক্স’ প্রজন্মে জায়গা করে নিয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ‘ব্লু আর্মি’ চেলসি।

এই তালিকায় নতুন জুড়েছে লাল-সাদা জার্সির আটলেটিকো মাদ্রিদ। নেপথ্যে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। আরও নিখুঁত ভাবে বলতে গেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যার হাত ধরেই দিয়েগো সিমিওনের দল টিআরপি বাড়াতে শুরু করেছে এই শহরে। লতায়-পাতায় একটা মিলও খুঁজে পাচ্ছি। আমার প্রিয় মোহনবাগান যে বছরে প্রথম স্বদেশি দল হিসেবে আইএফএ শিল্ড জিতে তার অস্তিত্বের নিশান পুঁতল, সেই ১৯১১ সাল থেকেই আটলেটিকোর ফুটবলারদের গায়ে লাল-সাদা জার্সি!

মারাদোনা, ক্রেসপোদের আর্জেন্তিনা দলে এক সময়ের সতীর্থ বর্তমান আটলেটিকো কোচ সিমিওনে। মোরিনহোর থেকে আমাদের মতো ফুটবল-বামন দেশের কোনও কোচ যদি তাঁর অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মনোভাব ধার করে থাকেন, তা হলে সিমিওনের থেকে নেওয়ার জিনিস হল ম্যাচের মধ্যে ওর ইনভলভ্মেন্ট। যে কারণে আর্জেন্তিনার ফুটবল মহলে ছোট থেকেই সিমিওনের আর এক নাম ‘শোলো’। মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম পর্বের ম্যাচেও সেটাই লক্ষ্য করছিলাম বার বার। আর এই জোশ অস্বাভাবিক নয়। দিয়েগো কোস্তারা মেসি-নেইমারের বার্সেলোনাকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে শেষ চারে উঠে এসেছে। চলতি মরসুমে লা-লিগাতেও ওরা এক নম্বরে এখন। তবে টিভিতে ম্যাচটা পুরো নব্বই মিনিট দেখার পর মনে হচ্ছে সিমিওনে বোধহয় বার্সা কোচ জেরার্দো মার্টিনো আর হোসে মোরিনহোকে একই দাঁড়িপাল্লায় ফেলে হোমওয়ার্ক করেছিলেন। না হলে এত ছোট ছোট পাস খেলে, গতিতে উইং দিয়ে ঝড় তুলেও হোম ম্যাচে গোল করতে পারল কোথায়? সুযোগ যে ওরা পায়নি তা নয়। কিন্তু অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল না খেয়ে ম্যাচটা অমীমাংসিত রেখে আগামী সপ্তাহে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে নামার আগে ‘অ্যাডভান্টেজ’ রইল মোরিনহোর পকেটেই। ফিরতি ম্যাচ এক গোলে জিতলেই ফাইনাল চলে যাবে চেলসি।

চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ছেন স্টপার জন টেরি ও চেলসি কিপার পের চেক। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

লা লিগায় কোচিং করানোর সুবাদে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী মোরিনহো জানেন আটলেটিকো এবং তাদের কোচ সিমিওনেকে। আটলেটিকোর বিরুদ্ধে ন’বারের সম্মুখসমরে আট বারই জিতেছেন তিনি। জানেন, শুরু থেকেই প্রতি ম্যাচে দিয়েগো কোস্তা, রাউল গার্সিয়ারা একটা ঝটকা দেয়। মোরিনহোও মঙ্গলবার রাতে তার পাল্টা দিলেন। কী করলেন? আটলেটিকো ফরোয়ার্ডদের নিজেদের ডিফেন্সিভ থার্ড থেকে দূরপাল্লার শট নিতে দিলেন না। ৪-৩-৩ ছকে শুরু করেও অ্যাশলে কোল, ডেভিড লুইজরা হয়ে যাচ্ছিল ৪-১-৪-১। ফলে আটলেটিকো ফরোয়ার্ডরা চেলসির গোলের সামনে গিয়ে আবিষ্কার করছিল টেরি, মিকেলদের পায়ের জঙ্গল। ব্যাক ফোর আর তার সামনে অনেকটা নীচে নেমে আসা তিন মিডিও। এ ভাবেই আটলেটিকোর ঘরের মাঠ ভিসেন্তে কালদেরন-এ মোরিনহো এলেন, দেখলেন এবং আটকে দিলেন সিমিওনের অশ্বমেধের ঘোড়া। চেলসির (২৪৪) দ্বিগুণ পাস (৫২০) খেলেও তাই ঘরের মাঠে জয় পেল না আটলেটিকো।

হ্যাজার্ড, এটোরা নেই। আটলেটিকো ছোট ছোট পাস খেলছে দেখে টেরি, ডেভিড লুইজদের লেলিয়ে দিয়ে কড়া ট্যাকলের রাস্তা নিয়েছিলেন ধুরন্ধর মোরিনহো। এতেই হয়রান হয়ে গোলের সামনে গিয়ে ফিনিশিংয়ে গণ্ডগোল করে ফেলল গার্সিয়া, কোকেরা। স্পেনের ক্লাবটির ঝকঝকে ফুটবল মাঝমাঠেই হাইজ্যাক করে শো-কেসের ভেতর পুরে দিলেন এ ভাবেই। রামিরেজ ধরল ফেলিপে লুইজকে। উইলিয়ান মার্ক করছিল হুয়ানফ্রানকে। ওদের হয়ে যা চেষ্টা করছিল গাবি। কিন্তু একা কতটা লড়বে? সিমিওনে কেন দাভিদ ভিয়াকে কোস্তার পার্টনার না বানিয়ে দিয়েগোকে নামিয়েছিলেন সেটাও বুঝতে পারিনি। মোরিনহো অক্টোপাসের মতো ওঁর ট্যাকটিক্সকে ধরে ফেলেছে বুঝে খেলাটা সুইচ ওভার করার তাসটাও ফেললেন না সিমিওনে। ফলে টেরি, কাহিলদের সুবিধা হচ্ছিল। এটাই মোরিনহো-ম্যাজিক।

আসলে খেলাটা ছিল কাউন্টার অ্যাটাক বনাম কাউন্টার অ্যাটাক। তাই ম্যাচটা চোখের সুখ দিতে পারেনি। কিন্তু মোরিনহোর অঙ্ক কষা ফুটবল অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে। আটলেটিকো আটকে গেল স্রেফ ওর এই ‘ক্যালকুলেটিভ’ ফুটবলের জন্যই। আর চেলসির ব্যাক ফোরও এই অঙ্ক কষা ফুটবল দিয়েই বিপক্ষের ত্রাস মরসুমে ৩৫ গোল করা দিয়েগো কোস্তাকে শুরু থেকেই কব্জা করে ফেলেছিল। কারণ ব্রাজিলজাত স্পেনের এই ফুটবলারটি কাউন্টার অ্যাটাক স্ট্রাইকার হিসেবে হয়তো দশে দশ পাবে। কিন্তু পেনাল্টি বক্স স্ট্রাইকার হিসেবে ওকে পাঁচের বেশি দিতে পারছি না।

এখন প্রশ্ন আগামী সপ্তাহে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসির ঘরের মাঠে কী হবে? মোরিনহো ওই ম্যাচে আবার পাবেন না ল্যাম্পার্ড, মিকেল, গোলকিপার পের চেক, স্টপার টেরিকে। তবে ইভানোভিচ, হ্যাজার্ড, এটো, শুর্লে, অস্কাররা দলে ঢুকবে। মন বলছে, ডেভিড লুইজ-রামিরেজ-উইলিয়ানদের ব্রাজিলীয় ত্রিভুজই হোম ম্যাচে মিডফিল্ড হতে চলেছে মোরিনহোর। যা কাজে লাগিয়ে এ বার গোলের জন্য ঝাঁপাবেন ফুটবল দুনিয়ার ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’।

অন্য দিকে আটলেটিকো তাদের অধিনায়ক গাবিকে পাবে না। সেই পেস ও মবিলিটি রয়েছে মারিও সুয়ারেজের খেলায়। সিমিওনের দলকে ফাইনালে যেতে হলে সুয়ারেজকে বাড়তি দায়িত্ব নিতেই হবে। তবে বিপক্ষ কোচটার নাম যেহেতু মোরিনহো তাই আমার বাজি চেলসি।

ছবি: এএফপি।

ফিরতি লড়াই স্ট্যামফোর্ডে বসে দেখবেন সৌরভ

আটলেটিকো মাদ্রিদের খেলা মানেই এখন টিভির সামনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আসন্ন ইন্ডিয়ান সুপার লিগে তাঁর দলের সঙ্গে যে হাত মিলিয়েছে স্পেনের এই বিখ্যাত ক্লাব। মঙ্গলবার রাতেও বসেছিলেন। তবে আগামী বুধবার আর টিভির সামনে নয়, একেবারে চেলসির হোম গ্রাউন্ড স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে বসে আটলেটিকোর খেলা দেখবেন বলে ঠিক করেছেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। বুধবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে সল্টলেকে ভিশন ২০২০ ক্যাম্পে আসার কথা থাকলেও মঙ্গলবার রাত জেগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল দেখতে ভোলেননি। এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে আগের রাতের ম্যাচ দেখা প্রসঙ্গে সৌরভের বক্তব্য, “ভীষণ উপভোগ করেছি ম্যাচটা। রিটার্ন লেগের ম্যাচ দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।” স্প্যানিশ ক্লাবের স্ট্রাইকার দিয়েগো কোস্তার কথা উল্লেখ করে সৌরভ বলেন, “কোস্তাকে আমাদের দলে আনব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু ওকে তো বোধহয় চেলসি নিয়ে নিচ্ছে। তাই আর বোধহয় হবে না।” কলকাতার টিমের নাম ও জার্সির রঙ-নকশা সবই ঠিক হয়ে গিয়েছে। সৌরভ নিজেই জানালেন এই খবর। তবে বললেন, “আমি এখন টিমের নাম পারব না। ৫ মে আটলেটিকোর কর্তারা শহরে আসছেন। হয়তো তার পরের দিন আপনাদের ডেকে জানিয়ে দেব।” ২০১৭-র যুব বিশ্বকাপের জন্য যুবভারতীর সংষ্কার শুরু হওয়ার কথা অক্টোবরে।

জিতল রিয়াল

আটলেটিকো মাদ্রিদ ঘরের মাঠের সুবিধা তুলতে না পারলেও, রিয়াল মাদ্রিদ সেই সুযোগ হাতছাড়া করল না। বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের প্রথম পর্বের ম্যাচে রবেন-রিবেরির বায়ার্ন মিউনিখকে ১-০ গোলে হারাল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দল। রিয়ালের একমাত্র গোলদাতা বেঞ্জিমা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

champions league
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE