দুই প্রধানে বারপুজো। মোহনবাগানে সংকল্প শিল্টনের। ইস্টবেঙ্গলে সেই ভূমিকায় অ্যালভিটো। মঙ্গলবার সকালে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
ধূপ-ধুনো, ফুল, মালা, মিষ্টি, সদস্য-সমর্থকদের হৈ-হুল্লোড় পয়লা বৈশাখের দিনে ময়দানের বড়-ছোট সব ক্লাবের চেনা ছবি। ফুটবল ক্যালেন্ডার বদলে গেলেও রীতি মেনে বারপুজো বদলায়নি।
শুভেচ্ছা বিনিময়। মিষ্টি বিতরণসবই ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ করেই পুরোদস্তুর বাঙালিয়ানায় ভরা আনন্দ-উৎসবের মাঝে মোহনবাগান তাঁবুতে বিক্ষোভের আগুন। যা সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত পুলিশ ডাকতে হল কর্তাদের। প্রায় দু’ঘন্টা চলল বিক্ষোভ। বারপুজোর দিন শতবর্ষ প্রাচীন ক্লাবে যা কখনও ঘটেনি।
বাগানের বারপুজো শেষ হওয়ার পর তখন জমিয়ে খাওয়া দাওয়া চলছে ক্লাব লনে। লুচি-মিষ্টি নেওয়ার জন্য লম্বা লাইন, এই সময় হঠাৎ-ই কিছু উত্তেজিত সমর্থক এসে ক্লাব-তাঁবুর দরজায় সজোরে ধাক্কা এবং লাথি মারতে থাকেন। সঙ্গে কর্তাদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি। ‘গো ব্যাক করিম’, ‘গো ব্যাক ওডাফা’ ধ্বনিও শোনা যায় তাঁদের মুখে। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য ছিল, “কেন বছরের পর বছর ট্রফির খরা চলছে মোহনবাগানে? কেন কোনও সাফল্য নেই? কর্তারা কেন এখনও চেয়ারে বসে রয়েছেন?” ক্লাবের সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু, অর্থ-সচিব দেবাশিস দত্তরা ক্ষুব্ধ সমর্থকদের নানা ভাবে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তবু বিক্ষোভ থামেনি। বরং মোহনবাগানের কিছু কর্মীর সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের। এই সময় দু’এক জন সমর্থক আহতও হন। পুলিশ আসার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনায় চূড়ান্ত হতাশ সব কর্তাই। সৃঞ্জয়বাবু বললেন, “ট্রফি না পাওয়ার জন্য আমরা সবাই দুঃখিত। কিন্তু সমর্থক হয়ে ক্লাবের দরজায় যে ভাবে লাথি মেরেছেএটা দুর্ভাগ্যজনক। যাঁরা এটা করেছেন তাঁরা মোহনবাগানের সমর্থক হতে পারেন না।” মোহনবাগানে যখন ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে, তখন ইস্টবেঙ্গলকে একটু বেশি শান্ত মনে হল। দল চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে থাকলেও বারপুজোতে বাগানের তুলনায় ইল্টবেঙ্গলে সমর্থক ছিল কম। সম্ভবত সবাই রয়েছেন টেনশনে। বারপুজোর চব্বিশ ঘণ্টা পর চার্চিল ম্যাচ খেলতে হবে চিডিদের। তাই সবার মনও পড়ে রয়েছে গোয়াতে। দল গোয়ায় চলে যাওয়ায় রীতি মেনে নতুন বছরের অধিনায়ক হরমনজোৎ সিংহ খাবরা এ বার আর বারপুজো করতে পারেননি। দলের দুই সিনিয়ার অ্যালভিটো ডি’কুনহা এবং মেহতাব হোসেন পূজো করেন।
মোহনবাগানে রীতি মেনে পূজো করেন পরের মরসুমের অধিনায়ক শিল্টন পাল। পরের বার যে তিন জনকে রাখতে চাইছে না মোহনবাগান, সেই কোচ করিম বেঞ্চারিফা, অধিনায়ক ওডাফা ওকোলি এবং ক্রিস্টোফার এ দিন বারপুজোতে আসেননি। করিম অবশ্য এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। ওডাফার অনুপস্থিতিতেই মোহনবাগানের সভাপতি টুটু বসু পরোক্ষে স্বীকার করে নেন, নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তিনি বলেন, “গত বছর দু’কোটি দিয়ে ওডাফাকেই নেওয়া হয়েছিল। বাকি দল করতে পারিনি। এ বার নামের পেছনে না ছুটে ব্যালান্সড দল করা হবে। চমক নয়, এ বার ট্রফি চাই।”
পরের বারের জন্য কোচ-ফুটবলার বাছতে নতুন করে মোহনবাগানে এ দিন টেকনিক্যাল কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যে কমিটিতে এ বার চুনী গোস্বামী, সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রদীপ চৌধুরীদের বদলে রয়েছেন সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কম্পটন দত্ত। এঁরা প্রত্যেকেই মোহনবাগানি বলেই পরিচিত। আজ বুধবার কোচ নিয়ে বাগানে বৈঠক রয়েছে। ক্লাবের অর্থ-সচিব দেবাশিস দত্ত বললেন, “কোচের বিষয় নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে আলোচনা হবে বুধবার দুপুরে। পরে ফুটবলারদের বিষয়েও আলোচনা করা হবে।”
মোহনবাগানের মতো ইউনাইটেড স্পোর্টসও অবনমনের আওতা থেকে এখনও বেরোয়নি। বারপুজোর দিন তাই নিজেদের অবনমন বাঁচানোর কামনা করল পুরো দল। তিন প্রধানের মতো ময়দানের ছোট ক্লাব খিদিরপুর, কালীঘাট এমএস প্রত্যেকেই এ দিন বারপুজো করে পরের মরসুমে সাফল্যের শপথ নিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy