Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ইডেনের দ্বিতীয় ইনিংসে ভিভিএস-মন্ত্র

টেকনিক নয়, জোর দাও মানসিকতায়

সেই ঐতিহাসিক ২৮১-র ইনিংসের পর নয়-নয় করে প্রায় সাড়ে তেরোটা বছর পার হয়ে গিয়েছে। তার পরেও ইডেনে চার-চারটি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন এবং সব ক’টাতেই নট আউট। সেই ভিভিএস লক্ষ্মণ আবার ইডেনে। তবে এ বার আর ব্যাট নয়। লাল কভারে মোড়া আই প্যাড হাতে। সাদা পোশাক, প্যাড-গ্লাভস-হেলমেট নয়, সাদা চেক শার্ট, ট্রাউজার্স, ডার্ক সান গ্লাসে। ইনি, অন্য লক্ষ্মণ। অচেনা লক্ষ্মণ।

ইডেনে নতুন ভূমিকায় লক্ষ্মণ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

ইডেনে নতুন ভূমিকায় লক্ষ্মণ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০৬
Share: Save:

সেই ঐতিহাসিক ২৮১-র ইনিংসের পর নয়-নয় করে প্রায় সাড়ে তেরোটা বছর পার হয়ে গিয়েছে। তার পরেও ইডেনে চার-চারটি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন এবং সব ক’টাতেই নট আউট। সেই ভিভিএস লক্ষ্মণ আবার ইডেনে।

তবে এ বার আর ব্যাট নয়। লাল কভারে মোড়া আই প্যাড হাতে। সাদা পোশাক, প্যাড-গ্লাভস-হেলমেট নয়, সাদা চেক শার্ট, ট্রাউজার্স, ডার্ক সান গ্লাসে।

ইনি, অন্য লক্ষ্মণ। অচেনা লক্ষ্মণ।

প্যাড-আপ করে ব্যাট হাতে নামলে যেমন ইডেনের মাটি কামড়ে পড়ে থাকতেন, এ বার অন্য ভূমিকায় নেমেও সেই একই প্রবণতা। চড়া রোদে তিন ঘন্টারও বেশি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন ইডেনের প্রায় মাঝখানে। যে বাইশ গজে ইডেনে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন ঠিক ১৮ বছর আগে (২৭ নভেম্বর, ১৯৯৬) তার মাত্র কয়েক ফুট দূরেই। দেখে নিলেন বাংলার উঠতি ও প্রতিশ্রুতিমান ব্যাটসম্যানদের। তাঁর এক সময়ের ক্যাপ্টেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডাকে সিএবি-র ভিশন ২০২০ প্রকল্প থেকে হিরে খোঁজার জন্য ‘জহুরি’ হয়ে এসেছেন যে।

দুপুরে ইডেনে বসে ভিভিএস বলছিলেন, “ক্রিকেটের যাবতীয় আনন্দ পেয়েছি এই ইডেনে খেলে। তাই আমার কাছে ইডেন ও কলকাতার ব্যাপারই আলাদা। তাই দাদি যখন প্রথম এই দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাবটা দিল, তখন কঠিন হলেও সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম। ভাবলাম, তরুণদের সঠিক রাস্তা দেখাবার সুযোগ ছাড়া উচিত নয়।”

জুনিয়র থেকে সিনিয়র সব ব্যাটসম্যানদেরই নেটে দেখলেন। তাঁদের শক্তি-দুর্বলতাগুলো খঁুটিয়ে দেখে, সেগুলো নিজের আইপ্যাডে নোট করে নিলেন। বাংলা ব্যাটসম্যান দিব্যেন্দু চক্রবর্তীর ব্যাটিং নাকি ভাল লেগেছে ভিভিএসের। সিনিয়রদের কোচ অশোক মলহোত্র ও অনূর্ধ্ব-২৩ কোচ জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে অন্যান্যদের খোঁজখবর নিলেন। মাঝে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁকে ক্রিকেট-বৈঠকে বসতে দেখা গেল। যা খবর, তাতে বছরে তিরিশ দিন সিএবি প্রোজেক্টে ব্যাটিং পরামর্শদাতা হিসাবে সময় দেবেন লক্ষ্মণ। এখন থাকবেন আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। তার পর নভেম্বর মাসের শেষ দিকেও আসতে পারেন।

ভিভিএস-ক্লাস প্রথম দিন ঠিক কী রকম হল?

ব্যাটসম্যানদের বলা হল, টেকনিক নয়। জোর দাও মানসিকতায়। নিজে ত্রুটি না খুঁজে রোহন বন্দ্যোপাধ্যায়-অরিন্দম দাসদের জিজ্ঞেস করলেন, আমি নয়, তোমরা ভেবে বলো কোথায় তোমাদের সমস্যা। আগে তোমাদের ব্যাখ্যাটা শুনি, তার পর আমি পরে বলে দেব যা বলার।

ওপেনিং ব্যাটসম্যান ও উইকেটকিপার শ্রীবত্‌স গোস্বামী যেমন বলছিলেন, “উনি জানতে চাইলেন, আমরা কী ভাবে প্রি-সিজন ট্রেনিং করি। আমাকেও জিজ্ঞাসা করলেন, আমার কী সমস্যা হচ্ছে, কেন শুরুটা ভাল করেও বড় ইনিংস করতে পারছি না।” অভিজ্ঞ ওপেনার অরিন্দম দাসকে আবার বলতে শোনা গেল, “মাইন্ডসেটটাই যে আসল ব্যাপার, সেটাই বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছেন ভিভিএস। আমিও তাই বিশ্বাস করি।” বাঁ হাতি ওপেনার রোহন বন্দ্যোপাধ্যায় আবার হাফসেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে পাল্টাতে পারছিলেন না। লক্ষ্মণ তাঁকে বলেছেন টেকনিক নিয়ে ভেবো না। ওটা আমি দেখেছি, ঠিক আছে। মানসিকতায় সমস্যা। তোমার ব্যাটিং ভিডিও আরও ভাল করে দেখে বলে দেব।

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে যে দুর্দান্ত গড় বা স্ট্রাইক রেটের চেয়ে বেশি রান বা সেঞ্চুরি দরকার, তা পরে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন লক্ষ্মণ। বললেন, “এটাই আসল কথা। কার কী স্ট্রাইক রেট, সেটা বড় কথা নয়। কার ক’টা সেঞ্চুরি কত বেশি রান, ঘরোয়া ক্রিকেটে এটাই আসল। তাই ছেলেদের শিখতে হবে কত বেশি রান করা যায়। এ জন্য ক্রিজে নেমে লাগে সঠিক মানসিকতা ও পরিকল্পনা।”

ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের সমস্যাটাও অনেকটা একই বলে মনে করেন তিনি। বললেন, “ইংল্যান্ডে লর্ডসে জয়ের পরও যে ভাবে টেস্ট সিরিজে হারল, সেটা অনভিজ্ঞতার জন্যই। তবে ওই ধাক্কাটা কাজে দেবে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে।” পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিরে গেল বলে শ্রীলঙ্কা আসায় এক দিক থেকে ভালই হয়েছে বলে মনে করেন লক্ষ্মণ। বললেন, “শ্রীলঙ্কা তো ওদের চেয়ে ভাল দল। সিরিজটাও নিশ্চয়ই আরও ভাল হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vvs laxman india eden gardens
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE