বাংলার নতুন নায়ক বীরপ্রতাপ সিংহ।
ওয়াসিম আক্রম, ডেনিস লিলি, গ্লেন ম্যাকগ্রা, ডেল স্টেইনের মধ্যে মিল কোথায়?
পেস বোলিং ছাড়াও একজনের নাম বেরোবে, যাঁকে উপরোক্ত বোলিং-মহাগুরুরা কখনও না কখনও কিছু না কিছু শিখিয়েছেন। একটু অবাক করা হলেও নামটা একজন বঙ্গ পেসারের।
বীরপ্রতাপ সিংহ-র!
রাজকোটের ব্যাটিং-স্বর্গে বিদর্ভের বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ বোলিংয়ে (১০-১-৫১-৬) বাংলাকে বিজয় হাজারে সেমিফাইনালে তোলার পর বঙ্গ ক্রিকেটের অন্যতম আলোচ্য চরিত্র যিনি। যাঁর গতি থেকে কার্যকারিতা মুগ্ধ করছে বাংলার ক্রিকেটমহলকে। রণদেব বসু যেমন। বাংলার প্রখ্যাত প্রাক্তন পেসার বলছিলেন, “ওর ভিত খুব ভাল। মাল্টিস্টোরিড তৈরির সব সম্ভাবনা আছে। বীরের সবচেয়ে বড় গুণ ছেলেটা খুব দ্রুত শিখতে পারে। কথা শোনে।”
দ্রুত ক্রিকেট-পাঠ বীরের জীবনে নতুন নয়। বিহারের নালন্দা থেকে বাংলায় যখন বছর ছ’য়েক আগে এসেছিলেন, লোকে জানত বীরপ্রতাপ সিংহ একজন ব্যাটসম্যানের নাম, যে কি না বলটাও করতে পারে! যে পরিচয় মুছে আগুনে পেস বোলারে রূপান্তরিত হতে খুব বেশি সময়ও পাননি বীর। “ভাবলে এখন অবাক লাগে যে আমার শুরুটা ব্যাটসম্যান হিসেবে। রঞ্জি অভিষেকেও কিন্তু বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়ের প্রশংসা হয়েছিল বেশি। দিল্লির বিরুদ্ধে মনোজের সঙ্গে শেষ উইকেটে ব্যাট করে বাংলাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম,” শুক্রবার সন্ধেয় আমদাবাদ থেকে ফোনে বলছিলেন বীর। একদিন পরেই যাঁকে নামতে হবে বিজয় হাজারে সেমিফাইনালে, কর্নাটকের বিরুদ্ধে।
কিন্তু বোলারে রূপান্তর তা হলে হল কী ভাবে?
“আমি ভিডিওকন ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্র্যাকটিস ম্যাচে বল করেছিলাম একবার। তার পর কোচ আমাকে বলেন যে, তুমি আসলে বলটাই দুর্দান্ত করো। ব্যাটটা নয়,” বলে একটু থেমে ফের সংযোজন, “তবে আমার জীবন পাল্টে দিয়েছিল এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে যাওয়াটা। দু’বছর আমি ডেনিস লিলিকে ওখানে পেয়েছি। পরে ম্যাকগ্রাকে পেয়েছি। লিলি টেকনিকের দিকটায় জোর দিতে বলতেন। ম্যাকগ্রা আবার শোনাতেন বিশ্বের দুঁদে ব্যাটসম্যানদের আউট করার গল্প।”
তবে ম্যাকগ্রা বা লিলি নন। বীরপ্রতাপ সিংহ দু’জনকে নিজের বোলিং গুরু মানেন। ব্রেট লি যাঁর সঙ্গে কখনও কথা হয়নি। আর ডেল স্টেইন— যাঁর সঙ্গে দু’বছর খেলেছেন একই আইপিএল টিমে।
“ওয়াসিম-ভাইও (আক্রম) কম কিছু করেননি আমার জন্য। আমি এমনিতে আউটসুইং বোলার। কেকেআরের ক্যাম্পে উনি আমাকে শিখিয়েছেন, কী ভাবে সুইংয়ে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতে হবে। বলতেন, ব্যাটসম্যানকে বুঝতে দেবে না তুমি কী বল করছ। ব্যাটসম্যানের ওই অনিশ্চয়তাটাই তোমাকে উইকেট দেবে,” বলে দিচ্ছেন বীর। স্টেইনের সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতা আরও আকর্ষণীয়। আইপিএলে একবার স্টেইনকে তিনি জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলেন যে, চাপ তো বাড়ছে, কী ভাবে বলটা করব। দক্ষিণ আফ্রিকা পেসার তাঁকে পত্রপাঠ নাকি বলে দেন, ‘উনিশ বছরে কী চাপ নেবে? তুমি যে ভাবে বল করো, সে ভাবেই করবে।’ শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন বীর। ‘‘পরে একবার আমি সচিনের উইকেট পেয়েছিলাম। তখন স্টেইন বলেছিল জানবে তুমি বিশ্বের যে কোনও ব্যাটসম্যানের উইকেট নিতে পারো!”
ঘরোয়া পর্যায়ে অন্তত নিতে পারছেন, অসুবিধেয় পড়তে হচ্ছে না। বিজয় হাজারেতে ওড়িশার বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেটের পর বিদর্ভের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ছ’টা। পাটা উইকেটে। “কাজটা সহজ ছিল না। তার উপর পার্টনারশিপ ভাঙতে হত। চেষ্টা করলাম সবটুকু দিয়ে, হয়ে গেল।” কর্নাটকের বিরুদ্ধে হবে? অকপটে শীতল গর্জন, “বেসিকসটা ঠিক রাখি। তার পর দেখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy