Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নেইমারকে রাগানোই ছিল ওকে থামানোর গেমপ্ল্যান

বিপক্ষকে তোয়াক্কা না করা। চোখ ধাঁধানো ফুটবল। গোলের পর গোল। ব্রাজিল মানে তো এত দিন এগুলোই জানতাম। বৃহস্পতিবার ভোরের পরে সেই ভুলটাও ভাঙল।

প্ররোচনায় পা এবং লাল-কার্ডে ক্ষতবিক্ষত।

প্ররোচনায় পা এবং লাল-কার্ডে ক্ষতবিক্ষত।

বিশ্বজিত্ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

কলম্বিয়া ১ (মুরিয়ো)

ব্রাজিল ০

বিপক্ষকে তোয়াক্কা না করা। চোখ ধাঁধানো ফুটবল। গোলের পর গোল।

ব্রাজিল মানে তো এত দিন এগুলোই জানতাম। বৃহস্পতিবার ভোরের পরে সেই ভুলটাও ভাঙল।

সত্যি বলতে কী, ব্রাজিলকে কোনও দিন এত খারাপ খেলতে দেখিনি। অনেক হার দেখেছি। তবে ব্রাজিলকে এত অসহায় কোনও দিন দেখিনি। বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ১-৭ বিধ্বস্ত হওয়ার সেই ম্যাচকে মাথায় রেখেও বলব, কলম্বিয়ার কাছে এই হারটা আরও লজ্জার। জার্মানির বিরুদ্ধে অনেক বার ওদের গোলের মুখ খোলার চেষ্টা করেছিল ব্রাজিল। এ দিন তো কোনও চেষ্টাই দেখলাম না। ব্রাজিলের হলুদ জার্সি পরে নামা মানে ফুটবল ইতিহাসে নিজের নাম লেখানো। কারা কারা এই জার্সি পরে খেলেছে আর কারা এখন খেলছে! ভাবলে খারাপই লাগে। এই দলের নব্বই শতাংশ ফুটবলার ব্রাজিলের হয়ে খেলার যোগ্য কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। ফির্মিনো, তারদেলি, উইলিয়ান এদের কেন দলে রাখা হয়েছে সেটা বুঝতেই পারলাম না।

কলম্বিয়ার গেমপ্ল্যান খুব পরিষ্কার ছিল— নেইমারকে আটকাও, ব্রাজিলকে আটকাও। কলম্বিয়ানদের খেলা দেখে বোঝা গিয়েছে, নেইমারের প্রতিটা মুভমেন্ট ওরা কতটা কাটাছেঁড়া করেছে। শুরু থেকেই নেইমারের বিরুদ্ধে ‘গা জোয়ারি ছকে’ চলে যায়। সাঞ্চেজ-জাপাতা-মুরিয়োরা শুরু থেকেই ওর মাথা গরম করার চেষ্টায় ছিল। নেইমার বল পেলেই ওকে এক কোণে চেপে দেওয়া হচ্ছিল। নেইমার সাধারণত বাঁ দিক থেকে কেটে ঢুকতে ভালবাসে। সেখানে ওর অপেক্ষায় ছিল জুনিগা। নামটা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। যে ছেলেটার ট্যাকলে নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল।

অনেকেই আমার কাছে জানতে চাইছিলেন, কলম্বিয়ার সঙ্গে সেই ম্যাচের স্মৃতিটা কি তাড়া করে বেড়িয়েছে নেইমারকে? আমি মনে করি না, সেই আঘাতের কথা ভেবে ও নিজেকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে খেলার চেষ্টা করছিল। পেশাদার ফুটবলাররা চোট পেয়েই থাকে। তা বলে এই নয় যে ওরা মাঠে নামলে সেটা মাথায় রাখে।

অনেকে আবার বলে থাকে, ক্লাবের কথা ভেবে নাকি এই সব ফুটবলার নিজের সেরাটা দিতে চায় না। মাঠে সেটা নাকি বোঝা যায়। আমার মনে হয় আসল শত্রু হচ্ছে ক্লান্তি। যে জন্য ফুটবলারদের একটু গা ছাড়া দেখায় এই ধরনের টুর্নামেন্টে। যখন কোনও ফুটবলার ক্লাব মরসুমে প্রায় পঞ্চাশের মতো ম্যাচ খেলে আসে, তার আর কী করে এনার্জি থাকবে দেশের হয়ে বড় টুর্নামেন্ট খেলার? আর নেইমারকে তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলার তিন দিনের মধ্যে জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিতে হয়। মাঠে নামার আগে কোথায় বা বিশ্রাম পেল, কোথায় বা বোঝাপড়া তৈরি করতে পারল দলের সঙ্গে?

কলম্বিয়া শুরু থেকেই নেইমারকে নড়াচড়া বিশেষ করতে দেয়নি। কড়া ট্যাকলও করেছে। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, নেইমার আস্তে আস্তে মাথা গরম করছে। সতীর্থদের সঙ্গে ওর কম্বিনেশনও হচ্ছিল না। আমি নিজে ফরোয়ার্ড ছিলাম। আর ফরোয়ার্ডে খেলতে গেলে মাথা সব সময় ঠান্ডা রাখতে হয়। আমার কোচেরা সব সময় বলতেন, ‘ডিফেন্ডাররা মাথা গরম করানোর চেষ্টা করবে। ফাঁদে পা দিও না।’ নেইমার সেই মানসিক ছকের ফাঁদেই পড়ে গেল। দানি আলভেজের বাড়ানো পাসে সহজ হেড মিস করল। বলটা রিবাউন্ডে আসার পরে হাত দিয়ে গোল করার চেষ্টাও করল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ভাল জায়গা থেকে কিছু করতে পারল না। ইনজুরি টাইমে লাল কার্ড দেখা সেই মাথা গরম করার ফল। কলম্বিয়া ফুটবলারদের প্ররোচনায় পা দেওয়ার কোনও দরকার ছিল না।

এই ব্রাজিল টিমটায় নেইমার ছাড়া গোল করার কোনও লোক নেই। ফির্মিনো ওয়ার্ম আপ ম্যাচগুলোয় গোল করছিল। আশা করেছিলাম ওর থেকে ভাল পারফরম্যান্স দেখব। ভাল পারফরম্যান্স তো অনেক দূরের কথা, পুরো ম্যাচে ও কী করল, এখনও বুঝতে পারছি না। উইলিয়ান ভাল উইংগার হলেও গোলের সামনে ফিনিশ নেই। তারদেলি পরে নেমে যা, রিজার্ভ বেঞ্চে বসেও তাই। এই জন্যই তো দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে নেইমার একটা সুযোগ তৈরি করলেও গোল করার লোক ছিল না। ব্রাজিল ফুটবলে এখন কোনও পজিটিভ স্ট্রাইকার তৈরিই হচ্ছে না। সেন্টার ফরোয়ার্ড বলতে যা বুঝি সেটা কোথায়। ২০০২ বিশ্বকাপে রোনাল্ডোকে দেখেছিলাম প্রতিটা ডিফেন্স একাই উড়িয়ে দিচ্ছে। এখন ব্রাজিলের সেই দিকটা পুরো অদৃশ্য।

ব্রাজিল ডিফেন্সটাও আক্রমণের মতোই খেলল। কোনও ঝাঁঝ ছিল না। থিয়াগো সিলভা-মিরান্ডা জুটি খুব সহজেই ফাইনাল ট্যাকলে চলে যাচ্ছিল। কলম্বিয়ার হুয়ান কুয়াদ্রাদো তো একা একাই প্রায় গোল করে দিচ্ছিল। প্রথমার্ধে কলম্বিয়ার গোলটাও বেশ ভাল ছিল। সেট পিস থেকে মুরিয়োর মারা শটটা গোলকিপারের পক্ষে আটকানো কঠিন ছিল।

বড় চেহারার ফুটবলারদের দলে থাকার সুবিধাটা কলম্বিয়া ভাল ভাবেই নিল। নেইমার, কুটিনহোরা তো ফিজিক্যাল ফুটবলে কলম্বিয়ার ধারে কাছে আসে না। ওদের সব ফুটবলারই খুব বড়সড়। মাঝমাঠে সাঞ্চেজ আর ভ্যালেন্সিয়া ক্রমাগত ব্রাজিল ফুটবলারদের প্রেস করে গেল। ব্রাজিলের কেউ বল পেলেই ওরা দু’তিন জন মিলে তাড়া করছিল। প্রতিটা ওয়ান-টু-ওয়ান পরিস্থিতিতে বড় চেহারার সুবিধা ওরা নিয়ে গিয়েছে। ফিজিক্যাল ফুটবলের সঙ্গে হামেস রদ্রিগেজের স্কিল চোখে পড়ল। এই কলম্বিয়া কিন্তু অনেক দূর যাবে বলেই মনে হয়।

ব্রাজিলের ভাগ্যে কী আছে? লাল কার্ড দেখায় অন্তত দু’ম্যাচে নেইমার নেই। নেইমার না থাকলে গোলটা কে করবে? সুযোগও বা কে তৈরি করবে?

ছবি: এএফপি।

আজ কোপায়

• মেক্সিকো বনাম ইকুয়েডর (রাত ২-৩০)

• শনিবার: চিলি বনাম বলিভিয়া (ভোর ৫-০০)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE