তুলুঙ্গা, বলবন্ত, শুভাশিস ও ডেনসন।
পাশে দেল পিয়েরো, লুই গার্সিয়া, রবার্ট পিরেজ, ডেভিড জেমসরা। বিশ্বকাপার থেকে ইউরোজয়ীর ছড়াছড়ি আইএসএলে। তবু বিদেশি মহাতারকাদের মাঝেও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন বলবন্ত সিংহ, সুভাষ সিংহ, শুভাশিস রায়চোধুরী, অর্ণব মণ্ডলরা।
আটলেটিকো দে কলকাতার ফিকরু তেফেরা, বা মুম্বই সিটি এফসির আন্দ্রে মর্তিজ অথবা চেন্নাইয়ান এফসির এলানোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গোল করছেন বলবন্ত, সুভাষরা! পাশাপাশি নিজেদের পারফরম্যান্সে চমকে দিচ্ছেন শুভাশিস রায়চৌধুরী, অর্ণব মণ্ডল, ডেনসন দেবদাসদের মতো ভারতীয়রাও।
কলকাতার কিপার, ডেম্পেতে দীর্ঘদিন খেলা শুভাশিসের প্রশংসা তো উদ্বোধনী ম্যাচের পর স্পেন থেকে ব্রাজিল, ইতালি থেকে ইংল্যান্ডের সব কাগজে বেরিয়েছি। রীতিমতো ছবি-সহ। অর্ণবকে কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস প্রতিটি ম্যাচেই খেলিয়েছেন এখনও পর্যন্ত। গত রবিবার দেল পিয়েরোর মতো মহারথীর সামনেও বেহালার ছেলে ছিলেন অকুতোভয়। লড়েন সমান তালে। আবার মোহনবাগানের বলবন্তের গোল এবং খেলার ধরন চমকে দিয়েছে চেন্নাইয়ান এফসির কোচ কাম ফুটবলার মাতেরাজ্জিকেও!
কিন্তু দেশের সবচেয়ে দামি টুর্নামেন্টে বলবন্ত, অর্ণব, সুভাষ বা শুভাশিসদের এই ভাল খেলার রসায়নটা কী?
মঙ্গলবার কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন আইএসএলের প্রথম ভারতীয় গোলদাতা বলবন্ত চেন্নাই থেকে ফোনে বলছিলেন, “গোল করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই তো আইএসএল খেলতে এসেছিলাম। টিমে অনেক নামী ফুটবলার আছে। ভাল না খেললে তারা দলে আমার জায়গা নিয়ে নেবে। সেই তাগিদটাই ভাল খেলার জন্য তাতিয়ে দিচ্ছে।”
এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় জয়টা পেয়েছে মুম্বই সিটি এফসি। পুণে-র বিরুদ্ধে তাদের পাঁচ গোলের একটি ছিল সুভাষ সিংহের। গতবার শিলং লাজংয়ে ছিলেন সুভাষ। তবু এফসি পুণে সিটির বিরুদ্ধে গোল করার পরও মণিপুরের ছেলে জানেন না পরের ম্যাচে সুযোগ পাবেন কি না! তবে সুযোগ পেলেই আবার গোল করার জন্য নিজেকে তাতাচ্ছেন প্রতি মুহূর্তে। মুম্বই থেকে ফোনে সুভাষ বলছিলেন, “আনেলকা, লিউনবার্গদের মতো ফুটবলার রয়েছে টিমে, এঁদের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে থাকাটাই তো বড় ব্যাপার! সেখানে খেলার সুযোগ পাওয়াটা কিন্তু খুব কঠিন। আনেলকা চতুর্থ ম্যাচ থেকে দলে ফিরবে। দলে আরও বিদেশি আছে। ভাল পারফম্যান্স না করতে পারলেই ছিটকে যেতে হবে।”
কলকাতার কিপার শুভাশিসকে নিয়ে যতই হইচই হোক না কেন, তাঁর ঘাড়েও নিঃশ্বাস ফেলছেন ক্যামেরুনের গোলকিপার ইদেল বেটে। আটলেটিকো দে কলকাতার জার্সি গায়ে মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন যিনি। শুভাশিস তাই বললেন, “বেটে তো রয়েছেই। স্পেনের বাসিলিও খুব ভাল কিপার। ওদের না খেলিয়ে কোচ আমার উপর ভরসা করেছেন, সেটাই ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। খারাপ খেলা মানেই তো ছিটকে যেতে হবে। বিদেশিদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে সব ম্যাচে নিজের সেরাটা দিতে হবে।” তবে তাঁর কোচ আন্তোনিও হাবাস কিন্তু রবিবার প্রথম গোল খাওয়ার পরও শুভাশিসের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলে দিয়েছেন, “গোল খেলেও ওর পারফরম্যান্সে আমি খুশি।”
ইস্টবেঙ্গলের অর্ণবের মতো বাগানের বাতিল ডেনসন দেবদাসও নতুন লিগে ইতিমধ্যেই দাগ কেটেছেন। “ডেনসন দারুণ খেলছে,” বলেছেন চেন্নাইয়ানের কোচ। অথচ কলকাতা লিগে প্রচুর গোল করা ইস্টবেঙ্গলের দুই নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার এখন পর্যন্ত সে ভাবে কিছুই করে উঠতে পারেননি। জিকোর গোয়া টিমে র্যান্টি মার্টিন্স তো সুযোগই পাচ্ছেন না সে ভাবে। আর ডুডু ওমাগবেমি সুযোগ পেলেও ব্যর্থ। তাঁর দলকে পাঁচ গোল হজম করতে হয়েছে। আবার পাভেল ইলিয়াস, বোরহা ফার্নান্ডেজদের মতো বিদেশি মিডিওদের দুরন্ত ফর্মের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নজর কেড়েছেন দিল্লির তুলুঙ্গা, মুম্বইয়ের লালরিন্দিকা।
আইএসএল এখনও অর্ধেক হয়নি। কোনও টিম দু’টো, কেউ তিনটে ম্যাচ খেলেছে। পরের দিকে হয়তো আরও কিছু নামও উঠে আসবে। এমনিতেই বিদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে খেলে এখানকার ফুটবলের গতি বেড়েছে। পাশাপাশি বলবন্ত, সুভাষ, অর্ণব, ডেনসনরা তারকা বিদেশিদের মধ্যে নিজেদের আরও বেশি করে মেলে ধরতে পারলে কিন্তু লাভবান হবে ভারতীয় ফুটবলই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy