Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
জার্মানির জন্য হর্নের ফাইনাল প্রেসক্রিপশন

সাত গোল দিয়েছিলে ভুলেই যাও আর বিনয় দেখাও মেসিদের

এঞ্জেলা মার্কেলকে ভুলে গেলেও হয়তো চলবে। টনি ক্রুজ-বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টাইগার-টমাস মুলাররাই দেশের যোগ্যতম বর্তমান রাষ্ট্রদূত।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০৪:৩৯
Share: Save:

এঞ্জেলা মার্কেলকে ভুলে গেলেও হয়তো চলবে। টনি ক্রুজ-বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টাইগার-টমাস মুলাররাই দেশের যোগ্যতম বর্তমান রাষ্ট্রদূত।

বিশ্বমঞ্চে জার্মানদের চেনাতে হলে শুধুই অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, কার্ল মার্কসের বায়োগ্রাফির শরণাপন্ন হওয়ার আর প্রয়োজন নেই। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নব্বই মিনিটের ভিডিও রেকর্ডিংটা চালিয়ে দিন, ওটাই বুঝিয়ে দেবে জার্মান জাতটা কী বস্তু!

ব্রাজিল অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা জার্সিতে ছ’টা স্টারের জন্য খেপে উঠেছিলেন। খেয়াল করে দেখেননি সেমিফাইনালে যে টিমটা সামনে পড়েছে, তারা ইতিমধ্যেই জার্সিতে ছ’টা অদৃশ্য স্টার বসিয়ে নিয়েছে। ‘হেক্সা-কোয়ালিটি’র। জোয়াকিম লো-র জার্মানি লড়তে পারে, ম্যাজিক দেখাতে পারে, খেলতে পারে উদ্দাম ফুটবল। একই সঙ্গে তারা আবার মাটিতে পা রাখতে জানে, জানে কী ভাবে ট্যাকটিক্যালি ম্যাচ বার করে আনতে হয়, জানে কী করে গতি আর সৃষ্টিশীলতার মিশ্রণ সম্ভব।

মাইক হর্নের সব দেখে, কাইজারের দেশের অধুনা ফুটবল-বিপ্লব সম্পর্কে শুনে অবাক লাগে না। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিশ্বজয়ী টিমের দক্ষিণ আফ্রিকান মনোবিদ ১৬ জুনের সালভাদর ম্যাচ থেকে জোয়াকিম লো-দের সঙ্গী। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালকে চার গোল মারা থেকে শুরু করে আলজিরিয়া ম্যাচে কোনওমতে জয়, আবার চেনা জাত্যভিমানের সশব্দ প্রকাশ ঘটিয়ে ব্রাজিলের অহংকে আমাজনে ডুবিয়ে দেওয়া— পারফরম্যান্স গ্রাফের এই ওঠানামা সবই এই কিংবদন্তি অ্যাডভেঞ্চাচারের চোখের সামনে ঘটে গিয়েছে। রবিবাসরীয় মারাকানার স্বপ্নের সিঁড়ির শেষ ধাপে আরোহণ বাকি। যার আগে মাইক হর্ন জার্মান শিবিরের দ্বৈত সত্ত্বা দেখতে পাচ্ছেন।

জার্মানি উত্তেজিত। বারো বছরের অভিশাপ কাটিয়ে আবার ফাইনালে নামছে ভেবে।

জার্মানি নার্ভাস। বারো বছর আগের ফাইনালের অভিশাপ এ বার সত্যিই কাটছে তো?

“ওদের দেখে মনে হচ্ছে ওরা ফ্লো স্টেজে পৌঁছে গিয়েছে। টিমটা মানসিক ভাবেও দুর্দান্ত জায়গায়। এটা ঠিক, ওরা উত্তেজিত। আবার নার্ভাসও। কিন্তু একটা জিনিস বলব, বারো বছর আগের কথা ভেবে এই জার্মানিকে বিচার করবেন না। মারাকানায় রেফারির শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত এরা ভাববে না, চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছি। কারণ ওরা জানে, ব্রাজিলকে সাত গোল মেরে যদি দ্বিতীয় হয়ে ফেরে, কোনও লাভ নেই,” আনন্দবাজারকে শুক্রবার ই-মেল সাক্ষাৎকারে বললেন হর্ন। টিমকে প্রাক-ফাইনাল দুটো পরামর্শ হর্ন দিয়েছেন। এক, ব্রাজিল ম্যাচটা থেকে পুরোপুরি নিজেদের সরিয়ে নাও। মনেই রেখো না ম্যাচটায় কী ঘটেছিল। দুই, প্রতিপক্ষকে মাঠে নেমে যথাযোগ্য বিনয় দেখাও।

ছাত্রদের সঙ্গে জলপথে।

কিন্তু যে টিম সেমিফাইনালে সাত গোল দেয়, তাদের পক্ষে পাঁচ দিনের মধ্যে কী ভাবে সেই স্বপ্নের ঘোর কাটিয়ে বেরনো সম্ভব? “জীবনে যদি এগোতে হয়, তা হলে পিছনে তাকালে চলে না। আমি বলছি না যে, লো বা ওর টিম ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ওই ভাবে জিতে প্রচণ্ড খুশি হবে না। কিন্তু ওরা পেশাদার। ওরা জানে, আর্জেন্তিনাও ফাইনালে যথেষ্ট কঠিন প্রতিপক্ষ। মেসি আছে। শুয়ে-বসে থাকলে তাই চলবে না। আর ওরা এটাও জানে, বিশ্বকাপ জেতার জন্য যা-যা করার দরকার, এত দিন ওরা সেটা করে এসেছে। এই জায়গা থেকে কাপ না নিয়ে ফেরার কোনও মানে হয় না,” সংক্ষিপ্ত প্রেসক্রিপশন হর্নের।

এমনিতেও ‘মানশাফট’-এর যা অবস্থান, তাতে রানার্স আপ হওয়া নিয়ে কেউ আর তৃপ্ত হওয়ার মেজাজে নেই। টিমের অন্যতম ম্যানেজার এবং প্রাক্তন বিশ্বকাপার অলিভার বিয়েরহফকে বলতে শোনা গিয়েছে, ফিরলে এ বার একেবারে চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরতে হবে। ওই রানার আপ হয়ে ফিরলে একটা লোকও তাকিয়ে দেখবে না। বরাবরের ‘ফাইনালিস্ট’, ‘সেমিফাইনালিস্ট’ বার্লিন-হামবুর্গ অনেক শুনেছে। চোকার্স তারা আর দেখতে চায় না।

“কে বলল জার্মানি এখনও চোকার? আপনারা বলছেন জার্মানি নাকি ক্রিকেটের দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে শুনে রাখুন, দক্ষিণ আফ্রিকার গা থেকেও চোকার্স ট্যাগটা উঠে গিয়েছে। আর এই জার্মানি তো কখনওই চোকার নয়,” বলে হর্নের আরও সংযোজন, “প্রতিপক্ষ আপনার চেয়ে ভাল খেললে আপনি হারতেই পারেন। কেউ তো আর লড়ব বলে নামে না, জিতব বলে নামে। আর আমি নিজে দক্ষিণ আফ্রিকান বলে মনে করবেন না জার্মানদের গা থেকে চোকার্স ট্যাগটা তুলে দেখাতে চাইছি। আমি যে টিমটার সঙ্গে এখন আছি, তারা শুধু জিততেই জানে।”

একটা ম্যাচেই কী ভাবে সম্ভব হল সেটা? ব্রাজিল ম্যাচের আগে টিমকে আলাদা ভাবে বলেছিলেন কিছু?

“ব্রাজিল ম্যাচটা জার্মানি ৮ জুলাই জেতেনি। জিতেছে ফাইভ ইয়ার্স প্ল্যান-এ! ওরা দীর্ঘ দিন ধরে তৈরি হয়েছে এই মিশনটার জন্য। বিশ্বকাপের দু’দিন আগে যখন ওদের সঙ্গে আমার কথা হয়, দেখেছিলাম ব্রাজিলে ওরা একটাই কারণে এসেছে। কাপটা নিতে,” বলছেন হর্ন।

আপনার মনে হয় না, টিম বদলানোর এ বার সময় এসেছে? সময় এসেছে জার্মানি ছেড়ে ব্রাজিল যাওয়ার?

হর্ন মনে করেন, ব্রাজিল টিমটাকে আগে টুকরো-টুকরো করে ফেলতে হবে। তার পর তৈরি করতে হবে নতুন সাম্রাজ্য। সিবিএফ তাঁকে ডাকুক বা না ডাকুক, এটুকু তিনি নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছেন। “ব্রাজিলের সমস্যা হল দেশবাসীর চোখে টিমের সবাই সুপারস্টার, কিন্তু সেটা বাকিদের চোখে ধরা না পড়া পর্যন্ত! তার মানে এই নয় যে, ওদের ভাল ফুটবলার নেই। ওদের আসলে স্বাধীনতা নেই।”

মাইক হর্নের মনে হচ্ছে, বেলো হরাইজন্তেতে দুটো টিমের মধ্যে অনেক আগে থেকেই কোনও যুদ্ধ ছিল না। মাঠে টিম বলতে একটা দেশই ছিল। ব্রাজিলের জার্সিতে তো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ‘পরাধীনতায়’ বন্দি কিছু সাম্বা-নাগরিক মাত্র!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fifaworldcup rajarshi gangopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE