Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

লাতিন ফুটবলে শুধু প্রশ্ন আছে, নেই কোনও উত্তর

বিশ্বকাপ ২০০৬ সেমিফাইনাল লাইন আপ: জার্মানি-ইতালি, ফ্রান্স-পর্তুগাল। লাতিন আমেরিকা নেই। বিশ্বকাপ ২০১০ সেমিফাইনাল লাইন আপ: জার্মানি-স্পেন, উরুগুয়ে-নেদারল্যান্ডস। লাতিন আমেরিকার প্রতিনিধি এক, হেভিওয়েট ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা নেই। বিশ্বকাপ ২০১৪ সেমিফাইনাল লাইন আপ: জার্মানি-ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস-আর্জেন্তিনা। দুই লাতিন হেভিওয়েটের এক জন সেমিফাইনালে সাত গোল খেল, অন্য জন টাইব্রেকারে জিতে ফাইনাল এবং হার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

বিশ্বকাপ ২০০৬ সেমিফাইনাল লাইন আপ: জার্মানি-ইতালি, ফ্রান্স-পর্তুগাল। লাতিন আমেরিকা নেই।

বিশ্বকাপ ২০১০ সেমিফাইনাল লাইন আপ: জার্মানি-স্পেন, উরুগুয়ে-নেদারল্যান্ডস। লাতিন আমেরিকার প্রতিনিধি এক, হেভিওয়েট ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা নেই।

বিশ্বকাপ ২০১৪ সেমিফাইনাল লাইন আপ: জার্মানি-ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস-আর্জেন্তিনা। দুই লাতিন হেভিওয়েটের এক জন সেমিফাইনালে সাত গোল খেল, অন্য জন টাইব্রেকারে জিতে ফাইনাল এবং হার।

ফুটবল যাদের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ছিল আশির দশক পর্যন্ত, যে দুই লাতিন দৈত্য থেকে জন্ম নিয়েছেন পেলে, মারাদোনা, গ্যারিঞ্চা, জিকো, যে দেশ থেকে বিশ্বকাপ আনার কথা স্বপ্নেও দেখত না ইউরোপ, আজ তারাই হয়ে পড়ছে ফুটবলের দ্বিতীয় বিশ্বের বাসিন্দা। আবেগ বা স্কিল ভুলে যান। পরিসংখ্যান শুষ্ক হতে পারে, বাস্তব ততটাই তার রুক্ষ প্রকাশ ঘটায়। বিশ্ব ফুটবল যে দিগ্নির্দেশ ব্রাজিল বিশ্বকাপে দিয়ে দিল, তাতে লাতিন দেশগুলোর জন্য একটা অদৃশ্য ট্যাগলাইন স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে শিল্প, এ বার তুমি ঘুমোও!

কেউ কেউ মনে করিয়ে দেবেন, নব্বইয়ের পরেও তো লাতিন রমরমা চলেছে। ব্রাজিল দুটো বিশ্বকাপ নিয়ে গিয়েছে, এক বার ফাইনালে উঠেছে। তা হলে? ব্রাজিল দু’বার জিতেছে ঠিক। কিন্তু নব্বইয়ের পর থেকে বিশ্বকাপের শেষ আটে লাতিন প্রতিনিধিত্ব ছিল এ রকম:

১৯৯৪: ইউরোপ ৭, লাতিন আমেরিকা ১।

১৯৯৮: ইউরোপ ৬, লাতিন আমেরিকা ২।

২০০২: ইউরোপ ৪, লাতিন আমেরিকা ১।

২০০৬: ইউরোপ ৬, লাতিন আমেরিকা ২।

২০১০: ইউরোপ ৩, লাতিন আমেরিকা ৪।

২০১৪: ইউরোপ ৪, লাতিন আমেরিকা ৩।

কোয়ার্টার ফাইনালে অংশগ্রহণের ব্যাপারে গত দুই বিশ্বকাপে সামান্য উন্নতি ঘটলেও প্রভাবে একই রকম গুরুত্বহীন থেকে গিয়েছে। মাঝেমধ্যে কোনও এক দিয়েগো ফোরলান ঝলসে উঠলেও তা দিয়ে ট্রফি তোলা যায়নি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ব্রাজিলের। নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করে জার্মানির হাতে শুধু ধ্বংসই হতে হয়নি, কাপ ইতিহাসে এই প্রথম ফুটবলের একদা ধাত্রীভূমি থেকে ট্রফি নিয়ে গেল ইউরোপ। ব্রাজিলের কিংবদন্তি জিকো সব দেখে ক্ষিপ্ত, “ব্রাজিলের সমস্যা হল ফুটবল প্রতিভার রপ্তানিতে এরা এখন বেশি বিশ্বাসী। আমাদের ক্লাবের টাকাই নেই প্লেয়ার ধরে রাখার।” রোনাল্ডিনহোর মতো কেউ কেউ আবার বলেছেন, যে দিন থেকে ক্লাব ফুটবলের মাহাত্ম্য বেড়েছে, সে দিন থেকে তিলেতিলে শেষ হয়ে গিয়েছে ব্রাজিলীয় ফুটবল। ধ্বংসের চেহারাটা প্রকাশ্য হতেই যা সময় লেগেছে। কিছু বিশেষজ্ঞের অভিমত, রোনাল্ডো-রোনাল্ডিনহো যুগের পর থেকে ব্রাজিলে ফুটবলার তোলার সাইকেলটাই আসেনি। উল্টে প্রতিভার খোঁজ পেলে তাকে কৈশোরেই তুলে নিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ। ব্রাজিলিয়ান ঘরানার ফুটবল ভুলে তারা শিখছে অন্য ধাঁচের খেলা। ব্রাজিলের ক্লাব টাকার অভাবে বাধ্য হচ্ছে প্রতিভা বিক্রি করতে। তাদের চ্যাম্পিয়নশিপও এখন অর্থহীন। ট্যাকটিক্সের কচকচি নিয়ে ব্রাজিল কখনও মাথা ঘামায়নি। এত দিন তারা প্রতিভা তুলে সে সব ঢেকে দিত। মানে, ইম্প্রোভাইজেশন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে ব্রাজিলে এখন না আছে ট্যাকটিক্যাল ডিসিপ্লিন, আর ছোটবেলা থেকে ইউরোপে গিয়ে খেলা শিখে না আছে সহজাত ইম্প্রোভাইজেশন। নিজেদের সত্ত্বা ভুলে হাইব্রিড প্রাণী হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্রাজিল ফুটবল।

আর্জেন্তিনার সমস্যা আবার অন্য। মারাদোনার পর যা টিম এসেছিল, সে সব নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, তার তুলনায় পারফরম্যান্স কিছুই আসেনি। বাতিস্তুতা, ওর্তেগা, রিকেলমের মতো প্রতিভা সত্ত্বেও চব্বিশ বছর লেগেছে তাদের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে। এবং যে বিশ্বকাপ লিওনেল মেসির সবচেয়ে উপযুক্ত ছিল, সেখান থেকেও কিছু এল না। ব্রাজিল যেমন জানে না তাদের টেনে তুলবে কে, আর্জেন্তিনাও তেমন জানে না তাদের এর পর থেকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কে! রাশিয়া বিশ্বকাপের সময় মেসি ৩১, মাসচেরানো ৩৪, দেমিশেলিস ৩৭, জাবালেতা-লাভেজ্জি ৩৩। খেলবে কে? পরবর্তী প্রজন্ম কারা?

উত্তর নেই। বরং ফাইনাল হেরে মাসচেরানো-দেমিশেলিসরা বলতে শুরু করেছেন, আর নয়। এই শেষ!

আসলে লাতিন আমেরিকান ফুটবল নিয়েই বোধহয় আর কোনও উত্তর নেই। কখনও সখনও একটা নেইমার, সুয়ারেজ, মেসি স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে দেবে। কিন্তু পরের পর প্রজন্ম ধরে প্লেয়ার তোলার যে পরিকাঠামো দরকার, প্রতিভা থাকলেও সঙ্গতি নেই। জার্মানি যখন বছরে এক বিলিয়ন ইউরো খরচ করে শুধু ফুটবল-উন্নতির জন্য, রিও-বুয়েনস আইরেসে তখন বাড়ে বেকারত্ব। রোজগারের টানে ফুটবলাররা চলে যায় অন্য দেশে, ইউরোপের ক্লাব ফুটবলকে উন্নত করতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

latin football world cup line up
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE