আইএসএল ফাইনালের আগে টিমের আসল স্ট্রাইকার ফিকরুকে আটলেটিকো দে কলকাতা ছেড়ে দিয়েছে—খবরটা পেয়ে চমকে উঠেছিলাম। আমার মতে কলকাতার স্প্যানিশ কোচ হাবাসের এটা শুধু ভুল নয়, বড় ভুল। কিন্তু ভুলটা কেন করলেন সেটা বুঝছি না!
প্রায় গোটা টুর্নামেন্টে এক স্ট্রাইকার স্ট্র্যাটেজিতে খেলেছেন হাবাস। আর সেটা বেশির ভাগ ম্যাচে ফিকরুকে দিয়ে। ফাইনালে ফিকরু না থাকায় যত দূর মনে হচ্ছে মহম্মদ রফিকে খেলাবেন। কিন্তু ফিকরু আর রফি তো এক হল না!
আজ মুম্বইয়ের মাঠে আটলেটিকোর ইথিওপিয়ান স্ট্রাইকার যদি সামনে থাকত, তা হলে বিপক্ষ ডিফেন্সকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হত। কেরল ব্লাস্টার্স অল আউট উপরে ওঠার সুযোগ অতটা পেত না। এখন যেটা আমার আশঙ্কা হচ্ছে, পেতেই পারে। নিজেদের বক্সের আশেপাশে ফিকরু না থাকায় অল আউটে বেশি যাবে ডেভিড জেমস-ট্রেভর মর্গ্যানের দল।
প্লেয়ার যদি কোনও অন্যায় করে বা দলে শৃঙ্খলা ভাঙে— তার শাস্তি অবশ্যই প্রাপ্য। সে জন্য ফিকরুকে হাবাস সেমিফাইনালে খেলাননি। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু ফাইনালে টিমের স্বার্থের জন্য নিজের ইগোকে দূরে সরিয়ে রাখতেই পারতেন কলকাতার কোচ। হাবাস কিন্তু আমার মতে শৃঙ্খলা রক্ষার নামে গোয়ার্তুমি করে ফেললেন!
প্রথম আইএসএলের চূড়ান্ত যুদ্ধ যতটা না কলকাতা আর কেরলের মধ্যে, তার চেয়েও বেশি বোধহয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আর সচিন তেন্ডুলকরের মধ্যে। দেশের দুই ক্রিকেট আইকনের ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে গ্ল্যামারাস টুর্নামেন্টে সম্মানরক্ষার লড়াই বলে কথা! ফাইনালের লাইন-আপটা সৌরভ বনাম সচিনের টিমের হওয়ায় জন্য আইএসএল ফাইনাল বাড়তি মাত্রা পেয়ে গিয়েছে।
মনে পড়ে যাচ্ছে উনিশশো পঁচাশির ফেড কাপ ফাইনালকে। আমি তখন ইস্টবেঙ্গলে। আমাদের মুখোমুখি মোহনবাগান। সেবারও আজকের মতোই কলকাতার বাইরে ফাইনাল হলেও সেই বেঙ্গালুরুতে কলকাতা ডার্বির উত্তেজনায় এতটুকু ভাঁটা পড়েনি। আসলে এ ধরনের ম্যাচে একটা এক্স ফ্যাক্টর সব সময় কাজ করে। যেটা রয়েছে শনিবারের কলকাতা দলের ফাইনালেও।
অদ্ভুত একটা চোরা টেনশন বয়ে চলে ম্যাচের ভিতরে। আর সেই টেনশন বলুন বা চাপ বলুন, বেশি থাকবে কিন্তু দু’দলের ভারতীয় ফুটবলারদের উপর। বিদেশি যারা খেলতে এসেছে আইএসএলে, তাদের কাছে এটা হয়তো নিছক একটা প্রদর্শনী টুর্নামেন্ট। তার বেশি কিছু নয়। টাকা পাচ্ছে। পেশাদার মানসিকতা নিয়ে খেলে দিচ্ছে। কিন্তু আবেগ যা থাকবে তা ওই অর্ণব, বলজিত্, কিংশুক, মেহতাবদের। একইসঙ্গে নামী বিদেশি তারকাদের পাশে নিজেদের প্রমাণ করার মরিয়া মনোভাবও। যাতে পরের বছর আরও ভাল টিম পাওয়া যায়। আইএসএলে খেলা অনেক ভারতীয় ফুটবলারের তো আবার ক্লাবও নেই। তাই শেষ বাজিতে নিজেদের নিংড়ে দিতে চাইবে শুভাশিস রায়চৌধুরী, ইসফাক আহমেদ, সঞ্জু প্রধানরা। আই লিগে কোনও ক্লাব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।
রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে মার্কি ফুটবলার হিসেবে দেল পিয়েরো, আনেলকা, রবার্ট পিরেসদের আইএসএলে নিয়ে আসা হয়েছিল ঠিকই। তাতে হয়তো টুর্নামেন্টের গ্ল্যামারটা অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে। কিন্তু ওই সব মহাতারকাদের থেকে যে ফুটবলটা আশা করা গিয়েছিল সেটা পেলাম কই? তাও কলকাতার লুই গার্সিয়া কিছুটা ভাল খেলছে। কিন্তু আগের মতো ফিট না থাকায় তাড়াতাড়ি হাঁপিয়ে পড়ছে। সে জন্য পুরো ম্যাচ ওকে খেলানোও যাচ্ছে না। বরং নাতো, হোফ্রে, হোসেমিরা অনেক ভাল খেলছে। কেরল ব্লাস্টার্সের স্ট্রাইকার হিউমও দুরন্ত ছন্দে রয়েছে। নামীদামি বিশ্বকাপারদের চেয়ে আমাকে বেশি মুগ্ধ করেছে তুলনায় এই কম নামী বিদেশিরা। একইসঙ্গে ভারতীয় ফুটবলার যেমন কিংশুক, অর্ণব, বিশ্বজিত্দের খেলাও ভাল লেগেছে।
তবে কলকাতার গোলের নীচে শুভাশিস ভাল পারফর্ম করা সত্ত্বেও কেন যে হাবাস তাকে টুর্নামেন্টের শেষের দিকে বসিয়ে রাখলেন বুঝলাম না। বিদেশি কিপার বেটে খারাপ খেলছে বলব না। কিন্তু এ ভাবে দুম করে এক জন ফুটবলারকে বসিয়ে দিলে সেটার একটা খারাপ প্রভাবও কিন্তু টিমের উপর পড়ার ভয় থাকে!
হাবাসকে কিন্তু আমার চতুর কোচ লাগে। যে জন্য আটলেটিকো ফাইনালেও উঠেছে। কিন্তু ফাইনালে যদি হাবাস জোড়া স্ট্রাইকারে দলকে না খেলান তবে কিন্তু চাপে পড়ে যাবে কলকাতা। ফিকরুকে ছেঁটে ফেলা যেমন ভুল, তেমনই ফাইনালে স্পেনের চরম রক্ষণাত্মক মডেল অনুকরণ করলেও ভুল করবেন কলকাতার স্প্যানিশ কোচ।
আটলেটিকো আজও এক স্ট্রাইকারে খেললে কিন্তু আমি কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখব সচিনের কেরলকে। যদিও মনেপ্রাণে চাইঠি আমার শহরেই প্রথম আইএসএলের চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফিটা আসুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy