Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
আজ আই লিগের ভাগ্য গড়ার ডার্বি

বিশ্বজিৎ চাইছেন চমক দিতে, সঞ্জয়ের দাবি সব জানা আছে

জোড়া খোকা ইলিশ উপহার দিয়ে র‌্যান্টি মার্টিন্সের পায়ে সষ্টাঙ্গে প্রণাম করে ফেললেন লোকটি। তার পর দাবি, ‘‘র‌্যান্টিদা কাল গোল চাই। জিতলেই বড় ইলিশ দেব। প্রমিস।’’ এগারো ম্যাচে এগারো গোল করা নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার কী বুঝলেন কে জানে। তবে সাদা দাঁতে হাসি ঝলকে উঠল।

যুদ্ধের আগে ইস্ট শিবির।ডংকে ইলিশ উপহার ভক্তের। ছবি: সন্দীপ পাল

যুদ্ধের আগে ইস্ট শিবির।ডংকে ইলিশ উপহার ভক্তের। ছবি: সন্দীপ পাল

রতন চক্রবর্তী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫১
Share: Save:

জোড়া খোকা ইলিশ উপহার দিয়ে র‌্যান্টি মার্টিন্সের পায়ে সষ্টাঙ্গে প্রণাম করে ফেললেন লোকটি। তার পর দাবি, ‘‘র‌্যান্টিদা কাল গোল চাই। জিতলেই বড় ইলিশ দেব। প্রমিস।’’ এগারো ম্যাচে এগারো গোল করা নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার কী বুঝলেন কে জানে। তবে সাদা দাঁতে হাসি ঝলকে উঠল।

ডুং ডং আর বার্নার্ড মেন্ডিদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হল গাদার মালা। যেগুলো গলায় ঝুলিয়ে হেঁটে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন তাঁরা, অনেকটা কীর্তনীয়াদের মতো লাগছিল!

সেলফি তোলার ধাক্কায় মেহতাব হোসেন, বেলো রজ্জাকদের প্রাণান্তকর অবস্থা। পুরো টিম ঘিরে কয়েকশো লোকের স্লোগান উঠল, ‘‘কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি বাগান দেবে হামাগুড়ি।’’

ডার্বির চব্বিশ ঘণ্টা আগেই সীমা সুরক্ষাবলের মাঠে যখন লাল-হলুদ সমর্থকরা আগাম জয়ের উৎসবে মত্ত, তখন দু’কিলোমিটারে মধ্যে বিএসএফ মাঠে চলছে সঞ্জয় সেনের টিমের সেট পিস অনুশীলন। কাতসুমিদের ফ্রিকিক আরও নিখুঁত করতে বাগান কোচের সঙ্গে নেমে পড়েছেন স্বয়ং ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। আঠাশ বছর আগে শিলিগুড়িতে একমাত্র সরকারি ডার্বিতে যাঁর গোল ছিল সবুজ-মেরুন জার্সিতে। চিমার পাল্টা গোল সে দিন লাল-হলুদকে বাঁচিয়েছিল এয়ারলাইন্স কাপে। এত বছর পরেও যে ম্যাচ না জেতার আফসোস আছে সত্যর।

শনিবারের ডার্বি কি সে দিকেই গড়াবে? বলা কঠিন। তবে দুই প্রধানের দুই বঙ্গসন্তান কোচের সঙ্গে একান্তে কথা বলে মনে হল, দাদাগিরির এপিসোডে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের পছন্দের উত্তর বাছতে দিলে, বিশ্বজিৎ এবং সঞ্জয় দু’জনেই বাছতেন ড্র।

‘‘আমার ড্র হলেও কোনও সমস্যা নেই। আমরা তো আই লিগ টেবলে সবার উপরেই থেকে যাব। তবে আমি দুশো পার্সেন্টেজ নিশ্চিত ছেলেরা ম্যাচটা জিতবে,’’ বলার সময় মোহনবাগান কোচ সঞ্জয়ের গলায় লিগ অঙ্কের ভাবনা ঠিকরে বেরোয়।

যার কিছুক্ষণ আগে সেবক রোডের টিম হোটেলে বসে ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘জীবনে এই ম্যাচটা অনেক বার খেলেছি। ডার্বিতে কোনও অঙ্কই মেলে না। আমাদের জেতা ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। তবে ড্র হলেও আমরা চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় থেকে ছিটকে যাব না কিন্তু।’’

বিশ্বজিতের সুবিধে তিনি নব্বই মিনিট মাঠেই থাকবেন। খেলা চলাকালীন নিজের অঙ্ক প্রতি সেকেন্ডে বদলানোর সুযোগ পাবেন নিজেই। সঞ্জয়ের সেই সুযোগ নেই। সাসপেনশন অর্ধেক কমলেও এই ম্যাচেও তাঁকে থাকতে হবে মাঠের বাইরেই। হাফটাইমে ঢুকতে পারবেন না নিজের দলের ড্রেসিংরুমে। বাগান কোচের জন্য স্টেডিয়ামেরই একটা আলাদা ঘরে টিভিতে খেলা দেখার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে খবর।

গ্যালারিতে বসার বদলে সঞ্জয় টিভিতেই খেলা দেখতে চাইছেন। সেখান থেকে মোবাইলে সহকারী কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীকে খবর পাঠাতে সময় বেশি লাগবে জানা থাকা সত্ত্বেও। ডার্বি বেশির ভাগ সময় এতটাই উত্তেজক হয় যে, প্রায় প্রতি মিনিটে বদলে যায় রং। তাতে কোচের ভূমিকা থাকে সবচেয়ে বেশি। কারণ মাঠে যত বড় তারকা ফুটবলারই খেলুন, ম্যাচের রিমোট তো থাকে সাইডলাইনে তাঁর কোচের হতেই। সেক্ষেত্রে শনিবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে সামান্য হলেও অ্যাডভান্টেজ ইস্টবেঙ্গল। তার উপর সনি নর্ডির-ই শনিবার খেলা-না খেলা নিয়ে আজ দিনভর বাগান হোটেলে নাটক চলল। গভীর রাতে আবার এখানে শোনা যাচ্ছে, বাগান কর্তারা ফেডারেশনের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন, ডার্বিতে সঞ্জয়কে বেঞ্চে বসতে দেওয়ার জন্য। যদিও বাগান কোচ বললেন, তাঁর এমন কিছু জানা নেই। কিছু হলে সেটা ক্লাবের তরফে করা হচ্ছে। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে এমন কোনও আবেদন জানাননি।

তার পরেও অবশ্য উপচে পড়া গ্যালারির সামনে শনিবার বিকেলে ম্যাচ জেতার জন্য দুই কোচের কাছেই রয়েছে অনেক অস্ত্র। সেটা কোথায় কী ভাবে প্রয়োগ করবেন তাঁরা, তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। তবে প্রাথমিক যা স্ট্র্যাটেজি তৈরি হচ্ছে শিলিগুড়ির দুই প্রান্তের দুই হোটেলের ওয়ার-রুমে, তাতে বাগানের চেয়ে বেঙ্গলের ট্যাকটিক্সে হয়তো চমক বেশি। ইস্টবেঙ্গল কোচ চাইছেন, এক) মেন্ডিকে স্ট্রাইকারে র‌্যান্টির সঙ্গে জুড়ে দিতে। যাতে দুই বিদেশির ঝাপটায় বাগান রক্ষণে চাপ বাড়ে। দুই) ডংকে উইংয়ে খেলিয়ে শুরুতেই ফ্রিকিকের সুবিধা নিতে। তিন) শেহনাজকে দিয়ে বিপক্ষের মাঝমাঠ ঘেঁটে দিতে।

উল্টো দিকে বাগান কোচের একটাই অঙ্ক— অপেক্ষায় থাকো আর মোক্ষম সময়ে পাল্টা আক্রমণে গোল তুলে নাও। ‘‘আমরা জানি মেন্ডিকে দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কী করানোর চেষ্টা হবে। আমাদের ডিফেন্স তৈরি। হঠাৎ চমকে আমি বিশ্বাসী নই,’’ সোজাসাপ্টা বললেন সঞ্জয়। তার পর যোগ করলেন, ‘‘আমরা ঠিকঠাক টিম গেম খেললে কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। দেখে নেবেন কাল।’’

টিম গেমে বরাবরই অগাধ আস্থা চেতলাবাসী ফুটবল কোচের। তার একটু দূরে কালীঘাটের বিশ্বজিতের আবার প্রবল আস্থা ঈশ্বরে। ‘‘ঈশ্বর এ বছর আমায় শুরু থেকে নানা সমস্যায় ফেলেছেন। প্রথম ডার্বিতে এক জন কম বিদেশি নিয়ে খেলেছি। জেতা ম্যাচ হেরেছি। এ বার নিশ্চয়ই তিনি আর আমাকে বিমুখ করবেন না। আমার দিকে তাকাবেন,’’ বলছিলেন তিনি।

ঈশ্বর ইস্টবেঙ্গল কোচের দিকে কতটা তাকালেন সেটা জানতে শনিবার সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে লাল-হলুদের সমর্থনে যে বিশাল শব্দব্রহ্ম স্টেডিয়ামে আছড়ে পড়বে সেটা নিশ্চিত। শিলিগুড়ি বরাবর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক অধ্যুষিত শহর। যাতে এ বার ভাগ বসাতে মরিয়া মোহনবাগানও। এ দিন বিকেল থেকে সবুজ-মেরুন সমর্থক ভর্তি বাস আসতে শুরু করেছে কলকাতা থেকে। কোচ সঞ্জয়ের মুখোশ পরে গ্যালারিতে বসা ছাড়াও বড়-বড় পতাকা নিয়ে মাঠে যাবেন তাঁরা। আর সব দেখেশুনে চাপ বাড়ছে স্থানীয় প্রশাসনের উপর।

কিন্তু মাঠে কে কাকে টেক্কা দেবে শেষ পর্যন্ত?

র‌্যান্টি বলে দিয়েছেন, ‘‘যতই গোল করি, ডার্বির গোল সব সময় স্পেশ্যাল।’’ যা শুনে হাসছেন কর্নেল গ্লেন। ‘‘শুক্রবার তো স্পেশ্যাল দিনই ছিল। অল ফুলস ডে!’’ রসিকতার ছলে কী বলতে চাইলেন বাগানের ত্রিনিদাদ টোবাগো বিশ্বকাপার বোঝা যায়নি। হয়তো ঘুরিয়ে র‌্যান্টির দিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাখলেন।

পেশাদারদের মজার মধ্যেও তো লুকিয়ে থাকে প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিষে ফেলার বারুদ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE