Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
তাসমানিয়ান যুদ্ধ নিয়ে উত্তপ্ত মেলবোর্ন

হেডেনদের ‘গডজিলা’ স্লোগানে কান দিচ্ছেন না গাপ্টিলরা

সিডনির সেমিফাইনাল শেষ হতে না হতেই বেজে গেল মেলবোর্নের চূড়ান্ত যুদ্ধের দামামা। রবিবার এমসিজি-তে বিশ্বকাপের খেতাবি লড়াইয়ে তাঁদের সামনে যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া, তা ঠিক হয়ে যাওয়ার পরই নিউজিল্যান্ড শিবির নেমে পড়ল এক অন্য লড়াইয়ে। মাঠের বাইরের লড়াই। বৃহস্পতিবার থেকেই যা জোর শুরু হয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪১
Share: Save:

সিডনির সেমিফাইনাল শেষ হতে না হতেই বেজে গেল মেলবোর্নের চূড়ান্ত যুদ্ধের দামামা।

রবিবার এমসিজি-তে বিশ্বকাপের খেতাবি লড়াইয়ে তাঁদের সামনে যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া, তা ঠিক হয়ে যাওয়ার পরই নিউজিল্যান্ড শিবির নেমে পড়ল এক অন্য লড়াইয়ে। মাঠের বাইরের লড়াই। বৃহস্পতিবার থেকেই যা জোর শুরু হয়ে গিয়েছে।

কালজয়ী ‘গডজিলা’ ছবির সেই বিখ্যাত স্লোগানটা বারবার তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে কিউয়ি ক্রিকেটারদের সামনে— ‘সাইজ ডাজ ম্যাটার’। যেন এমসিজি-র বিশাল চেহারা দেখেই কিউয়িরা মাঠ ছেড়ে পালাবেন! মেলবোর্নের বড় মাঠকে ‘জুজু’ করে তোলার এই অদম্য চেষ্টা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের ‘বড় পুকুরের ছোট মাছ’ আখ্যা দিয়ে এমন বাতাবরন তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া যেন রবিবার ফাইনালে দৈত্যাকায় এমসিজি-তে নিউজিল্যান্ডকে খুনই করে ফেলবে।

ম্যাচের আগে বিপক্ষের সঙ্গে ‘মাইন্ড গেম’ খেলাটা ম্যাথু হেডেনের চেয়ে ভাল আর কে ভাল পারেন? তিনিই বলেছেন, “এমসিজি-র যা সাইজ, তাতে ওরা পেরে উঠবে তো? সত্যি বলতে, ইডেন পার্কের সাইজ তো হাস্যকর। এমসিজি ও রকম নয়। ওরা ওখানে যা সব শট মেরেছে, সেগুলো এমসিজি-তে মারলে তো বাউন্ডারির বাইরে বল পৌঁছবেই না।”

নিউজিল্যান্ড দলে বিগ হিটারদের অভাব নেই। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম যেখানে টুর্নামেন্টে ১৭টি ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন, সেখানে মার্টিন গাপ্টিলের ছয়ের সংখ্যা ১৫। গাপ্টিল আবার টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ছয় দুটো হাঁকিয়েছেন। কিন্তু এগুলো সবই তাঁদের ঘরের মাঠে।

প্রাক্তন কিউয়ি ফাস্ট বোলার ক্রিস প্রিঙ্গল আবার হেডেনকে পাল্টা দিয়ে বলেছেন, “এ সব হচ্ছে আগাম বুঝিয়ে দেওয়ার ফন্দি যে, আমরা বড়দা, আমাদের পাড়ায় মাস্তানি করতে এসো না।” স্কট স্টাইরিশ, মার্ক রিচার্ডসনরা মনে করেন, বড় মাঠ নয়, নিউজিল্যান্ডের সমস্যা হয়ে উঠতে পারে অনভ্যস্ত পরিবেশ ও আবহাওয়া।

আসলে গ্রুপ লিগে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে তাদের কাছে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়ে হেরে আসায় অস্ট্রেলিয়া এখন প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে। লিগে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে বোল্টের বিধ্বংসী দ্বিতীয় স্পেলে (১ রানে ৫ উইকেট) অস্ট্রেলিয়া ১৫১-য় গুটিয়ে যায়। এখন ভাবখানা হল, এ বার আমাদের পাড়ায় তোদের যখন পেয়েছি প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়ব। বারুদের গন্ধ সেই এমসিজি জুড়ে যেখানে ১৯৮১-তে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে ভাই ট্রেভরকে দিয়ে আন্ডার আর্ম বল করিয়েছিলেন অজি ক্যাপ্টেন গ্রেগ চ্যাপেল।

সেই এমসিজি-তে হেডেনের কটাক্ষের জবাব দেওয়া শুরু হয়ে গেল শুক্রবার কিউয়িরা মাঠে প্রথম পা রাখার আগে থেকেই। কোয়ার্টার ফাইনালের নায়ক গাপ্টিল তাঁর দেশের মিডিয়াকে বলে দেন, “মাঠ বড় কী ছোট, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের শটগুলো কতটা জোরালো, সেটাই আসল কথা। এমসিজি-তে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করব।” এ দিন প্র্যাকটিসের পর কিউয়ি পেসার টিম সাউদিও বলেন, “আমাদের বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে, এটাই বড় কথা। এমসিজি-র সাইজ নিয়ে মাথাব্যথা নেই।”

দলের সাতজন ক্রিকেটারের এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ড্যানিয়েল ভেত্তোরি তো সাত বার এই মাঠে নেমেছেন। ২০০৯-এ শেষবার যখন দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়, সে বার ভেত্তোরি ছাড়াও ম্যাকালাম, টেলর, গাপ্টিল, এলিয়ট, সাউদি ও মিলস খেলেছিলেন। সেই ম্যাচ ছ’উইকেটে জিতে মাঠ ছেড়েছিল নিউজিল্যান্ড। সুতরাং এমসিজি-র দৈত্যাকৃতি নিয়ে কিউয়িদের ভয় দেখিয়ে যে লাভ নেই, সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন সাউদি। “আমাদের অনেকেই এই মাঠে খেলেছে। স্মরণীয় অতীতও আমাদের রয়েছে এখানে। আগেও এখানে লাখ খানেক দর্শকের সামনে খেলেছি। রবিবারও খেলব। ও সব নিয়ে ভাবছি না। ভাল খেলা নিয়ে বেশি ভাবছি আমরা”, বলেন তিনি।

হেডেন যাই বলুন, অজি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক কিন্তু নিউজিল্যান্ড নিয়ে বেশ চিন্তিত। বিশেষ করে বোল্টদের নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, “নতুন বলে ওরা অসাধারণ বল করে। সারা টুর্নামেন্টে এটা দেখেছি। ওদের বিরুদ্ধে নেমে সেটা টেরও পেয়েছি। নিউজিল্যান্ডে ওরা দারুন সুইং করিয়েছে। যখন পারেনি, তখন নিখঁুত জায়গায় রেখে গিয়েছে। তাই শুরুতে ওদের পেসারদের বিরুদ্ধে ভাল ব্যাট করতে হবে।”

হেডেন মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ‘গডজিলা’-র স্লোগানটা বোধহয় ভুলেই গিয়েছেন র্ক্লাক।

দুই প্রতিবেশীর অন্য লড়াই

বিশ্বকাপ ফাইনালে রবিবার লড়বে দুই প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। শুধু ক্রিকেটই নয়, দু’দেশের রেষারেষির শিকড়টা আরও গভীরে।

• রাগবি অস্ট্রেলিয়াকে দীর্ঘদিন দ্বিতীয় সারির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধরত নিউজিল্যান্ড। ছবিটা পাল্টে যায় ১৯৭৯-তে। সে বার অস্ট্রেলিয়া ‘ব্লেডিসলো কাপ’ (দু’দেশের মধ্যে খেলা টুর্নামেন্ট) জেতার পর রীতিমতো বিজয় মিছিল করেছিল এমসিজিতে। নিউজিল্যান্ডের অল ব্ল্যাকস যা এখনও ভোলেনি।

• নৌ-বাইচ বছর দুই আগে নৌ-বাইচে ‘আমেরিকা কাপ’-এ অস্ট্রেলিয়ায় জন্মানো জিমি স্পিটহিল আমেরিকার একটি টিমের হয়ে নেমে নিউজিল্যান্ডকে হারান। সেই রাগ এখনও যায়নি কিউয়িদের।

• মেরাং কেক পাভলোভা কিংবদন্তি রুশ ব্যালেরিনা আনা পাভলোভার নামে তৈরি বিখ্যাত এই মিষ্টির পদ নিয়েও দু’দেশের মধ্যে তিক্ততা চরমে। নিউজিল্যান্ডের দাবি পদটা আসলে ওয়েলিংটনের এক রাঁধুনি আবিষ্কার করেছিলেন বিশ্বখ্যাত নর্তকীর জন্য। অস্ট্রেলিয়ার দাবি, তার অনেক আগেই এক অস্ট্রেলীয় পত্রিকায় এই কেকের রেসিপি বেরিয়েছিল।

• রাসেল ক্রো অস্কারজয়ী বিখ্যাত অভিনেতার জন্ম নিউজিল্যান্ডে হলেও তিনি প্রতিষ্ঠা পান অস্ট্রেলিয়াতে। তাই ক্রোকে নিয়ে দু’দেশেরই একটা টানাটানি আছে। কিছুদিন আগে ক্রো অভিযোগ করেন, তাঁর নাগরিকত্বের আবেদন দু’বার নাকচ করেছে অস্ট্রেলিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE