Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ক্যানসার লালজির মনের জোরের সামনে সর্দি, কাশির মতো মামুলি

‘মেরা নাম জোকার’ সিনেমায় একটা ডায়লগ ছিল। ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’। জীবনে যাই হোক না কেন, শো চালিয়ে যেতে হবে। কথাটার সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে লালজির মিল পাই। অরুণ লালের কথা বলছি। কেরিয়ারের শুরুতে লালজির কোচিংয়ে খেলেছি। এত দিন ধরে ওঁকে দেখছি। একটা জিনিস সব সময় মনে হয়েছে যে, ওঁর লড়াকু মেজাজটা দেখার মতো।

লক্ষ্মীরতন শুক্ল
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ০৯:০৯
Share: Save:

‘মেরা নাম জোকার’ সিনেমায় একটা ডায়লগ ছিল। ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’। জীবনে যাই হোক না কেন, শো চালিয়ে যেতে হবে। কথাটার সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে লালজির মিল পাই। অরুণ লালের কথা বলছি। কেরিয়ারের শুরুতে লালজির কোচিংয়ে খেলেছি। এত দিন ধরে ওঁকে দেখছি। একটা জিনিস সব সময় মনে হয়েছে যে, ওঁর লড়াকু মেজাজটা দেখার মতো।

চোদ্দো বছর আগের একটা ঘটনা বলি। যত দূর মনে পড়ছে, ম্যাচটা পি সেন ট্রফির ফাইনাল। আমি মোহনবাগানে। আমরা সে বার চারটে ট্রফি জিতেছি। পি সেন জিতলেই পাঁচ মুকুট হবে। দারুণ একটা অ্যাচিভমেন্টের সামনে বাধা একটাই। লালজি। ওঁর ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেই ফাইনাল। সে দিন প্রচণ্ড গরম ছিল। তার মধ্যেই মোহনবাগান তিনশোর কাছাকাছি রান তুলেছিল। আমি ৯০ মতো করেছিলাম। অনেকে ধরে নিয়েছিল, আমরাই জিতছি। আউট করতে হবে লালজিকে, যাঁর বয়স তখন ছেচল্লিশ। কিন্তু লড়াই কাকে বলে সে দিন দেখলাম। দেখলাম বয়স, অসহ্য গরম— অরুণ লাল নামের লোকটার কাছে কোনও ব্যাপার নয়! একা ১৪০ করলেন। ইস্টবেঙ্গলকে জেতালেন। ম্যাচ সেরা হলেন।

মাঠের বাইরেও লালজির একটা ব্যাপার আমার দারুণ লাগে। মুহূর্তের মধ্যে যে কাউকে চার্জড করে দিতে পারেন। বছর দুয়েক আগে এই জন্যই বাংলার ড্রেসিংরুমে লালজির পেপটকের ব্যবস্থা করেছিলাম। আমি তখন ক্যাপ্টেন। অশোক মলহোত্র কোচ। আমরা ঠিক করি, সে মরসুমে গ্রিনটপে খেলব। চ্যালেঞ্জটা নেব। জানতাম এই সময় প্লেয়ারদের তাতাতে এক জনই পারেন। অরুণ লাল। কমেন্ট্রির হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও উনি সময় দিয়েছিলেন। সে বার কিন্তু আমরা রঞ্জি সেমিফাইনাল খেলেছিলাম।

কিছু মানুষ থাকেন যাঁদের লড়াইটা মজ্জাগত। লালজি তেমনই। এমন ব্যক্তিত্ব যে তাকে দেখলেই লোকে তেতে যাবে। প্রথমে দিল্লির হয়ে খেলতেন, মাঝে বাদও পড়েন। কিন্তু দমে যাননি। বাংলার ওই সময়ের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে তুলে এনেছেন। বাংলাকে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন করেছেন। ভাঙা আঙুল নিয়ে খেলেছেন। যাই হোক না কেন, ‘লড়কে লেঙ্গে’। এই স্পিরিটটা লালজির মধ্যে দেখেছি।

এ রকম একটা মানুষ ক্যানসারকে হারিয়ে দেবেন না? ওঁর যা মনের জোর তাতে কেন জানি না মনে হয়, ক্যানসারও ওঁর কাছে সর্দি-কাশি হওয়ার মতোই মামুলি! আশা করি, উনি নিশ্চয়ই এই ম্যাচটাও জিতবেন। গোলাপি বলের ম্যাচে ইডেনে লালজির সঙ্গে দেখা হল। আগের লড়াকু লোকটার সঙ্গে এতটুকু পার্থক্য নেই। একই রকম, হাজার ঝড়েও যাকে মাটিতে ফেলা যায় না।

যে মানসিকতার ক্রিকেটার এখন বাংলার চাই। অনেকে বলেন বাংলা থেকে আর জাতীয় ক্রিকেটার আসে না। বাংলার প্লেয়াররা এখন আইপিএলেও সুযোগ পাচ্ছে না। এতটা মান নেমে গিয়েছে। কথাটা কিছুটা হলেও ঠিক। আর তার জন্য কিছু ক্রিকেটাররাই দায়ী। এখনকার বাংলার ক্রিকেটাররা পিচ নিয়ে নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরে যেতেই চায় না। তা সে র‌্যাঙ্ক টার্নার হোক বা পাটা উইকেট।

লালজিরা কোনও দিন উইকেট-টুইকেটের পরোয়া করেননি। বাংলার কিছু ক্রিকেটার এখন নিজের কথা ভেবে খেলে। কার কত রান হল, পরের দিন কোথায় কোথায় ছবি বেরোল, কতটা বড় বোরোল, ফেসবুকে কতগুলো লাইক পড়ল, টুইটারে কতগুলো রিটুইট হল এটাই যেন সব। দেখে খুব খারাপ লাগে। আর মন খারাপ লাগলে, লালজির মতো প্লেয়ারদের কথা ভাবি। বাংলার ক্রিকেটারদের যাঁর কাছে শেখা উচিত, জীবন আর ক্রিকেট মাঠে কী ভাবে লড়তে হয়। বাংলার ক্রিকেটারদের বলতে ইচ্ছে করে, সোশ্যাল নেটওয়ার্ককে বড় না ভেবে লালজিদের সোশ্যাল প্রায়রিটি কর। এদের অনুসরণ করে এগিয়ে যাও। বাংলার কথা ভাবো, টিমের কথা ভাবো। হয়তো ব্যর্থ হবে, কিন্তু তোমাকে কেউ শেষ করে চলে যেতে পারবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arun Lal Commentary Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE