Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিলিয়ন ডলার ফুটবল কারখানার ফসল নতুন সুপার মারিও

বাইশ বছরেই কত কিছু দেখে ফেললেন! মারিও গোটজের ফুটবল প্রতিভার মতো তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও জার্মানিতে বহুলচর্চিত। ফুটবলারদের তাঁর বক্সার ছাড়া কিছুই মনে হয় না, এক বার বলে বসেছিলেন। মেসুট ওজিলের আর্সেনাল ‘ডিল’-এর আগে তিনিই ছিলেন জার্মানির সবচেয়ে দামি প্লেয়ার। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তাঁর প্রতিভার যা হীরকদ্যুতি দেখা গিয়েছিল, তাতে জার্মান ফুটবল বুঝে গিয়েছিল ‘মানশাফট’-এর ভবিষ্যৎ নিশ্চিন্তে এঁর হাতে তুলে দেওয়া যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৯
Share: Save:

বাইশ বছরেই কত কিছু দেখে ফেললেন!

মারিও গোটজের ফুটবল প্রতিভার মতো তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও জার্মানিতে বহুলচর্চিত। ফুটবলারদের তাঁর বক্সার ছাড়া কিছুই মনে হয় না, এক বার বলে বসেছিলেন। মেসুট ওজিলের আর্সেনাল ‘ডিল’-এর আগে তিনিই ছিলেন জার্মানির সবচেয়ে দামি প্লেয়ার। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তাঁর প্রতিভার যা হীরকদ্যুতি দেখা গিয়েছিল, তাতে জার্মান ফুটবল বুঝে গিয়েছিল ‘মানশাফট’-এর ভবিষ্যৎ নিশ্চিন্তে এঁর হাতে তুলে দেওয়া যায়। ব্যক্তিগত জীবনও বা কম কী? বন্ড গার্ল ইভা গ্রিন এক সময় গোটজের বান্ধবী ছিলেন। বছর দুয়েকের প্রেমপর্বের পর এখন দেশের সুপারমডেল অ্যান ক্যাথরিন ব্রমেলকে ‘ভবিষ্যতের জার্মানি’-র সঙ্গে ঘুরতে দেখা যায়!

তাঁর ফুটবল-বৃত্তের ভিতর ও বাহির যতই রঙিন হোক, যতই তাঁর ‘চকোলেট বয়’ ভাবমূর্তি নিয়ে জল্পনা চলুক মহিলা-সমর্থককুলে, মারিও গোটজে কোথাও গিয়ে একটু আলাদা। নইলে বাইশ বছরের জীবনের সেরা দিনে আর মার্কো রয়েসকে মনে পড়িয়ে দেন?

মারাকানায় রবিবার রাতে একটা জার্সি হাতে ঘুরতে দেখা যাচ্ছিল গোটজেকে। জার্সিতে বড় বড় করে লেখা রয়েস। পরে ইন্টারভিউয়ে বলেও দেন, “আজকের দিনটা ওর জন্য।” চোটের কারণে ব্রাজিল আসা হয়নি রয়েসের। জার্মানিতে বসেই দেখেছেন গোটজের তাঁর জার্সি হাতে নিয়ে ঘোরা। দেখে কেঁদে ফেলেছেন। টুইটও করেছেন গোটজেকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে।

গোটজে ভাবতে পেরেছিলেন এমন শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপনের মঞ্চ তৈরি করতে পারবেন নিজে? গোল করে?

চার বছর আগে বিদেশি কোনও সাংবাদিক জার্মানিতে গেলে প্রথমেই জার্মানি ফুটবল সংস্থার লোকজন গোটজেকে দেখিয়ে নাকি বলতেন, ‘ছেলেটাকে দেখুন, ও-ই আমাদের সবচেয়ে মারাত্মক প্লেয়ার হতে যাচ্ছে।’ বছরে এক বিলিয়ন ইউরো খরচ করে যে ফুটবল-ফ্যাক্টরি চালায় জার্মানি, মারিও গোটজে তার এক নম্বর ‘প্রোডাক্ট’। যে জার্মান অ্যাকাডেমি বুন্দেশলিগা ক্লাবদের জন্য কড়া গাইডলাইন তুলে দিয়েছিল দেশের ফুটবলে রেনেসাঁ আনতে। যে নির্দেশিকার প্রতিফলন গোটজেকে মাত্র আট বছর বয়স থেকে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ‘সংরক্ষণ’ করা। আর্সেন ওয়েঙ্গারের বিশাল অঙ্কের টোপ অগ্রাহ্য করে দেশের প্রতিভাকে দেশে রেখে দেওয়া। মাত্র আঠারো বছরেই সিনিয়র টিমে গোটজেকে খেলাতে দু’বার ভাবেনি ডর্টমুন্ড। দু’বার তার পর ক্লাবকে বুন্দেশলিগাও দেন গোটজে।

তার পরেও প্রতিভার প্রতি যোগ্য সুবিচার হচ্ছিল না। আহামরি ফর্মে ছিলেন না এই মরসুমে, জার্মান চাণক্য জোয়াকিম লো তাঁকে নামাতে পারছিলেন না টমাস মুলার-আন্দ্রে শুরলেদের দাপটে। বান্ধবী ব্রমেল ক’দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছিলেন, গোটজেকে বিয়ে করা তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। সুপারমডেল তো তখন বেশি বিখ্যাত ছিলেন গোটজের চেয়ে।

রবিবারের পর সে সব কোথায় গেল?

ব্রাজিল বিশ্বকাপ নিয়ে লোকে যত দিন কথা বলবে, তত দিন বোধহয় লো-র মাস্টারস্ট্রোকের কথাও ভোলা যাবে না। অতিরিক্ত সময়ের বিরতিতে গোটজেকে ডেকে লো বলে দেন, “যাও দেখাও, মেসির চেয়ে তুমি ভাল। তুমি কাপ জেতাতে পারো।” বাকিটা ইতিহাস। আর রাতে ফেসবুকে গোটজের লিখে ফেলা ‘ঈশ্বর, আপনার থেকে এক মিনিট নিচ্ছি। না, কিছু চাইব না। শুধু বলব, থ্যাঙ্ক ইউ...থ্যাঙ্ক ইউ...থ্যাঙ্ক ইউ!’

লো বর্ণিত ‘ওয়ান্ডার বয়?’ নাহ। জার্মানদের ‘মেসি’? দরকার কী?

বরং বালোতেলির মুকুটের হাত বদল হল মারাকানায়। বিশ্বে এখন এক জনই গর্বিত মারিও। মারিও গোটজে।

সুপার মারিও!

সাতের আশীর্বাদ

জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ের মধ্যে এক দারুণ সমীকরণ খুঁজে পেয়েছেন সংখ্যাতত্ত্ববিদরা। যাঁরা বলছেন, সংখ্যাতত্ত্বের কল্যাণে এ বার শুরু থেকেই ভাগ্য ‘সপ্তমে’ ছিল ফিলিপ লামদের। সাতের আশীর্বাদ নিয়েই ব্রাজিলে পা রেখেছিল জার্মানি। সংখ্যাতত্ত্বের এই হিসাব-নিকাশ হইচই ফেলে দিয়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে রীতিমতো অঙ্ক মিলিয়ে দেখানো হয়েছে, সাত কী করে সাফল্য হয়ে ওঠে জার্মানদের। হিসাব যাঁরা কষেছেন, তাঁরা শুরু করেছেন একেবারে জার্মানির আদ্যক্ষর, ইংরেজি বর্ণমালার সপ্তম অক্ষর জি দিয়ে। এর পর নেওয়া হয়েছে নামের বানান, যাতে ইংরাজিতে রয়েছে সাতটি অক্ষর। বিশ্বকাপে জার্মানি গ্রুপ ছিল জি, অর্থাৎ সাত নম্বর গ্রুপ। তার উপর আবার গ্রুপ পর্যায়ে জার্মানি শেষ করে সাত পয়েন্ট নিয়ে। তাদের গোলের সংখ্যাও ছিল সাত। পর্তুগালের বিরুদ্ধে ৪, ঘানার বিরুদ্ধে ২ এবং যুক্তরাষ্টের ম্যাচে ১। ব্রাজিলের বিরুদ্ধেও ঐতিহাসিক জয়ে গোলের সংখ্যা সাত। জোয়াকিম লো বাহিনীর হাতে বিশ্বকাপ উঠল বছরের সাত নম্বর মাসে। যেখানে ফাইনালে তারা ট্রফি জেতানো গোলটাও করল এক্সট্রা টাইমের সাত মিনিট বাকি থাকতে। এখনও যদি সাতের আশীর্বাদ নিয়ে মনে কোনও সন্দেহ থাকে, তবে বছরটার দিকে তাকাতে হবে। ২০১৪। যোগ করলে যা দাঁড়ায় ২+০+১+৪!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE