Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পালোয়ানদের প্যাঁচে সোনার হ্যাটট্রিক

তিনটে সোনা-সহ গ্লাসগোয় এক দিনে সর্বোচ্চ পদক। সঙ্গে রক্তপাত। যন্ত্রণা। অর্থ-বিতর্ক। সাংগঠনিক অভিযোগ। লজ্জা। বীরত্ব। সব মিলিয়ে মঙ্গলবারের কমনওয়েলথ গেমস ভারতের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকল। নানা কোলাজের কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই দেশের এক সুপারস্টার পালোয়ান। দিল্লির নজফগড়ের সন্নিকট গ্রাম বাপরোলা-র সুশীল কুমার। দিল্লি ট্রান্সপোর্টের বাস ড্রাইভারের ছেলে সুশীলের জোড়া অলিম্পিক পদক আছে। চার বছর আগে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসেও সোনা ছিল।

সংবাদ সংস্থা
গ্লাসগো শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

তিনটে সোনা-সহ গ্লাসগোয় এক দিনে সর্বোচ্চ পদক। সঙ্গে রক্তপাত। যন্ত্রণা। অর্থ-বিতর্ক। সাংগঠনিক অভিযোগ। লজ্জা। বীরত্ব। সব মিলিয়ে মঙ্গলবারের কমনওয়েলথ গেমস ভারতের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকল।

নানা কোলাজের কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই দেশের এক সুপারস্টার পালোয়ান। দিল্লির নজফগড়ের সন্নিকট গ্রাম বাপরোলা-র সুশীল কুমার।

দিল্লি ট্রান্সপোর্টের বাস ড্রাইভারের ছেলে সুশীলের জোড়া অলিম্পিক পদক আছে। চার বছর আগে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসেও সোনা ছিল। দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান রাজীব খেলরত্ন সম্মানে ভূষিত সুশীলের তবু এ দিন কমনওয়েলথ গেমসে ফের সোনা জয়ের বাড়তি তাৎপর্য। প্রথমত ফাইনালের লড়াইটা ছিল ইন্দো-পাক পালোয়ানের মধ্যে। যেখানে সুশীল ৬-২ পয়েন্টে এগিয়ে থাকার সময় পাকিস্তানের কামার আব্বাসকে একেবারে চিৎপাত করে নক আউটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। তা ছাড়া, গ্লাসগোর স্বর্ণ-সাফল্যের আগে সুশীলের সব আন্তর্জাতিক পদকই ছিল ৬৬ কেজি বিভাগে। এ বারের কমনওয়েলথ গেমসেই সুশীল বেশি ওজনের ক্যাটেগরিতে (৭৪ কেজি)নিজের উত্তরণ ঘটিয়ে প্রথম বার লড়াইয়ে নেমেছিলেন এবং একেবারে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা নিয়ে কুস্তির ‘ম্যাট’ ছাড়লেন।

ফাইনালে ওঠার পথে মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে তিন-তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করেছিলেন ৩১ বছরের সুশীল। সেমিফাইনালে নাইজিরিয়ান প্রতিপক্ষ মেলভিন বিবো-র বিরুদ্ধে জয়টা তো যেমন নাটকীয়, তেমনই চাঞ্চল্যকর। প্রতিদ্বন্দ্বীর ভয়ঙ্কর প্যাঁচে নাকে গুরুতর চোট পেয়ে রক্তারক্তির পরেও দুর্দান্ত ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে শেষমেশ জিতেছিলেন। একটা সময় রাউন্ড শেষে কুস্তির ‘ম্যাট’-এ পড়ে থাকা সুশীলের রক্ত জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে তবেই পরবর্তী রাউন্ডের লড়াই শুরু করেন আম্পায়ার। এবং সেখানে একটু আগেই রক্তাক্ত সুশীল অসাধারণ ভাবে পাল্টা প্যাঁচে ৮-৪ পয়েন্টে ফাইনালে ওঠেন।

সুশীলের সঙ্গেই এ দিন ফাইনালে উঠেছিলেন অমিত কুমার (৫৭ কেজি), রাজীব তোমার (১২৫ কেজি) ও মেয়েদের ৪৮ কেজিতে বীনেশ। তাঁদের মধ্যে অমিত এবং বীনেশও ফাইনালে জেতায় সোনা এনে দেন দেশকে। সব মিলিয়ে ১০ সোনা, ১৫ রুপো ও ১০ ব্রোঞ্জ-সহ ভারতের আপাতত মোট পদক ৩৫।

দেশের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত যে মিট নিয়মিত টিভিতে দেখছেন, সেই গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে ২১৫ জনের বিরাট ভারতীয় দলের বেশির ভাগ ক্রীড়াবিদ দশ দিন বিদেশে কাটানোর পরেও তাঁদের দৈনিক ভাতা পাননি বলে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে গেল! প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন প্রতিদিন গ্লাসগোয় পদকজয়ী প্রত্যেক ভারতীয়কে আলাদা করে অভিনন্দনবার্তা ই-মেল করছেন, তখন সরকারি তরফে ব্যাখ্যা, “দৈনিক ভাতা পনেরোশোর জায়গায় তিন হাজার গেমসের মাঝপথে ক্রীড়ামন্ত্রক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নতুন হিসাব কষে সেটা বিদেশে পাঠাতে দেরি হচ্ছে।” যদিও টেবল টেনিসের সৌম্যদীপ রায় বলছেন, তিনি দশ দিনের ভাতা পুরনো হিসাবেই পেয়েছেন। আবার স্কোয়াশের সৌরভ ঘোষাল, দাপিকা পাল্লিকালের বক্তব্য, তাঁরা এখনও একটা টাকাও পাননি।

বিতর্কের মধ্যেই ভারতকে চলতি গেমসে যে ইভেন্ট সবচেয়ে বেশি পদক দিচ্ছে, সেই শ্যুটিং থেকে মঙ্গলবারও চারটে পদক এসেছে। কিন্তু সেখানেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। ২৫ মিটার র্যাপিড ফায়ার পিস্তলে রুপো জেতার পর হরপ্রীত সিংহের অভিযোগ, শ্যুটিং রেঞ্জের ‘ভুল লাইটিং সিস্টেমে’র জন্য তিনি সোনা হারিয়েছেন। “ভুল লাইটিং সিস্টেমের জন্য আমার প্রথম শট নিতে অনেকটা সময় নষ্ট করেন সংগঠকেরা। পঞ্চম শট নেওয়ার সময়ই ছিল না। অথচ তার জন্য আমাকে পেনাল্টি পয়েন্ট দিতে হল। নইলে সোনা নিশ্চিত ছিল।” তবে এই ইভেন্টে অলিম্পিক পদকজয়ী বিজয় কুমারের ফাইনালেই উঠতে না পারাটাও চাঞ্চল্যকর। যা কিছু পরে ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশনে সঞ্জীব রাজপুতের রুপো ও গগন নারঙ্গের ব্রোঞ্জ এবং মানবজিৎ সাঁধুর ট্র্যাপে ব্রোঞ্জ, তিনটে পদক আসার সান্ত্বনাতেও হয়তো মোছার নয়। শ্যুটিং রেঞ্জে ভারতীয়দের উজ্জ্বল দেখালেও এ দিনই দেশে ফেরত এক শ্যুটিং কর্তা লজ্জার কারণ হয়ে উঠেছেন। আরারুল হাসান চৌধুরী নামে ওই কর্তাকে দিল্লির বিমানবন্দরে আটক করা হয় তাঁর কাছে নিষিদ্ধ অস্ত্র পাওয়ার অভিযোগে।

আবার এক বিদেশি ক্রীড়াবিদের লজ্জার-সর্বনাশে দুই ভারতীয় প্লেয়ারের লাভের-পৌষ মাসের কাহিনিও রয়েছে এ দিনের গেমসে। নাইজিরিয়ার সোনাজয়ী ষোলো বছরের মেয়ে ভারোত্তোলক চিকা আমালাহা ডোপ কেলেঙ্কারিতে ফাঁসায় তাঁর পদক কার্যত বাতিল। ফলে এই ৫৩ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জজয়ী ভারতের মাৎসা সন্তোষী রুপো এবং চতুর্থ হওয়া ভারতের স্বাতী সিংহ ব্রোঞ্জ পেতে চলেছেন। যদিও সরকারি ঘোষণা এখনও হয়নি।

তবে পুরুষদের ভারোত্তোলনে ভারতের বিকাশ ঠাকুরের যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে রুপো জয়ের বীরগাথা নিয়ে কোনও ঘোষণার দরকার নেই। গতকাল গভীর রাতেও সেটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট ছিল। বিকাশের ৮৫ কেজি বিভাগে স্ন্যাচে ১৫০ কেজি তোলার সময় হাতে হ্যাঁচকা টান লাগে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। তখন তিনি সব মিলিয়ে তৃতীয় স্থানে। কিন্তু ওই অবস্থাতেও এর পর জার্কে ১৮৩ কেজি তুলে সব মিলিয়ে ৩৩৩ কেজি ওজনের সুবাদে বিকাশ তিন থেকে দুইয়ে শেষ করেন ও রুপো জেতেন। “ওই অবস্থায় জার্কে ১৮৩ কেজি তোলাটা আমার জীবনের সেরা লিফটিং। জীবন বাজি রেখেই যা করেছি,” বলেছেন বিকাশ। তবে হকিতে বড় ম্যাচে সেই ব্যর্থতার ছবি! অস্ট্রেলিয়ার কাছে সর্দার সিংহদের ২-৪ হারের পাশে মেয়েদের হকিতে ভারতের ১৪-০ গোলে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোকে চুরমার করাটাও যেন ম্লান দেখাচ্ছে!

সোনার তিন: সুশীল, অমিত, বীনেশ। ছবি: গেটি ইমেজেস, পিটিআই

মঙ্গলবারের ভারত

সোনা
কুস্তিতে: সুশীল কুমার, অমিত কুমার, বীনেশ

রুপো
শ্যুটিংয়ে: হরপ্রীত সিংহ, সঞ্জীব রাজপুত
কুস্তিতে: রাজীব তোমার

ব্রোঞ্জ
শ্যুটিংয়ে: গগন নারঙ্গ

হকিতে (পুরুষ) অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২-৪ হার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

3 gold india commonwealth games glasgow
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE