Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বৈঠকে শ্রীনির দ্বৈত সত্তা

পূর্বাঞ্চলের কাছে ছয়ে ছয় চান, বোর্ডের কাছে ক্ষতিপূরণের হিসাব

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের কাছে মঙ্গলবার দিনটা শুধু ভারতীয় বোর্ডের জরুরি ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকের ছিল না, নিজের নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিকে জোরদার করার মঞ্চও ছিল। হায়দরাবাদে বোর্ড বৈঠকে উপস্থিত ভারতীয় বোর্ড কর্তাদের কারও কারও তো তাই মনে হল। তাঁরা এক নয়, বরং শ্রীনির দ্বৈত সত্তা নাকি দেখতে পেলেন। এক দিকে, তাঁরা দেখতে পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বিতর্ক নিয়ে বোর্ডকে পরামর্শ দিচ্ছেন শ্রীনি। বলে দিচ্ছেন কী ভাবে রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিতে হবে আইসিসি-র টেবলে।

প্রবেশ। মঙ্গলবার বোর্ডের সভায় এলেন শ্রীনি। ছবি: পিটিআই

প্রবেশ। মঙ্গলবার বোর্ডের সভায় এলেন শ্রীনি। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৬
Share: Save:

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের কাছে মঙ্গলবার দিনটা শুধু ভারতীয় বোর্ডের জরুরি ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকের ছিল না, নিজের নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিকে জোরদার করার মঞ্চও ছিল।

হায়দরাবাদে বোর্ড বৈঠকে উপস্থিত ভারতীয় বোর্ড কর্তাদের কারও কারও তো তাই মনে হল। তাঁরা এক নয়, বরং শ্রীনির দ্বৈত সত্তা নাকি দেখতে পেলেন।

এক দিকে, তাঁরা দেখতে পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বিতর্ক নিয়ে বোর্ডকে পরামর্শ দিচ্ছেন শ্রীনি। বলে দিচ্ছেন কী ভাবে রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিতে হবে আইসিসি-র টেবলে। তেমন তাঁরা এটাও শুনে রাখলেন আগামী ২০ নভেম্বর বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভায় সদস্যদের থেকে কী চাইছেন অপসারিত বোর্ড প্রেসিডেন্ট।

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে পুননিবর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্ার্চিত হওয়ার যুদ্ধে নাকি পূর্বাঞ্চলের সব ক’টা সদস্যের সমর্থন চান। চান এক বা দুই নয়, পূর্বাঞ্চল থেকে বোর্ডের সব অনুমোদিত সংস্থা তাঁকে নির্বাচনী যুদ্ধে সমর্থন করুক। ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে যোগ দিতে হায়দরাবাদ উড়ে যাওয়া কোনও কোনও পূর্বাঞ্চলীয় কর্তাকে নাকি তাই বলছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চল থেকে এক সংস্থা নাম প্রস্তাব ও আর এক সংস্থার সমর্থন পেলেই শ্রীনির চলে যাবে। তাতেই তিনি আবার প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। কিন্তু শ্রীনি পূর্বাঞ্চল থেকে ছয় অনুমোদিত সংস্থারই পূর্ণ সমর্থন চাইছেন। পূর্বাঞ্চলীয় কর্তাদের শ্রীনি আরও বলেছেন যে, আগামী ২৬ অক্টোবর তিনি কলকাতা যাচ্ছেন। সেখানে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে একপ্রস্থ কথাবার্তাও বলে নেবেন। মনে করা হচ্ছে, ভারত-শ্রীলঙ্কা আসন্ন ওয়ান ডে সিরিজের কেন্দ্র বাছাইয়ের ব্যাপারে বোর্ড পূর্বাঞ্চলের প্রতি যে এমন মুক্তহস্ত হল, তারও এটাই কারণ। ভারত-শ্রীলঙ্কা পাঁচ ওয়ান ডে-র মধ্যে তিনটেই পাচ্ছে পূর্বাঞ্চল।

প্রথম ওয়ান ডে কটকে। চতুর্থ কলকাতায়। পঞ্চম রাঁচিতে।

শোনা গেল, ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে সরাসরি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিতর্কে ঢুকতে চাননি শ্রীনি। যেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে। বরং বোর্ড কর্তাদের নাকি বলে দেন যে, তোমরা আগে হিসেব করে দেখো যে ক্ষতির পরিমাণ কত। তোমরা ঠিক করো সিরিজ অসমাপ্ত রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দেশে ফিরে যাওয়ায় কী শাস্তি দিতে চাও। তার পর সেটা আমার কাছে পাঠাও। আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে এখনই আমি এর মধ্যে মতামত দিতে পারি না। কিন্তু সরকারি ভাবে ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগপত্র জমা পড়লে, তখন যা করার করতে পারব।

যা খবর, তাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে চলেছেন বোর্ড সচিব ও কোষাধ্যক্ষ। বলা হচ্ছে, আপাত-দৃষ্টিতে বোঝা গিয়েছে ক্ষতি নাকি অন্তত দু’শো কোটি টাকা হয়েছে। ভারতীয় বোর্ড চূড়ান্ত অঙ্ক ঠিক করে সেটা চাইবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের কাছে। যত দিন সেটা ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট বোর্ড না দেবে, ভারত তাদের সঙ্গে কোনও সিরিজ খেলবে না। তবে আইপিএল থেকে এখনই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের বহিষ্কারের রাস্তায় যাচ্ছে না ভারতীয় বোর্ড। আগে তারা দেখবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড কী করে ক্রিকেটারদের নিয়ে। তার পর নাকি ভবিষ্যত্‌-কর্মপন্থা ঠিক করা হবে।

ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের কোনটা ইডেন পাবে, তা নিয়েও একদফা নাটক হয়ে গেল। কলকাতা পুলিশ সিএবিকে আগেই বলে দিয়েছিল যে, ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ম্যাচ না করাই ভাল। জগদ্ধাত্রী পুজো, ছট, মহরম সব ওই সময় চলবে। সিএবি তাই চাইছিল দ্বিতীয় বা তৃতীয় ওয়ান ডে করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেল চতুর্থ। পটৌডি স্মৃতি বক্তৃতা সমেত।

বৈঠকে হিসেব করে দেখা যায়, কলকাতায় ৯ নভেম্বের তৃতীয় ওয়ান ডে হলে পটৌডি স্মৃতি বক্তৃতা কলকাতায় সম্ভব নয়। কারণ আগামী ৭ থেকে ১০ নভেম্বর আইসিসির বৈঠক চলবে। বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা সেখানে থাকবেন। সেক্ষেত্রে পটৌডি বক্তৃতা অন্য কোথাও করতে হবে। “আমরা সেটা চাইনি। ম্যাচের সঙ্গে পটৌডি বক্তৃতাও চেয়েছিলাম বলে চতুর্থ ম্যাচটা নিয়েছি,” হায়দরাবাদ থেকে ফোনে বলছিলেন বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া সিএবি যুগ্ম-সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। যা অবস্থা, তাতে পটৌডি বক্তৃতা এখন ১২ নভেম্বর হবে। কলকাতাতে। ম্যাচের আগের দিন।

পাশাপাশি আইপিএল আট নিয়েও এক দফা কথাবার্তা হয়ে গেল একই দিনে, একই জায়গায় আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে। আগামী ৯ এপ্রিল থেকে সম্ভবত শুরু হচ্ছে টুর্নামেন্ট। ক্রিকেট বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার দশ দিন পর। তবে ইডেনের নিকাশি ব্যবস্থা যে আরও ভাল করা উচিত, সেটা এ দিন বলে দেওয়া হয়েছে গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে। বলা হয়েছে, বাকি জায়গায় বৃষ্টি হলে চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সেটা শুকিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। কিন্তু ইডেনে নয়। ইডেনে মাটির চরিত্র ভিন্ন হলেও সেটা এ বার করতে হবে।

আগামী আইপিএলে উদ্বোধন এবং ফাইনাল দু’টোই কলকাতায়। সেই উত্‌সবে কিন্তু এই আগাম কাঁটাও রেখে দিল মঙ্গলবারের হায়দরাবাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE