Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুই অধিনায়কের মানসিকতাই তফাত গড়ে দিল প্রথম দিন

একটা দল সিরিজে ১-০ এগিয়ে। আর একটা দল সমালোচনায় ছিন্নভিন্ন। বিশেষ করে তাদের অধিনায়ক। এই অবস্থায় শুরু হয়েছিল সাউদাম্পটনের টেস্ট। কিন্তু প্রথম দিনের শেষ মনে হচ্ছে, সিরিজে এগিয়ে থাকার যে মানসিক সুবিধাটা ভারত পাচ্ছিল, সেটা আপাতত ধোনিরা খুইয়েছে।

দুই মেজাজে দুই অধিনায়ক। রবিবার সাউদাম্পটনে। ছবি: রয়টার্স, এএফপি।

দুই মেজাজে দুই অধিনায়ক। রবিবার সাউদাম্পটনে। ছবি: রয়টার্স, এএফপি।

দীপ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

একটা দল সিরিজে ১-০ এগিয়ে। আর একটা দল সমালোচনায় ছিন্নভিন্ন। বিশেষ করে তাদের অধিনায়ক। এই অবস্থায় শুরু হয়েছিল সাউদাম্পটনের টেস্ট। কিন্তু প্রথম দিনের শেষ মনে হচ্ছে, সিরিজে এগিয়ে থাকার যে মানসিক সুবিধাটা ভারত পাচ্ছিল, সেটা আপাতত ধোনিরা খুইয়েছে।

যার কারণ, দুই অধিনায়কের দু’রকম মানসিকতা।

অ্যালিস্টার কুক টস জয়ের পর যে সিদ্ধান্তটা নিল, সেটা অবশ্যই সাহসী। উল্টো দিকে, টেস্টের শুরু থেকেই গুটিয়ে রইল ধোনি। ওর দল দল বাছাই কিন্তু আমাকে বেশ নিরাশ করল। সিরিজে এগিয়ে থাকা দলের ক্যাপ্টেনই সাহসী সিদ্ধান্ত নেবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তা আর হল কই? প্রথম এগারো বাছা থেকে শুরু করেই ধোনি বুঝিয়ে দিল, এই টেস্টে ও দলকে ‘সেফ জোন’-এ রাখতে চাইছে।

গত টেস্টে যে পেসার ভারতকে ম্যাচ জিতিয়েছে, সেই ইশান্ত শর্মার চোট। সেখানে না হয় ধোনির কিছু করার নেই। হাতে থাকা বাকিদের মধ্যে একজন ফর্মে নেই। আর একজনের জীবনের প্রথম টেস্ট। ভরসা করা যাচ্ছে মাত্র একজন পেসারের উপর। এর সঙ্গে থাকছে জাডেজার বাঁ হাতি স্পিন।

বোলিং বিভাগের যখন এই অবস্থা, সেখানে পঞ্চম বোলার না নেওয়ার যুক্তিটা কোনও ক্রিকেটীয় বিদ্যে দিয়ে বুঝতে পারলাম না। টেস্ট জিততে হলে যে কুড়িটা উইকেট নিতে হবে, এই কথা মাথায় রেখে দলে একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান না নিলেই বোধহয় ভাল করত ধোনি। জাডেজা, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামিরাও যেখানে ভাল রান করে দিচ্ছে লোয়ার অর্ডারে, সেখানে রোহিত শর্মার প্রয়োজন কী? এই অবস্থায় পাঁচ বোলারে না খেললে আর কবে খেলবে ভারত? উল্টোদিকে যেখানে পাঁচজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, সেখানে অশ্বিন ড্রেসিং রুমে বসে থাকবে কেন? তা ছাড়া ব্যাটিংটাও তো খারাপ করে না। টেস্টে একটা সেঞ্চুরিও আছে ওর।

ও দিকে ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেনকে দেখুন। সারা দেশের মিডিয়া ওকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। নেতৃত্ব প্রায় যেতে বসেছে। নিজের ফর্ম তো পড়তির দিকেই, দলও সুবিধাজনক জায়গায় নেই। এই অবস্থায় টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামার সিদ্ধান্ত নিল কুক! উইকেটে হাল্কা ঘাস রয়েছে। ওকে ওপেন করতে হবে, নতুন বল সামলাতে হবে। ভুবনেশ্বর, শামির বিষাক্ত সুইং যে কোনও সময় ওকে তুলে নিতে পারত। কিন্তু এ সব না ভেবে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পড়াটা যথেষ্ট সাহসী একটা সিদ্ধান্ত। তাও আবার লর্ডসের মত নন স্ট্রাইকার এন্ডে থাকল না, একেবারে প্রথম বলটা খেলল। এতেই কুকের ইতিবাচক মানসিকতাটা ধরা পড়ছে। ওর ব্যাটিং দেখে মনে হল, গত এক সপ্তাহে ও শুধু নিজের টেকনিকে উন্নতি ঘটায়নি, মানসিকভাবে নিজেকে অনেক ভাল জায়গায় এনে ফেলেছে। আর ব্যালান্স তো বরাবরের মতোই ওর ভরসার পাত্র হয়ে উঠল।

দুই ক্যাপ্টেনের এই মানসিকতাই না ম্যাচটায় সবচেয়ে বড় তফাত গড়ে দেয়। সিরিজে এগিয়ে বলে ভারত অধিনায়ক যদি এই টেস্টে রক্ষণাত্মক মনোভাব দেখায়, তা হলে ধোনির এটাও মনে রাখতে হবে, এ ভাবে কিন্তু ইংল্যান্ডকে সিরিজে ফিরে আসার একটা সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। কুক নিজেই তো ৯৫ করে নিজেকে ফর্মে ফিরিয়ে আনল। যদিও সে জন্য স্লিপ ফিল্ডার জাডেজাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ইংল্যান্ড অধিনায়ককে। ১৫ রানে সহজ ক্যাচ ফেলার জন্য। তবে তাই বলে কুকের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

লর্ডসের মতো বোলারদের পক্ষে সুবিধাজনক নয় এই উইকেট। জানি না ধোনি উইকেটটা ঠিকমতো পড়তে পেরেছে কি না। লর্ডসের উইকেটের মতো মুভমেন্ট এই উইকেটে নেই। তাতেও বোলাররা খারাপ বল করেনি। পঙ্কজ সিংহ তো প্রথম টেস্ট হিসেবে যথেষ্ট ভাল। প্রচুর চেষ্টা করেছে ছেলেটা। ক্যাচটা না পড়লে আর বেলের এলবিডব্লু-র অ্যাপিলে আম্পায়ার রড টাকার সাড়া দিলে ছবিটা অন্য রকম হত। তখন কিন্তু পঙ্কজ আরও ভয়ঙ্কর হত। তবে আমি নিশ্চিত, অশ্বিন থাকলে ভারতের আক্রমণের ধার আরও বাড়ত। কুড়িটা উইকেট নেওয়ার জন্য যা অবশ্যই দরকার।

স্কোর: ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস): কুক ক ধোনি বো জাডেজা ৯৫, রবসন ক জাডেজা বো শামি ২৬, ব্যালান্স ব্যাটিং ১০৪, বেল ব্যাটিং ১৬, অতিরিক্ত ৬, মোট ২৪৭-২। পতন ৫৫, ২১৩। বোলিং: ভুবনেশ্বর ২২-৭-৫৮-০, শামি ১৮-৩-৬২-১, পঙ্কজ ২০-৩-৬২-০, রোহিত ৬-০-২১-০, জাডেজা ২২-৬-৩৪-১, ধবন ২-০-৪-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE