Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাঠে নেমেছিলাম এটা জীবনের শেষ কয়েক মিনিট ভেবে

হাবাসের এক পাশে বসে ফাইনালের প্রথম দলে সুযোগ না পাওয়া লুই গার্সিয়া। অন্য পাশে ফাইনালের নায়ক মহম্মদ রফিক। দেখে মনে হচ্ছিল আবছা হয়ে যাওয়া দেবদূত আর নতুন দেবদূত যেন কয়েক ফুটের ব্যবধানে বসা। মাঝে তাঁদের এই নতুন রূপের রূপকার। “আমি জানতাম ফাইনালে আমার সুযোগ আসবেই। যখন বদলি হিসাবে নামলাম তার পরের প্রতিটি মুহর্তকে মনে হচ্ছিল জীবনের শেষ মিনিট। মাঠে নামার সময় ভেবে নিয়েছিলাম এই ক’টা মিনিট আমার জীবনের শেষ ক’টা মিনিট। আমাকে কিছু একটা করতেই হবে আজ।

রতন চক্রবর্তী
মুম্বই শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬
Share: Save:

হাবাসের এক পাশে বসে ফাইনালের প্রথম দলে সুযোগ না পাওয়া লুই গার্সিয়া। অন্য পাশে ফাইনালের নায়ক মহম্মদ রফিক। দেখে মনে হচ্ছিল আবছা হয়ে যাওয়া দেবদূত আর নতুন দেবদূত যেন কয়েক ফুটের ব্যবধানে বসা। মাঝে তাঁদের এই নতুন রূপের রূপকার।

“আমি জানতাম ফাইনালে আমার সুযোগ আসবেই। যখন বদলি হিসাবে নামলাম তার পরের প্রতিটি মুহর্তকে মনে হচ্ছিল জীবনের শেষ মিনিট। মাঠে নামার সময় ভেবে নিয়েছিলাম এই ক’টা মিনিট আমার জীবনের শেষ ক’টা মিনিট। আমাকে কিছু একটা করতেই হবে আজ। সেটা পেরেছি,” সাংবাদিক সম্মেলনে বলছিলেন রফিক।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মাঠে নেমে তাঁকে জড়িয়ে ধরেছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যাঁর সঙ্গে এ দিন সকালেই ‘স্যার ফাইনালে আমাকে খেলাবেন’ বলতে গিয়েও ভয় বলতে পারেননি। সেই ‘স্যার’ হাবাস ফাইনালের মহানায়কের পাশে বসে বললেন, ‘আমার টিমের হিরো রফিক’। দেশজুড়ে বিশ্বকাপ জয়ী, ইউরো জয়ী বিশ্বকাপারদের নিয়ে নাচানাচিযারা ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সব সেরা মুখ। তাঁদের মধ্য থেকে ঠিকরে বেরিয়ে এসে চ্যাম্পিয়নশিপ গোল কর! তা-ও ঐতিহাসিক প্রথম আইএসএল ফাইনালে। সে ধরনেরই তো বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন সংগঠকরা। কথা শুনে মনে হচ্ছিল এ সব যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না রফিক। সবই তাঁর কাছে যেন স্বপ্নের মতো লাগছে। এ বছরই ইস্টবেঙ্গলে সই করা ফুটবলারটি আবেগে ভাসতে ভাসতে বলছিলেন, “এত ভাল লাগছে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করতে পেরে কী বলব! স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে সব কিছু। সুযোগই তো পাচ্ছিলাম না। এটা তো আমার দু’নম্বর ম্যাচ। আমার গোলটা আমি উত্‌সর্গ করছি সমস্ত কলকাতাবাসীকে।”

গ্রামের ছেলে। ইংরেজিতে তেমন সড়গড় নন। কথা বলছিলেন ভাঙা হিন্দি। মাঝেমধ্যে বাংলাতেও। অথচ অসংখ্য সর্বভারতীয় মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাঁর উপর। একটা সময় তাড়াহুড়ো করছিলেন ড্রেসিংরুমে ফেরার জন্য। আবার এই রফিকই টিম মালিক সৌরভ যখন মাঠে নেমে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন, তখন কোমর দোলাচ্ছিলেন স্টেডিয়ামে বাজা মিউজিকের সঙ্গে। অথচ শ্যাম্পেন খোলার সময় তিনি সবার পিছনে।

রফিক যখন আবেগে ভাসছেন তখন তাঁর কোচ হাবাসও বাঁধনহারা। এত দিন একজন রাগী-শৃঙ্খলাপরায়ণ হেডমাস্টারের মতো আচরণ করে আসা কলকাতা কোচকে এ দিন ট্রফি ডেতার পর যে অনুরোধ করছেন, তাঁর সঙ্গেই ছবি তুলেছেন। মাঠে যখন আতসবাজি আর অফুরান রঙিন কাগজের টুকরো উড়ছে, সে দিকে এক মনে তাকিয়ে ছিলেন আটলেটিকো কোচ। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন স্প্যানিশ ফুটবলাররা। হাবাস বলছিলেন, “এটা আমাদের টিম গেমের জয়। সব কৃতিত্ব ফুটবলারদের।” ফিকরু চলে গিয়েছেন। গার্সিয়া-বোরহাকেও ফাইনালে নামালেন না। এটা তো বিরাট ঝুঁকি ছিল? “ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গেলে গার্সিয়াকে নামাতাম। তবে ওর চোট ছিল।” বলতে বলতে তাকালেন পাশে বসে থাকা গার্সিয়ার দিকে। সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন কলকাতার মার্কি ফুটবলার।

রফিককে এ ভাবে নামানোটা কী ফাটকা ছিল? হাবাসের জবাব, “আমি ফাটকা খেলি না। আমার পরিকল্পনার মধ্যেই ছিল এই বদলটা।” তাঁকে প্রশ্ন করা হল, এটা কী আপনার কোচিং জীবনের সেরা সাফল্য? “না, না। এর চেয়ে অনেক বড় সাফল্য আমার আছে। এই টুর্নামেন্টটা প্রচুর এনজয় করেছি। তিন মাসের মধ্যে একটা টিমকে একসঙ্গে তৈরি করা কঠিন। সেটা করতে পেরে ভাল লাগছে।”

রফিক-গার্সিয়াকে নিয়ে হাবাস চললেন টিম বাসের দিকে। রাত সাড়ে দশটাতেও তাঁর পিছনে ছুটছে দলে দলে আটলেটিকো সমর্থক। সবাই বিজয়ীদের সঙ্গে উত্‌সব করতে চায়। আটলেটিকো কোচ হাসতে হাসতে রফিককে জড়িয়ে নিয়ে বাসে উঠে পড়লেন। কে যেন বললেন, “ফিকরুটা থাকলে আরও আগে গোল হত।” তাঁকে থামিয়ে দিয়ে আর এক সমর্থক বলে উঠলেন, “ফিকরুর কাজটা তো করে দিয়েছে আমাদের রফিক।” মনে হল মুম্বইতে থাকা কোনও বঙ্গসন্তান। আটলেটিকোর জার্সি পরে এসে যাঁরা জেতাতে চেয়েছিলেন ‘দাদা’-র টিমকে।

ফিকরুর নামটা শুনে এক লহমা থমকে গিয়েছিলেন হাবাস। পরে কী বুঝলেন কে জানে? বুড়ো আঙুলটা দেখিয়ে উঠে পড়লেন বাসে। আজ যে তাঁরই ‘থামস আপ’ দেখানোর দিন!

আজ বেলা বারোটায় শহরে নামছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-সহ টিম। বিমানবন্দর থেকেই গোটা টিমকে হুড খোলা বাসে নিয়ে যাওয়া হবে বেকবাগানের শপিং মলে। সেখানে দলকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রত্যেক ফুটবলারকে আট থেকে দশ হাজার ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে। রবিবার রাতেই শহর ছাড়বেন গার্সিয়া-সহ বিদেশিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

isl ratan chakraborty mumbai rafiq
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE