Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চাকরি খুঁজলে অলিম্পিক্স পদক দেখবে কী করে

অলিম্পিক্স শুরু হতে আর বাকি ৪০ দিন। তবে শুধু অলিম্পিক্স নিয়েই যে তিনি সাক্ষাৎকার দিলেন তা নয়। ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমার বাইরেও নিজের বর্ণময় জীবনের নানা না বলা কথা আনন্দবাজারের কাছে চণ্ডীগড় থেকে ফোনে বললেন মিলখা সিংহ।

প্রীতম সাহা
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৯:২৮
Share: Save:

অলিম্পিক্স শুরু হতে আর বাকি ৪০ দিন। তবে শুধু অলিম্পিক্স নিয়েই যে তিনি সাক্ষাৎকার দিলেন তা নয়। ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমার বাইরেও নিজের বর্ণময় জীবনের নানা না বলা কথা আনন্দবাজারের কাছে চণ্ডীগড় থেকে ফোনে বললেন মিলখা সিংহ।

প্রশ্ন: টাইম মেশিনে চড়ে অতীতে ফিরে যাওয়ার একটা সুযোগ পেলে তিনটে কী ঘটনা বদলাতে চাইবেন?

মিলখা: (কিছুক্ষণ চুপ। তারপর গম্ভীর গলা) দেশভাগের অভিশাপ। যা আমার মা-বাবা-ভাই-বোন সবাইকে কেড়ে নিয়েছে। রোম অলিম্পিক্সের দুঃস্বপ্ন। যার কথা মনে পড়লে আজও অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় অ্যাথলিটদের দুর্দশা। যা আর কোনও দিন ঠিক হওয়ার নয়।

প্র: আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে এ বারও অলিম্পিক্সে অ্যাথলেটিক্সের ভাগ্যে গোল্লাই দেখছেন আপনি?

মিলখা: আবার কী? আমি তো কোনও পদক দেখতে পাচ্ছি না। যত দিন না ভারতের অলিম্পিক্স সংস্থার উন্নতি হচ্ছে, তত দিন আমাদের খালি হাতেই বসে থাকতে হবে। কেন না কর্তাদের শেখার আগ্রহও নেই। শিখবেও না কোনও দিন।

প্র: কেন অভিনব বিন্দ্রা, সাইনা নেহওয়াল কিংবা দীপা কর্মকার...

মিলখা: আমি অ্যাথলেটিক্সের কথা বলছি। যদি পুরো অলিম্পিক্সের কথা আসে, তা হলে শ্যুটিং, ব্যাডমিন্টন ছাড়া ত্রিপুরার দীপা পদক পেতে পারে। তবে এও বলে রাখছি, না পেলে অবাক হব না।

প্র: আপনার পরে ভারতে আর একটাও মিলখা সিংহ তৈরি হল না কেন?

মিলখা: নিষ্ঠার অভাবে। সহজে সাফল্য পাওয়ার নেশায়। আসলে এখনকার ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের অ্যাথলিটরা সবার আগে চাকরির সন্ধান করে। তার পরে বুটের খোঁজে নামে। এ রকম মানসিকতা থাকলে দৌড়নো যায় নাকি!

প্র: শুনেছি রোম অলিম্পিক্সে ইতিহাস গড়েও পদক না পাওয়ার দুঃখে আপনি অ্যাথলেটিক্স ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন?

মিলখা: হ্যাঁ। গোটা জীবনে আমি তিন বার হাউহাউ করে কেঁদেছিলাম। দেশভাগের সময়, অলিম্পিক্সে পদক হারিয়ে ও ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমা দেখার পরে। রোমের পরে তিন দিন খাইনি। বাড়ির বাইরেও বেরোইনি মাস তিনেক। কিন্তু ওই সময় আমার জন্য প্রচুর চিঠি আসে সারা দেশ থেকে। মানুষ এত আশা করে আমার জন্য বসে আছে জানতে পেরে, বাড়িতে থাকতে পারিনি। শপথ নিয়ে ফেললাম। মাঠে নামলে আর পদক ছাড়া ফিরব না। হয় প্রাণ বিসর্জন দিয়ে আসব। না হলে পদক হাতে নিয়ে।

প্র: আপনি অ্যাথলিট না হলে কী হতেন?

মিলখা: ডাকাত হতাম।

প্র: বুঝলাম না!

মিলখা: দেশভাগের সময় তলোয়ার হাতে নিয়ে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমাদের ধর্ম বদল করার জন্য হুমকি দিয়েছিল। করিনি। তাই পরিবারকে রক্ষা করার জন্য সারা দিন জেগে থাকতাম। তবু শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারিনি। তার পর দিল্লি এসে যখন দেখলাম কোনও চাকরি নেই, ঠিকানা নেই, খাবার নেই তখন ডাকাত হওয়ার কথাই ভেবেছিলাম। সেনাবাহিনীর চাকরিটা পাওয়ার পর সব বদলে গেল। ওখান থেকেই শুরু অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন দেখা।

প্র: ইস্টবেঙ্গলের ‘ভারত গৌরব’ পুরস্কার নিতে কলকাতায় আসছেন?

মিলখা: নিশ্চয়ই আসব। কলকাতা এমন শহর যেখানে স্পোর্টসম্যানদের যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়। আর সেটা যদি মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবের হয়, তা হলে তো বড় গর্বের। আমার এখনও মনে আছে, শেষ বার ’৬২ এশিয়াডে সোনা জিতেছিলাম। ফুটবলেও সে বার সোনা জিতেছিলাম আমরা। চুনী-পিকেদের নেতৃত্বে। কলকাতায় গেলে একবার ওদের সঙ্গে দেখা করতে চাই।

প্র: ইস্টবেঙ্গলের সাম্মানিক ট্রফিটা আপনার বাড়িতে জায়গা পাবে তো?

মিলখা: নিশ্চয়ই, কেন পাবে না?

প্র: আপনার তো সব ট্রফি, ফলক এমনকী ফ্রেমে বাঁধানো ছবিগুলোও মিউজিয়ামে রাখা...

মিলখা: (হাসতে হাসতে) সেটা ঠিক। আমার বাড়ির দেওয়ালে দু’টো ছবি টাঙানো। যুক্তরাষ্ট্রের যে ডাক্তার আমার স্ত্রীর অস্ত্রোপচার করেছেন তাঁর। এবং কার্গিল যুদ্ধে শহিদ হওয়া হাবিলদার বিক্রম সিংহের ছবি। বাকি সব আমি মিউজিয়ামে দিয়ে দিয়েছি। দেশের সম্পত্তি ভেবে। তবে চিন্তা করবেন না, ইস্টবেঙ্গলের সম্মানকে সযত্নে বাড়িতেই সাজিয়ে রাখব।

প্র: বিক্রম সিংহ মানে সেই তিনি যাঁর সাত বছরের ছেলেকে আপনি দত্তক নিয়েছিলেন?

মিলখা: ওর বয়স এখন ২৩। কলেজে পড়ে। আসলে প্রথমে আমরা আর্মি ওয়েলফেয়ার ফান্ডে অ্যাথলিট সৈন্যদের জন্য টাকা দান করতাম। কিন্তু যখন জানতে পারি ওখান থেকে ঠিক ভাবে টাকা পাচ্ছে না পীড়িতরা, তখন আমি সরাসরি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। বিক্রম ভাল বক্সার ছিল...

এ বার থামুন। আমার বাড়িতে অনেক লোক এসেছে।

প্র: শেষ প্রশ্ন। নব্বই ছুঁইছুঁই বয়সে কোনও অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে চান?

মিলখা: একটা নয়, দু’টো স্বপ্ন আছে। অলিম্পিক্সে অ্যাথলেটিক্সে ভারতের পদক দেখে যেতে চাই। আমি যেটা কোনও এক দিন হারিয়েছি। আর দ্বিতীয়, জীবকে (ছেলে জীব মিলখা সিংহ) গল্ফের মেজর কোনও ট্রফি হাতে নিয়ে দেখতে চাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Milkha Singh interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE