Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
এখনও উন্নতির কোনও চিহ্ন দেখছেন না চিকিত্‌সকরা

হিউজ-আতঙ্কে ক্রিকেট স্তব্ধ অস্ট্রেলিয়ায়

রবিবার তাঁর ২৬তম জন্মদিনে কেক কাটার কথা ছিল। অথচ তিনি এখন সিডনির সেন্ট ভিনসেন্ট’স হসপিটালে আইসিইউ-তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। বুধবার লড়াইয়ের দ্বিতীয় রাতও একই ভাবে কাটালেন ফিল হিউজ। তাঁকে জীবন যুদ্ধ করতে দেখা ছাড়া কোনও উপায় নেই ফিলের বাবা, মায়ের।

সতীর্থকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরোচ্ছেন অস্ট্রেলীয় সহ-অধিনায়ক ব্র্যাড হাডিন। সঙ্গে স্টিভ স্মিথ এবং মোয়েস এনরিকে। ছবি: গেটি ইমেজেস।

সতীর্থকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরোচ্ছেন অস্ট্রেলীয় সহ-অধিনায়ক ব্র্যাড হাডিন। সঙ্গে স্টিভ স্মিথ এবং মোয়েস এনরিকে। ছবি: গেটি ইমেজেস।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৪০
Share: Save:

রবিবার তাঁর ২৬তম জন্মদিনে কেক কাটার কথা ছিল। অথচ তিনি এখন সিডনির সেন্ট ভিনসেন্ট’স হসপিটালে আইসিইউ-তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

বুধবার লড়াইয়ের দ্বিতীয় রাতও একই ভাবে কাটালেন ফিল হিউজ।

তাঁকে জীবন যুদ্ধ করতে দেখা ছাড়া কোনও উপায় নেই ফিলের বাবা, মায়ের। সারাটা রাত তাঁরা কাটিয়ে দিলেন তাঁদের প্রিয় পুত্রের পাশেই। ক’দিন পর ব্রিসবেনে যাঁর টেস্ট প্রত্যাবর্তন দেখতে যাবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন সেই ফিলকে নিয়ে এখন তাঁদের ভাবতে হচ্ছে আদৌ সে উঠে দাঁড়াতে পারবে কি না। ক্রিকেটে ফেরা তো অনেক দূরের ভাবনা।

ডাক্তাররা বলছেন, যে শিরার মাধ্যমে রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছয়, সেই শিরাই ছিঁড়ে গিয়েছে। অর্থাত্‌ রক্তের অভাবে অক্সিজেন না পৌঁছনোয় তাঁর মস্তিষ্কই প্রায় অচল। এমন জায়গায় আঘাত লাগার ফলেই সে দিন প্রচণ্ড রক্তপাত হয়েছিল বলে জানান চিকিত্‌সকরা। এর ফলে রক্ত শিরার বাইরে জমে যাচ্ছে বলে তাঁদের ধারণা। যার ফলে মস্তিষ্ক বিকল হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার পর যেন অন্ধকার নেমে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে। সারা দেশের ক্রিকেটাররা আতঙ্কিত। যাঁরা সে দিন সেই অভিশপ্ত ম্যাচে ছিলেন, সেই অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের চার ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার, শেন ওয়াটসন, ব্র্যাড হাডিন ও নাথান লিয়ঁ-দের তো পাঠানো হল মনোবিদের কাছে কাউন্সেলিংয়ের জন্য। যাঁর বাউন্সারে এমন কাণ্ড, সেই শন অ্যাবট তো রীতিমতো বিধ্বস্ত। বুধবার যখন মনোবিদের সেশনে যোগ দিতে এসসিজি-তে ঢুকতে দেখা গেল তাঁকে, যখন তিনি মাঠে সে দিনের সেই দুর্ঘটনাস্থলে গেলেন, তখন তাঁর শরীরী ভাষায় সেই ছাপ স্পষ্ট। অস্ট্রেলিয়ার বোর্ড তাঁকে দিন-রাত নজরেও রাখছে। ইংরেজ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ও প্রাক্তন অজি তারকা গ্লেন ম্যাকগ্রা এই ব্যাপারে অ্যাবটের কোনও দোষ দেখছেন না। ম্যাকগ্রা বলেছেন, “এতে ওর অনুতপ্ত হওয়ার বিন্দুমাত্র কারণ নেই।” অবশ্য এই সান্ত্বনার জল ছিটিয়েও শান্ত করা যাচ্ছে না অ্যাবটকে। সতীর্থদের কাছে নাকি বলেছেন, ফিল মাঠে ফিরতে না পারলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না।

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের যাতে মনে আতঙ্ক নিয়ে মাঠে নামতে না হয়, সে জন্য শেফিল্ড শিল্ডের চলতি রাউন্ডে অন্য খেলাগুলোও বাতিল করে দিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। বুধবার সারা দিন ধরেই হাসপাতালে ফিল-কে দেখতে দফায় দফায় এসেছিলেন স্থানীয় ও জাতীয় দলের সর্তীথরা। মাইকেল ক্লার্ক প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত হাসপাতালে থাকার পর ফের সকাল সকাল চলে আসেন সেখানে।

কার্যত ক্রিকেট স্তব্ধ অস্ট্রেলিয়ায়। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার থেকে ভারতের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ কী করে হবে, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররাও যে ঘটনাটাতে বেশ উদ্বিগ্ন, তা তাঁদের টুইটার হ্যান্ডলেই স্পষ্ট। কোহলি থেকে শুরু করে রাহানে, রায়না, রোহিত, অশ্বিনরা সবাই টুইট করে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদেরও যে অস্ট্রেলিয়ার এই গতি ও বাউন্সে ভরা উইকেটে নামতে হবে! অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের মতো এখন তাঁদেরও মনোবিদের সেশন প্রয়োজন কি না, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও আইনি লড়াইয়ে ব্যস্ত ভারতীয় বোর্ড থেকে বুধবার পর্যন্ত তেমন কিছু ব্যবস্থার কথা ঘোষণা হয়নি।

ফিল হিউজের এই দুর্ঘটনা ও তার ফলে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির জন্য ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত দল নির্বাচনও এখন বিশ বাঁও জলে। মাইকেল ক্লার্কের বদলে ফিল-ই ১৮ মাস পর টেস্ট দলে ফিরবেন, এমনই ঠিক ছিল। কিন্তু এখন যা অবস্থা, তাতে কোচ ড্যারেন লেম্যানকে শুধু যে তাঁর দলের ক্রিকেটারদের মানসিক ভাবে তৈরি করে মাঠে নামাতে হবে, তা-ই নয়, ক্লার্কের বদলি ক্যাপ্টেন খঁুজতেও হিমশিম খেতে হবে তাঁকে। শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়ায় হাডিন কাঁধের চোট সারিয়ে প্রথম এগারোয় খেলার মতো অবস্থায় আছেন কি না, তা আর বোঝার উপায় রইল না। স্টিভ স্মিথও চোটের জন্য শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে খেলতে পারেননি। অন্য দিকে রায়ান হ্যারিসও মিচেল জনসনকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য পুরোপুরি ফিট কি না, তাও নিশ্চিত নন। নিজেই তিনি কলামে লিখেছেন, “গত সাত মাসেও একসঙ্গে এত ব্যথা-যন্ত্রণা অনুভব করিনি। সবসময়ই মনে হচ্ছে টেস্টের আগে একটা অন্তত ম্যাচ খেলে নিলে ভাল হত।”

শন অ্যাবটের বাউন্সারে কিন্তু শুধু ফিল হিউজই চোট পাননি, নড়ে গিয়েছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটও।

‘পুরনো, হালকা হেলমেটই বিপদ ডেকে আনল’

পুরনো মডেলের হালকা হেলমেট পরে ব্যাট করতে নামাই কি কাল হল ফিলিপ হিউজের? তেমনই বলছেন তাঁর সেই হেলমেটের নির্মাতা সংস্থার কর্তারা। দুর্ঘটনার সময় মাসুরি টেস্ট মডেল হেলমেট মাথায় ছিল হিউজের। যা ২০১৩-র মডেল। যা মাথার পিছনের অংশকে সে ভাবে রক্ষা করে না। কিন্তু মাসুরি সম্প্রতি যে আধুনিক মডেলের হেলমেট এনেছে, তাতে মাথার পিছনের দিকটা অনেকটাই সুরক্ষিত থাকে। ভিশন সিরিজ নামের এই নতুন মডেলের হেলমেট মাথায় থাকলে হিউজ এই দুর্ঘটনার কবলে পড়তেন কি না, তা নিয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও উইনচেস্টারের এই সংস্থার মুখপাত্র বলছেন, তাঁরা এই দুর্ঘটনার টিভি ফুটেজ ভাল করে পরীক্ষা করে হেলমেটের নতুন মডেল শোধরানোর উদ্যোগ নিতে পারেন। মূলত ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তিতে কাজ করা এই হেলমেট প্রস্তুতকারক সংস্থার মুখপাত্র এ দিন বলেন, “এমনিতেই আমরা অনেক পরীক্ষা ও গবেষণার পর নতুন সিরিজের এই হেলমেট তৈরি করেছি। এর পরও আমরা হিউজের ঘটনাটা ফের খঁুটিয়ে দেখব। যাতে ব্যাটসম্যানদের আরও সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করা যায়। তবে ফুটেজে দেখা গিয়েছে সে দিন হিউজ আমাদের পুরনো মডেলের হালকা হেলমেট মাথায় লাগিয়ে ব্যাট করছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE